শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

তীব্র গরমে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

জয়শ্রী ভাদুড়ী

তীব্র গরমে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

সিলেটে এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জ্ঞান হারানো অবস্থায় ইয়াকুব আলীকে নিয়ে এসেছেন স্ত্রী রাজিয়া খাতুন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকতেই নাক, কান, গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মণিলাল আইচ লিটু দেখতে পান ইয়াকুব আলীকে। রোগীর বিষয়ে এই চিকিৎসক বলেন, আমি হাসপাতালের গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় এ রোগী দেখতে পাই। তার স্ত্রী জানান, ইয়াকুব আলী প্রতিদিনের মতো মাঠে কাজ করতে গিয়েছিলেন। তীব্র গরমে কাজ করতে পারছিলেন না। তার মাথা ঝিমঝিম করা, বমি বমি ভাব ছিল, এরপর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। রোগীর অবস্থা দেখে বুঝতে পারি তিনি হিটস্ট্রোক করেছেন। পরবর্তীতে হাসপাতালে তাকে সার্বিক সেবা দেওয়া হয়। তীব্র গরমে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এ সময় তীব্র রোদে দীর্ঘ সময় থাকা যাবে না। পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি ও ফলের রস পান করার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।

সারা দেশে মৃদু থেকে তীব্র দাবদাহ বইছে। প্রচন্ড গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। গরমের তীব্রতায় হিটস্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, দাবদাহে শিশু, বয়স্ক ও বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীরা বেশি বিপাকে পড়ছেন। এ ছাড়া পানিবাহিত রোগ, অ্যালার্জি, চিকেন পক্সে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

আবহাওয়াবিদরা জানান, ইতোমধ্যে ঈশ্বরদীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকার তাপমাত্রা ১৯৬৫ সালে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২০১৪ সালে সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছিল। একটানা ২০ দিন দাবদাহে পুড়ছে চুয়াডাঙ্গাবাসী। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র গরমে শিশু, বয়স্ক ও খেটে খাওয়া মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে বাড়তি রোগীর চাপ না থাকলেও বহির্বিভাগে রোগীর চাপ বেশি। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক বলেন, ‘দাবদাহের কারণে অসুস্থ রোগীদের বিনা কারণে বাড়ির বাইরে না আসার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বেশি করে তরল খাবার বিশেষ করে রসালো ফল খেতে বলা হচ্ছে। প্রয়োজনে একাধিকবার গোসল করতে হবে।’ তিনি বলেন, সামনে ঈদ। এ সময় অনেকেই অসতর্কতায় অসুস্থ হতে পারেন। এ জন্য সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের বহির্বিভাগে গরমে অসুস্থ হয়ে রোগীরা আসছেন। তাদের অনেকে হাইপারটেনশন বা উচ্চরক্তচাপ, মাথাব্যথা, হিটস্ট্রোক, বমি, ডায়রিয়া, অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। গলাব্যথা, কাশি, সর্দি ও ঘুমের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার কথাও বলছেন অনেক রোগী।

ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ঈশিতা বিশ্বাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে মাঝারি থেকে তীব্রমাত্রার দাবদাহ চলছে। এই রোদে শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ বাইরে থাকলে হিটস্ট্রোক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে অনেক সময় মাথা ঝিমঝিম করে, ঘাম হতে পারে। অনেক সময় মানুষ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এতে বয়স্ক ও শিশুরা বেশি সমস্যায় পড়ে। তিনি আরও বলেন, ‘যারা রোজা থাকছেন তারা অবশ্যই ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত প্রচুর পানি ও তরল খাবার খাবেন। এ ছাড়া শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। পানিশূন্যতার কারণে শরীরে অনেক সমস্যা তৈরি হয়। তাই সচেতনভাবে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। রোদে বের হলে ছাতা ব্যবহার করতে হবে, ভারী পোশাক না পরে হালকা পোশাক পরতে হবে।’

গরমে ত্বকে ঘামাচি ও অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। শরীরে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি হয়ে ঘর্মগ্রন্থি ও নালি ফেটে ত্বকের নিচে ঘাম জমতে থাকে। এতে ঘামাচি হয়। আবার ঘাম ও ময়লা জমে ঘর্মনালির মুখ বন্ধ হয়ে ইনফেকশনও হচ্ছে। ব্যাকটেরিয়া ছাড়াও ঘাম ও ময়লার কারণে ছত্রাকজনিত রোগও এ সময় বেশি হয়। যারা সরাসরি সূর্যের আলোর নিচে বেশিক্ষণ থাকে, তাদের ত্বক পুড়ে যেতে পারে। এতে ত্বক লাল হয়ে যায়, জ্বালাপোড়া করে, চুলকায় ও ফোসকা পড়ে। মূলত সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিই এর জন্য দায়ী। এ ব্যাপারে ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রতিবছর এ সময় গরম পড়ে। আবহাওয়ার পরিবর্তন ও তীব্র গরমে নানা রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। তাই এ সময় পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। পানির সঙ্গে একটু গুড়, লবণ মিশিয়ে দুই-তিনবার পান করলে উপকার পাওয়া যাবে। শিশু ও বয়স্কদের স্বাস্থ্যগত দিক খেয়াল রাখতে হবে। শিশুদের পাতলা কাপড় পরাতে হবে। সরাসরি রোদ পড়ছে এমন জায়গা থেকে দূরে রাখতে হবে।’

হাসপাতালে বাড়ছে ছোঁয়াচে রোগ চিকেন পক্সে আক্রান্ত রোগী। ঋতু বদলে আবহাওয়া পরিবর্তনের এই সময়ে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে এ রোগ। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২৮০ জন, মারা গেছেন পাঁচজন। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর আক্রান্ত বেশি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, সামান্য জ্বর, মাথাব্যথা ও শরীর ম্যাজম্যাজ করলে চিকেন পক্স হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। সাধারণত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত এই রোগের প্রকোপ বেশি থাকে। তবে চলতি বছর আক্রান্তের হার তুলনামূলক বেশি। হাঁচি, কাশি, থুতুর মাধ্যমে, একসঙ্গে থাকা ও খাওয়ার মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। চিকেন পক্সের যে ফোসকায় জীবাণু থাকে, এটি ফেটে গিয়েও রোগ ছড়াতে পারে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর