বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
সা ক্ষা ৎ কা র

ক্যাশলেস লেনদেনের পরিসর বাড়িয়েছে বিকাশ

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী মার্চ ২০২৩-এ গড়ে প্রতিদিন দেড় কোটি বারের বেশি লেনদেন হচ্ছে মোবাইল আর্থিক সেবা প্ল্যাটফর্মে। একজন গ্রাহক এখন তার প্রায় সব ধরনের দৈনন্দিন লেনদেন বিকাশের মতো আর্থিক সেবা দিয়েই করতে পারেন...

ক্যাশলেস লেনদেনের পরিসর বাড়িয়েছে বিকাশ

মেজর জেনারেল শেখ মো. মনিরুল ইসলাম (অব.), চিফ এক্সটার্নাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার, বিকাশ

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আর্থিক সেবা কতটা ডিজিটাল হয়েছে?

- শেখ মো. মনিরুল ইসলাম : বিকাশ শুরু থেকেই আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা বা সীমিত ব্যাংকিং          সেবায় থাকা বিশাল জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল         লেনদেনের আওতায় নিয়ে এসেছে বিকাশ। বিকাশের বর্তমান গ্রাহক প্রায় ৭ কোটি। এই বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের ডিজিটাল লেনদেনের অভ্যস্ততা বাড়াতে বিকাশ নিয়ে আসছে নিত্যনতুন উদ্ভাবনী ডিজিটাল আর্থিক সেবা, যা ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী মার্চ ২০২৩-এ গড়ে প্রতিদিন দেড় কোটি বারের বেশি লেনদেন হচ্ছে মোবাইল আর্থিক সেবা প্ল্যাটফর্মে। একজন গ্রাহক এখন তার প্রায় সব ধরনের দৈনন্দিন লেনদেন বিকাশের মতো আর্থিক সেবা দিয়েই করতে পারেন। এ পরিসংখ্যান প্রমাণ করে, দেশের নাগরিকরা দিন দিন ডিজিটাল আর্থিক সেবা ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন।

: করোনাকালে অধিকাংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্যাশলেস লেনদেনের দিকে অগ্রসর হয়েছে? বর্তমানে কী অবস্থা?

- বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত এমএফএস লেনদেনের পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায় ক্যাশলেস লেনদেন গ্রাহকের মাঝে কতটা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এ বছরের মার্চে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে মোট লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকার ওপর, যা ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় ২১.৭৬ শতাংশ বেশি। মার্চে এমএফএসের মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকার মতো। গত বছরের মার্চের তুলনায় এ বছরের মার্চে এমএফএসের মাধ্যমে বিভিন্ন পরিষেবার বিল দেওয়া বেড়েছে ৪৪ শতাংশের ওপর। একই সময়ে মার্চেন্ট পেমেন্ট বেড়েছে ৩২ শতাংশের ওপর, বিদেশে রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে ৯৭ শতাংশের ওপর। এ প্রবৃদ্ধিই বলে দেয় গ্রাহক দিন দিন ডিজিটাল লেনদেনের প্রতি ঝুঁকছেন। ২০২৭ সালের মধ্যে দেশে মোট লেনদেনের ৭৫ শতাংশ ক্যাশলেস পদ্ধতিতে হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিকাশও এ লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

: ব্যাংকের কী পরিমাণ গ্রাহক ক্যাশলেস সেবায় যুক্ত হয়েছেন? অ্যাপ ও কিউআর কোডের মাধ্যমে পেমেন্ট কতটা এগিয়েছে?

- গ্রাহকদের লেনদেন আরও সহজ ও স্বচ্ছন্দ করতে বিকাশের অংশীদারি রয়েছে ৪৩টি বাণিজ্যিক           ব্যাংকের সঙ্গে। সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে বিকাশ, যার মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি আরও সম্প্রসারিত হয়েছে। এ ব্যাংকগুলোর গ্রাহকরা কয়েকটি সহজ ধাপ অনুসরণ করে তাদের বিকাশ অ্যাকাউন্টে যে কোনো সময় অ্যাড মানি করতে পারেন। আবার প্রয়োজনমতো বিকাশ থেকেও টাকা নিতে পারেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। ব্যাংক-বিকাশ দ্বিমুখী লেনদেনের পরিধি বাড়ানোর এ সুবিধা ক্যাশলেস লেনদেনে গতিশীলতা এনেছে।

