রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থী, গবেষক এবং উদ্যোক্তা সাকার ফিশ থেকে বিড়াল এবং অন্যান্য পোষা প্রাণীর খাদ্য তৈরির গবেষণায় সাফল্য পেয়েছে। সম্প্রতি দ্বিতীয় ধাপের গবেষণার ফলাফল ‘প্রাণীখাদ্যের মিনিমাম ভায়াবল প্রোডাক্ট’ উন্মোচন করেছে গবেষক দল। গবেষণার অর্থ সহায়তা প্রদান করেছে ইয়াস ওয়ার্ল্ড। ইয়াস ওয়ার্ল্ড কর্তৃক আয়োজিত গ্লোবাল প্রজেক্ট কম্পিটিশন ২০২৪-এ সারা বিশ্বে চতুর্থ হয় এই তরুণ গবেষকরা। তাদের প্রজেক্টটির থিম ছিল ‘সাকার ফিশ থেকে প্রাণীখাদ্য তৈরি’। প্রায় বছরখানেক ধরে গবেষণার পর তারা সাকার ফিশ থেকে সুষম প্রাণীখাদ্য তৈরিতে সফল হয়, যার মাঠ পর্যায়ে ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে।
প্রজেক্টটির সদস্য শিক্ষার্থী নিয়ামুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সময়ে চলমান ‘ওয়েস্ট টু ওয়েলথ’ থিমের পাশাপাশি আমরা ‘প্রব্লেম টু ওয়েলথ’ থিম প্রতিষ্ঠিত করে দেখাতে চেয়েছি। আমরা দেখিয়েছি কীভাবে সাকার ফিশের মতো একটি সমস্যাকে সহজেই সম্পদে রূপান্তর করা যায়। আমরা খাদ্যটি প্রথমবার পরীক্ষামূলকভাবে ৭০ শতাংশ সাফল্য পাই। দ্বিতীয়বারও পরীক্ষামূলকভাবে আমরা আশানুরূপ ফলাফল পেয়েছি। এখন কমার্শিয়াল কোনো কোম্পানির মাধ্যমে এ খাদ্যটি বাজারজাত করতে পারলে আমাদের এই প্রচেষ্টা প্রাণীখাদ্যের আমদানির ওপর চাপ কমাবে বলে আশা রাখছি।’ এই প্রজেক্টটির তত্ত্বাবধানে ছিলেন ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সাইন্স অনুষদের প্রফেসর ড. কাজী আহসান হাবীব, ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের লেকচারার নাজমুস সাকিব অনিক, এনিমেল সাইন্স ও ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের প্রফেসর গোলাম মোহাম্মদ পাটোয়ারী এবং প্রফেসর আব্দুর রহমান রাফি। প্রজেক্টটি সুপারভাইজার প্রফেসর ড. কাজী আহসান হাবীব বলেন, সাকার ফিশ জলজ ইকোসিস্টেমের জন্য ক্ষতিকর। সাকার ফিশ এখন বুড়িগঙ্গা থেকে হাওর অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত, যা নিয়ন্ত্রণ করা অতীব প্রয়োজন এবং কষ্টসাধ্য। এর ধারাবাহিকতায় শেকৃবিতে গবেষণার চেষ্টা করছি, কীভাবে সাকার ফিশ থেকে পোলট্রি, বিড়াল, কুকুরসহ অন্যান্য পোষা প্রাণীর খাদ্য তৈরি করা যায়। সাকার ফিশ থেকে তৈরি খাদ্যটি আমরা বিড়ালের মাধ্যমে পরীক্ষা করেছি, যা আশানুরূপ ফলাফল দিয়েছে, খাদ্যটি বিড়াল খাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করছি খাদ্যটির আরও ফর্মুলেশনের মাধ্যমে বিড়াল ছাড়াও কুকুর, পোলট্রির জন্য উপযুক্ত খাদ্য তৈরি করা। কোনো কমার্শিয়াল কোম্পানির মাধ্যমে যদি আমরা এটা বাজারজাত করতে পারি তাহলে আমরা আপাতত সাকার ফিশ নিয়ন্ত্রণে একটি উপায় পাব। শুধু বিড়ালের নয়, বিভিন্ন অপ্রচলিত জৈববস্তু দিয়ে পোলট্রি, মাছ ও অন্যান্য প্রাণীখাদ্য তৈরির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে তরুণ এই গবেষকদের।