শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

জাপানের রাজনীতিতে বাংলাদেশির চমক

শনিবারের সকাল ডেস্ক

জাপানের রাজনীতিতে বাংলাদেশির চমক
কাজী মাহফুজুল হক আক্ষেপ করে বলেন, ‘হেনরি ওর রাজনৈতিক গল্প শোনায় আমাকে, আমি মনে মনে কাঁদি, আমরা বাংলাদেশকে জাপান বানাতে চাই, জাপানিদের অর্থ সাহায্য নিই, কিন্তু সভ্যতা ও শিক্ষা নিই না। অথচ সেটি নেওয়া উচিত ছিল সবার আগে।’

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জাপানি নাগরিক কাজী হেনরি নাকানো। বাবা কাজী মাহফুজুল হক লালের বাড়ি সাতক্ষীরায়। তিনি জাপানে প্রবাসী হয়েছেন বহু বছর আগে। হেনরির মা একজন জাপানি নারী। ছোটবেলা থেকেই হেনরি স্বপ্ন দেখেন একদিন জাপানের প্রধানমন্ত্রী হবেন। হেনরির মা জানান, ‘হেনরি স্কুল জীবন থেকেই জনসেবামূলক কাজ ভালোবাসত।’

হেনরি ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাপান আর্মিতে সামরিক প্রশিক্ষণ শেষ করে ২০১৬ সালে টোকিও পাওয়ার ইলেকট্রিক কোম্পানিতে যোগদান করেন। আওয়ামা এবং মেইজি ভার্সিটি থেকে কৃষি ও ম্যানেজমেন্ট নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন করে আওয়ামা ভার্সিটি থেকে এমবিএ করেন হেনরি।

এরপর চাকরিজীবী ইউনিয়নের নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে জাপানের মূলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি। ২০২৩ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত জাপানের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতে টোকিও মেট্রোপলিসের এদোগাওয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন হেনরি নাকানো। এখান থেকেই তার রাজনৈতিক জীবন শুরু। পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য তিনি এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

টোকিওর মূল শহরে বয়ে যাওয়া এদো নদীর নামে এদোগাওয়া ওয়ার্ডটি সাতটি অঞ্চলের সমন্বয়। ওয়ার্ডটির জনসংখ্যা প্রায় ৭ লাখ যেখানে ৯৯.৫ শতাংশ জাপানি আর ০.৫ শতাংশ ইমিগ্র্যান্ট ভারতের। বাংলাদেশি রয়েছেন অল্প সংখ্যক।

ওয়ার্ডটির অফিশিয়াল ফুল রোডেন্ড্রন হলেও চেরি বাগান আর অবারিত সবুজ পার্কের জন্য ট্যুরিস্টদের প্রিয় এলাকা এটি। যারা বনসাই গাছ ভালোবাসেন তারা এখানে বনসাই মিউজিয়াম দেখতে যান। অনেকে নদীর পাড়ের সবুজ ঘাসের ওপর বসে মেঘ আর বহতা পরিষ্কার পানি দেখেন চুপচাপ ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

কাজী হেনরি নাকানোর পিতা কাজী মাহফুজুল হক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাপান শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) এম রাশেদ চৌধুরী যখন সাময়িকভাবে জাপানের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ছিলেন, তখন ২৬ মার্চের দিনে তিনি দূতাবাসে পতাকা উত্তোলন করতে গেলে আমার নেতৃত্বে শ’ দুয়েক প্রবাসী তাকে খুনি খুনি বলে চিৎকার করে প্রতিবাদ জানাই। পরে আমরা কয়েকজন মিলে আওয়ামী লীগ জাপান শাখা চালু করি। বিরোধী দলে এবং সরকারে থাকা অবস্থায় আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনবার এদোগাওয়া টাউন হলসহ কয়েক জায়গায় সংবর্ধনা দিয়েছি।

তিনি বলেন, ‘আমার কাছে দেশের প্রতি, দলের প্রতি ভালোবাসার সব গল্প শুনে সন্তান তার জন্মস্থান জাপানকে সেবা করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে ছোটবেলা থেকে। আমি চাইতাম সে অন্য সবার মতো বড় চাকুরে হোক, হয়েও ছিল। কিন্তু আমার বাংলার রক্তের উত্তরাধিকার তাকে এত কম বয়সে জাপানের মূলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করাল।

কাজী মাহফুজুল হক আক্ষেপ করে বলেন, ‘হেনরি ওর রাজনৈতিক গল্প শোনায় আমাকে, আমি মনে মনে কাঁদি, আমরা বাংলাদেশকে জাপান বানাতে চাই, জাপানিদের অর্থ সাহায্য নিই, কিন্তু সভ্যতা ও শিক্ষা নিই না। অথচ সেটি নেওয়া উচিত ছিল সবার আগে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একমাত্র একটি একক ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশকে আধুনিক জ্ঞানী ও সভ্য জাতি হিসেবে গড়ে তুলবে। এটি করতে হলে সরকারকে হতে হবে নিরপেক্ষ ও জনবান্ধব। যারা শুধু বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা বলবে। অতীত নিয়ে কোনো টানাটানি করবে না। অতীত শুধু বিচ্ছিন্নতা ও বিদ্বেষ তৈরি করে। জাতিকে সব উন্নত দেশের মতো ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমার ছেলে জাপানি তরুণদের ঐক্যের গল্প বলে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে।’

 

সর্বশেষ খবর