২৭ জানুয়ারি, ২০২৪ ১৬:৪৬

ক্ষুদে পিঁপড়ার ভয়ে শিকারের পদ্ধতি বদলে ফেলেছে সিংহ!

অনলাইন ডেস্ক

ক্ষুদে পিঁপড়ার ভয়ে শিকারের পদ্ধতি বদলে ফেলেছে সিংহ!

বিস্ময়কর জীব জগতে অনেক কিছুই ঘটে। যার হাঁকডাকে বন কাঁপে, সেই বনের রাজাই নাকি কাঁপছে পিঁপড়ার ভয়ে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই গবেষণার ফল থেকে জানা গেছে, এক ধরনের ক্ষুদে আক্রমণাত্মক পিঁপড়া কেনিয়ার সাভানাতে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে। তাদের কারণেই নাকি শিকারের পদ্ধতি বদলাতে বাধ্য হয়েছে বনের রাজা সিংহ। 

গবেষকরা দাবি করেছেন, মানুষ কিংবা পোকামাকড় যেভাবে সময়ের বিবর্তনে বাসস্থান বদলাতে বা পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে অভিযোজন করতে বাধ্য হয়। ঠিক সেভাবেই এই ক্ষুদে আক্রমণাত্মক পিঁপড়ার কারণে সাভানাতে সিংহ তার চিরাচরিত শিকার স্বভাব বদলাতে বাধ্য হয়েছে।

কেনিয়াতে সিংহের শিকারের অভ্যাসের উপর বড় মাথার পিঁপড়ার প্রভাব শনাক্তকারী গবেষক দলে ছিলেন ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ টড পামার। তিনি বলেছেন, ‌এই ক্ষুদে আক্রমণাত্মক পিঁপড়াগুলি সম্ভবত ১৫ বছর আগে দেখা গিয়েছিল এবং আমরা কেউই লক্ষ্য করিনি কারণ তারা মানুষসহ বড় প্রাণিগুলোর প্রতি আক্রমণাত্মক নয়। আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি যে এগুলো ধ্বংসাত্মকভাবে প্রাকৃতিক দৃশ্যের খুব সূক্ষ্ম উপায়ে পরিবর্তন ঘটাচ্ছে।

কেনিয়ার লাইকিপিয়ার সমতল ভূমির শিস-কাঁটাযুক্ত একাশিয়া গাছ থেকে পিপড়াগুলোর এই আক্রমণ শুরু হয়েছে। এই কাঁটাযুক্ত গাছগুলো স্থানীয় একাশিয়া পিঁপড়ার সাথে পারস্পরিকভাবে উপকারী সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। গাছগুলো পিঁপড়াদের জন্য আশ্রয় ও খাবার সরবরাহ করতো এবং এর বিনিময়ে পিঁপড়াগুলো ক্ষুধার্ত হাতিদের হুল ফুটিয়ে গাছ থেকে দূরে রাখতো।

কিন্তু বড় মাথার পিঁপড়াগুলো সব বদলে দিয়েছে। ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপে জন্মানো এই পিঁপড়া মানুষ এবং পণ্যের চলাচলের মাধ্যমে এই অঞ্চলে এসেছিল বলে মনে করা হচ্ছে। এই আক্রমণাত্মক পিঁপড়াগুলো প্রায় দুই দশক আগে এসেছিল এবং একাশিয়া পিঁপড়াগুলোকে হত্যা করতে শুরু করেছিল। ফলে শিস-কাঁটা গাছগুলো তৃণভোজীদের কাছে অরক্ষিত হয়ে পরেছিল। এভাবে গাছে সংখ্যা কমতে থাকে এবং তা সিংহের জন্য সমস্যা তৈরি করে কারণ সিংহগুলো শিকারের জন্য, বিশেষ করে জেব্রাকে অতর্কিতে আক্রমণ করার জন্য গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকতো।

সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, বড় মাথার পিঁপড়ার জন্য জেব্রা হত্যা তিনগুণ হ্রাস পেয়েছে। গবেষকরা বলছেন, এই গবেষণাটি বাস্তুতন্ত্র কত জটিল হতে পারে তার একটি সুন্দর চিত্রায়ণ। এটি এই ধারণা দেয় যে, একটি সামান্য সুতো ধরে টান দিলে পুরো সিস্টেমই প্রতিক্রিয়া দেখায়।

গবেষণার প্রধান লেখক ওয়াইমিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ডগলাস কামারু বলেছেন, পিঁপড়াদের আক্রমণে বড় বিড়াল শিকার এবং শিকারের কৌশল পরিবর্তন করেছে। সিংহগুলো এখন দলবদ্ধ হয়ে বড় মহিষ শিকার করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন এই পরিস্থিতিকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গত ২০০ বছরে আক্রমণাত্মক প্রজাতির এইরকম আক্রমণাত্মক হওয়ার ঘটনা অথবা বাসস্থান পরিবর্তন করার ঘটনার অন্তত এক তৃতীয়াংশ ১৯৭০ সাল থেকে ঘটেছে।

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর