শনিবার, ২০ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

হাঁটছে রোবট গল্পতরু

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

হাঁটছে রোবট গল্পতরু

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের অদম্য মেধাবী আহসান হাবিব (২৪)। ‘গল্পতরু’ নামে একটি রোবট তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। গল্পতরু রোবটটি হাঁটতে, কথা বলতে, খাবার পরিবেশন, ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন এবং বৃদ্ধদের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করতে পারবে। তার তৈরি এ রোবট গল্পতরুকে দেখতে স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী তার বাড়িতে ভিড় জমান। রোবটের বুদ্ধিদীপ্ত ক্ষমতা দেখে বিস্মিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। প্রশ্ন করলেই মিলছে উত্তর। সব প্রশ্নের নির্ভুল উত্তর দিচ্ছে রোবট গল্পতরু। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আহসান হাবিব তার তৈরি রোবট স্থানীয় মানিক বাজারে নিয়ে এসে প্রকাশ্যে সবার সামনে হাঁটাচ্ছেন। এটি দেখতে শত শত উৎসুক মানুষ ভিড় করছেন। গল্পতরু একের পর এক বাংলা ও ইংরেজি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। সালাম দিলে জবাব দিচ্ছে। রোবট গল্পতরু নিয়ে পরিচয় ও জন্মস্থানের কথা বলছে। চলাফেরাও করছে রোবটটি। ব্যাটারি ও অ্যাপসের সাহায্যে চলে রোবটটি। আহসান হাবিব লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার ইউনিয়নের সুন্দ্রাহবি গ্রামের মৃত মজু মিয়া ও খালেদা বেগমের ছেলে। পরিবারে দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আহসান হাবিব সবার ছোট। অভাবের সংসার। নিজেদের জায়গাজমি বলতে আছে শুধু ৩ শতক জমির ওপর বসতভিটা। বড় ভাই খাইরুল ইসলাম পেশায় একজন শ্রমিক। ২০১২ সালে এক দুর্ঘটনায় মারা যান হাবিবের বাবা মজুমিয়া। তখন থেকে শুরু হয় সংসারের অভাব অনটন। বড় ভাইয়ের দিনমজুরির টাকা ও হাবিবের টিউশনি দিয়ে শুরু হয় পড়াশোনা ও রোবট তৈরির কাজ। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া আহসান হাবিব ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন নতুন কিছু আবিষ্কার করার।

২০২২ সালে চিট্টি নামে একটি রোবট তৈরি করে সাড়া ফেলেন হাবিব। এরপর তৈরি করেন সুফিয়া, পারিসা নামে আরও কয়েকটি রোবট। রোবট তৈরিতে পেয়েছেন বিভিন্ন স্থানে প্রথম পুরস্কারও। এবার তিনি তৈরি করেছেন মানুষের মতো হাঁটতে পারে এমন একটি রোবট। নাম দিয়েছেন গল্পতরু।

২০২২ সালে চিট্টি নামে একটি রোবট তৈরি করে সাড়া ফেলেন হাবিব। এরপর তৈরি করেন সুফিয়া, পারিসা নামে আরও কয়েকটি রোবট। রোবট তৈরিতে পেয়েছেন বিভিন্ন স্থানে প্রথম পুরস্কারও।

আহসান হাবিবের এই প্রতিভা দেখে আইসিটি মন্ত্রণালয় ঢাকা ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার জন্য শতভাগ বৃত্তির ব্যবস্থা করে। বর্তমানে হাবিব ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।

স্থানীয় ফজর আলী বলেন, ছোট থেকে মেধাবী হাবিব। এর আগে একটি রোবট তৈরি করেছিল আমরা তার বাড়িতে গিয়ে দেখে এসেছি। এবার রোবট তৈরি করে আমাদের বাজারে নিয়ে এসেছে দেখানোর জন্য। আমরা সবাই খুশি। হাবিবের তৈরি রোবট কথা বলতে পারে, প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে এবং হাঁটতে পারে। আহসান হাবিব বলেন, গল্পতরু বাংলাদেশ প্রথম রোবট এটি মানুষের মতো হাঁটতে পারে এবং কথা বলতে পারে। হাঁটা রোবট দেশে নেই বললেই চলে। এ রোবট মানুষকে সহযোগিতাসহ একাধিক কাজ করতে পারবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের কাছে এই রোবটটিকে আমি তুলে ধরতে চাই। তিনি আরও বলেন, ‘এ কাজে আমার মা, বড় ভাই, বন্ধুরাও আমাকে সবসময় সহযোগিতা করেছে।’

হাবিবের মা খালেদা খাতুন বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে হাবিব বড় হয়েছে। তার বাবা মারা যাওয়ার পর তার বড় ভাই তাকে পড়াশোনা করিয়েছেন। হাবিব টিউশনি করা টাকা দিয়ে রোবট তৈরি করে। রোবট তৈরিতে অনেক ঋণ হয়েছে। আর্থিক সহায়তা পেলে ছেলে এগিয়ে যেতে পারবে। আপনাদের দোয়ায় হাবিব এখন ভালো কলেজে পড়াশোনা করছে।’

হাবিবের বড় ভাই খাইরুল ইসলাম বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি হাবিব অর্থ ব্যয় করে রোবট তৈরি করছে। তাকে আর্থিক সহায়তা করলে দেশকে আরও ভালো কিছু উপহার দিতে পারবে। তুষভাণ্ডার ইউনিয়নের সুন্দ্রাহবি গ্রামের ইউপি সদস্য এনাইদুল হক পাতলা বলেন, হাবিব এর আগে কয়েকটি রোবট তৈরি করেছে তাও দেখেছি। গল্পতরু নামে আরেকটি রোবট তৈরি করছে তা হাঁটতে পারে এবং কথা বলতে পারে। এটি আমাদের গ্রামের গর্বের বিষয়। আমরা চাই হাবিব আরও এগিয়ে যাক। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জহির ইমাম বলেন, তরুণ উদ্যোক্তা আহসান হাবিবের রোবট তৈরির প্রতিভা আমরা জেনেছি। সেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্থানীয় টেকনোলজি ব্যবহার করে আউটপুট দেখিয়ে রোবট তৈরি করেছেন। তিনি ইতোমধ্যে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করলে আমরাও খুশি হব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর