বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

জনপ্রিয় হচ্ছে ক্যাশলেস লেনদেন

স্মার্ট ইকোনমির অংশ হিসেবে সর্বজনীন বাংলা কিউআর কোড প্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ক্যাশলেস এ লেনদেন আগের চেয়ে অনেক সহজ ও সাশ্রয়ী হওয়ায় দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রম আরও গতিশীল হয়েছে...

শাহেদ আলী ইরশাদ

জনপ্রিয় হচ্ছে ক্যাশলেস লেনদেন

২০৪১ সালে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নির্মাণের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে সরকার। তথ্যপ্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে অগ্রসরমান ভবিষ্যতের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রচার শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সমাজ, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সরকার গড়ে তোলাকে বোঝানো হয়েছে। স্মার্ট অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি ক্যাশলেস লেনদেন ব্যবস্থা চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ক্যাশলেস লেনদেন ব্যবস্থার উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। সর্বসাধারণকে কিউআর কোডে পেমেন্টসহ সব ডিজিটাল লেনদেনের সুফল সম্পর্কে জানাতে ‘সর্বজনীন পরিশোধ সেবায় নিশ্চিত হবে স্মার্ট বাংলাদেশ’ স্লোগানে মতিঝিল এলাকায় চা-দোকান, মুদি দোকান, হোটেল, মুচিসহ ভাসমান বিক্রেতাদের কিউআর কোড সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সেবা বিল পরিশোধ করতে পারছেন গ্রাহক। ক্যাশলেস বাংলাদেশ উদ্যোগের আওতায় শ্রমনির্ভর অতিক্ষুদ্র ভাসমান উদ্যোক্তা (চা-বিক্রেতা, ঝালমুড়ি বিক্রেতা, সবজি বিক্রেতা, মাছ বিক্রেতা), বিভিন্ন প্রান্তিক পেশায় (মুচি, নাপিত, হকার) নিয়োজিত সেবা প্রদানকারীদের বিল গ্রহণ পদ্ধতিকে ডিজিটাল ও প্রাতিষ্ঠানিক             করার উদ্দেশ্যে ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব খোলা হয়েছে। এ হিসাবের আওতাধীন ব্যবসায়ীরা তাঁদের লেনদেন সম্পন্ন করছেন। এ কার্যক্রম রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে সারা দেশে         ছড়িয়ে দেওয়া হাবে।

জানা গেছে, এতদিন যে ব্যাংকের কিউআর কোড সেই ব্যাংকে গ্রাহক পেমেন্ট করতে পারতেন। এখন এক ব্যাংকের কিউআর কোড থাকলে অন্য ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন করা যাচ্ছে। ধরুন চা-দোকানির ইসলামী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে। ওই দোকানদার ইসলামী ব্যাংকের কিউআর কোড দেবেন। এখন আপনি চা-বিস্কুট খেয়ে বিল দেবেন। কিন্তু আপনার অ্যাকাউন্ট বিকাশে। এখন কী করবেন? এর সমাধান দিচ্ছে সর্বজনীন বাংলা কিউআর কোড। এখান থেকে যে কোনো ব্যাংক ও এমএফএসের অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন করতে পারছেন। অর্থাৎ ক্রেতা বিকাশ অ্যাপ দিয়ে চা-দোকানির বিল ইসলামী ব্যাংকের বাংলা কিউআর কোডে সরাসরি পরিশোধ করতে পারছেন। মানে মোবাইলের আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ চালু থাকলেই যে কোনো ব্যাংক বা এমএমএস কোম্পানির কিউআর কোড স্ক্যান করলেই বিক্রেতার নাম, ছবি, অ্যাকাউন্ট নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্য ক্রেতার সামনে দৃশ্যমান হবে। এরপর নির্দিষ্ট স্থানে টাকার অঙ্ক বসিয়ে সেন্ড করে দিলেই বিক্রেতার হিসাবে টাকা চলে যাবে।