বর্তমানে বিকাশের সাড়ে ৫ লাখের ওপর মার্চেন্ট পয়েন্ট আছে, যেখানে অ্যাপে মার্চেন্ট নম্বর টাইপ করার পাশাপাশি কিউআর কোডের মাধ্যমেও বিভিন্ন কেনাকাটা করতে পারছেন বিকাশ গ্রাহকরা। এ ছাড়া প্রত্যেক বিকাশ অ্যাপ ব্যবহারকারীর রয়েছে নিজস্ব কিউআর কোড, যা দিয়ে নিজের মোবাইল নম্বর গোপন রেখেই গ্রাহক লেনদেন করতে পারছেন আরও নিরাপদ উপায়ে।

: আপনাদের অ্যাপ তো অনেক দিন আগে চালু করেছেন, কী পরিমাণ গ্রাহক ঘরে বসে অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন?

- দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ লিমিটেড ২০১৮ সালে তার গ্রাহকদের জন্য মোবাইল অ্যাপ উন্মুক্ত করে। করোনাকালে ডিজিটাল লেনদেনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেনও। বর্তমানে অ্যাপের মাধ্যমে নেওয়া যাচ্ছে বিকাশের সব ধরনের আর্থিক সেবা; যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পে বিল, ক্যাশ-ইন ও ক্যাশ আউট, সেন্ড মানি, মোবাইল

রিচার্জ, মার্চেন্ট পেমেন্ট, ব্যাংক টু বিকাশ অ্যাড মানি। এ ছাড়াও দেওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন সরকারি ফি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফি, এনজিওর কিস্তির টাকা, ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম; বিদেশ থেকে রেমিট্যান্সও আনা যাচ্ছে অ্যাপের মাধ্যমে। এমনকি অ্যাপের মাধ্যমে করা যাচ্ছে সেভিংস, নেওয়া যাচ্ছে ডিজিটাল ন্যানো লোনও।

ই-কেওয়াইসির মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তি তার বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র এবং রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বর দিয়ে কয়েকটি সহজ ধাপ অনুসরণ করে অ্যাপের মাধ্যমে খুলতে পারছেন বিকাশ অ্যাকাউন্ট। বিপুলসংখ্যক গ্রাহক এ সুবিধা নিচ্ছেন। এর পাশাপাশি যে কোনো গ্রাহক নিকটস্থ এজেন্ট পয়েন্ট বা গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে গিয়ে ডিজিটাল কেওয়াইসির মাধ্যমেও অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন।

: সারা দেশে ক্যাশলেস লেনদেন ছড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না কেন?

-দেশজুড়ে ডিজিটাল আর্থিক সেবা পৌঁছে দিতে বিকাশ তৈরি করেছে ৩,৩০,০০০ এজেন্টের বিশাল এক নেটওয়ার্ক। হিউম্যান এটিএম খ্যাত এই এজেন্টরা বিকাশের নিরবচ্ছিন্ন আর্থিক সেবাগুলো পৌঁছে দিচ্ছেন শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামে। যার কারণে গ্রাহকরা হাঁটা দূরত্বেই পেয়ে যাচ্ছেন বিকাশের এজেন্ট পয়েন্ট। ফলে ক্যাশলেস লেনদেনের সুযোগ পৌঁছে গেছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছেও। ডিজিটাল ও ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি, পর্যাপ্ত ইন্টারনেট অবকাঠামো, স্মার্টফোনের ব্যবহারসহ সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে জনসচেতনতা তৈরি করা গেলে ক্যাশলেস লেনদেনের ইকোসিস্টেম আরও শক্তিশালী হবে। 

: ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কার্ড, এমএফএসসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বড় অঙ্কের লেনদেন হচ্ছে। এসব সেবার ভবিষ্যৎ কেমন?

-বিকাশের মতো প্রতিষ্ঠান দেশে ডিজিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে দিন দিন বাড়ছে ডিজিটাল লেনদেন। সুবিধাজনক হওয়ায় বিকাশের গ্রাহকরা প্লেন, বাস, ট্রেনের টিকিট কাটছেন ডিজিটাল পদ্ধতিতে। এ ছাড়াও রয়েছে মুদি দোকান থেকে শুরু করে  শপিং মলে কেনাকাটা, এমনকি মানবতার সেবায় কাজ করা অনেক দাতব্য প্রতিষ্ঠানে অনুদানও দেওয়া যাচ্ছে বিকাশের মাধ্যমে।

সর্বশেষ খবর