জানা গেছে, বাংলা কিউআর কোডে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এ বি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, পূবালী ব্যাংক ও ওয়ান ব্যাংক। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশ, এমক্যাশ, রকেট ও কার্ড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মাস্টারকার্ড, ভিসা ও অ্যামেক্স এ সেবায় যুক্ত হয়েছে।

মতিঝিলের ১ হাজার ২০০ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী যেমন ডাব, ঝালমুড়ি, ফল, সবজি, জামাকাপড়, জুতা বিক্রেতা এ প্রক্রিয়ার আওতায় এসেছেন। এ ছাড়া রয়েছেন ফেরিওয়ালা, মাছওয়ালা, গৃহস্থালি সরঞ্জাম, আনারস বিক্রেতা, শুঁটকির দোকান, চায়ের দোকান ও ফুটপাতের অন্য ক্ষুদ্র দোকানদারও। শুরুতে বিভিন্ন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে যোগাযোগ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। কাউকে এটিএম কার্ড, কারও মোবাইল ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিসের অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়েছে।

দেশে বিভিন্ন শপিং মলে পণ্য বেচাকেনায় মোবাইল ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, শিওর ক্যাশ ও নগদে কিউআর কোড পদ্ধতি ব্যবহার করে আসছে দীর্ঘদিন যাবৎ। কিন্তু এতদিন যাবৎ গুটিকয় ব্যাংক ও এমএফএসের নিজস্ব কিউআর থাকলেও সর্বজনীন কিউআর ছিল না। স্মার্ট ইকোনমির অংশ হিসেবে সর্বজনীন বাংলা কিউআর প্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ক্যাশলেস এ লেনদেন আগের চেয়ে অনেক সহজ ও সাশ্রয়ী  হওয়ায় দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রম আরও গতিশীল হয়েছে। নগদ অর্থ বহন ও পরিশোধ ঝুঁকিপূর্ণ, চেক পরিশোধ সময়সাপেক্ষ ও জটিল হওয়ায় সবাই ক্যাশলেস লেনদেনের দিকে ঝুঁকছে। কারণ এ পদ্ধতিতে সেই ঝামেলা নেই। নেই কোনো ভাঙতি ও খুচরা টাকার ঝামেলাও। থাকছে না ছেঁড়া-ফাটা বা জালনোটের আশঙ্কা। অন্যদিকে কার্ড ব্যবহারের জন্য ব্যাংক, এমএফএসগুলোকে ডিজিটাল পেমেন্ট অবকাঠামো বিনির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে বিপুল বিনিয়োগ করতে হয়।

বর্তমানে দেশে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। মোটা দাগে দেশজুড়ে এখন ২ লাখ ৭০ হাজার ছোটবড় প্রতিষ্ঠান ও দোকান বিকাশের মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করছে। নগদে আছে প্রায় ৩১ হাজার মার্চেন্ট। রকেটেরও আছে কয়েক হাজার মার্চেন্ট। তবে কিউআর কোড পদ্ধতি পৃথিবীতে এখন ডিজিটাল বা ক্যাশলেস লেনদেনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য নির্ঝঞ্ঝাট ও সাশ্রয়ী মাধ্যম। আমাদের দেশে এ পদ্ধতিতে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ‘বিকাশ’। গত ১০ বছরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল, হাটবাজার ও শহরগুলোয় বিকাশের এজেন্ট বিস্তৃত হয়েছে ব্যাপক।

অ্যাপসভিত্তিক কিউআর কোডের ক্যাশলেস লেনদেন খুব সাশ্রয়ী। হয়তো বিশ্বব্যাপী ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মতো পুরনো প্রাগৈতিহাসিক পেমেন্ট সিস্টেমের জায়গা দ্রুত দখল করে নিচ্ছে কিউআর কোড। বাংলাদেশেও স্বল্প সময়ের মধ্যেই নগদ টাকায় মূল্য পরিশোধের পুরনো প্রক্রিয়া পরিবর্তিত হয়ে ক্যাশলেস লেনদেনে রূপান্তর হবে। ধাবিত হবে স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে।

সর্বশেষ খবর