সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

দেশের জনগণ ও ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেই আছেন

আহমেদ আকবর সোবহান, চেয়ারম্যান, বসুন্ধরা গ্রুপ

দেশের জনগণ ও ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেই আছেন

দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেছেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে দেশ পরিচালনায় যে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন, তাতে করে আগামী দিনেও তাঁকেই প্রয়োজন। শেখ হাসিনার বিকল্প শুধুই শেখ হাসিনা। আর এজন্য ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সারা দেশের মানুষ শেখ হাসিনার সঙ্গে রয়েছেন। শনিবার ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই)-এর উদ্যোগে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যবসায়ী সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর উপস্থিতিতে বসুন্ধরা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীরা আজীবন আপনার সঙ্গে থাকব। ব্যবসায়ীদের ম্যান্ডেট তো আমার মনে হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পেয়ে গেছেন। এখানে যে কজন ব্যবসায়ী আছেন, তাঁরা এ দেশের মেরুদন্ড, তাঁরা এ দেশ পরিচালনা করেন। এখন তো আপনার ম্যান্ডেট সম্পর্কে আমার মনে হয় না কারও কোনো সংশয় আছে। প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে যদি বলতে হয়, প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে যতদূর জানি, যদি সাত দিনও বলি তবু বলা শেষ হবে না। প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই কাজ করেছেন আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতি নিয়ে। শহর সম্বন্ধে প্রথম দিকে তিনি কম চিন্তা করেছেন। গ্রামের অর্থনীতিকে উন্নত করার জন্য ৫ কোটি মানুষকে ভাতা দিয়েছেন। বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বিকলাঙ্গ ভাতা। এ ধরনের বিভিন্ন ভাতা দিয়ে বছরে ৫৭ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছেন। এসব কিছুর সুফল ভোগ করছে আমাদের দেশের গ্রামীণ গরিব জনসাধারণ। সবাই বলেছেন, শেখ হাসিনাকে বারবার দরকার। আমরা যেমন বঙ্গবন্ধুর কোনো বিকল্প পাইনি, আজকে শেখ হাসিনার বিকল্পও শুধু শেখ হাসিনা।’

আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীরা একটা অনুরোধ জানাব সবাইকে। ব্যবসায়ীরা চান সব সময় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। শান্তিপূর্ণভাবে আমরা থাকি, শান্তিপূর্ণভাবে আমরা ব্যবসা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই। কিন্তু আজকে আমাদের দুর্ভাগ্য যে, প্রতিটি দিন একসময় আমরা দেখেছি আগুনসন্ত্রাস। আবার শুরু হয়েছে হরতাল, অবরোধ। প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ- মিছিল করুক, মিটিং করুক, জনজীবনকে বিচ্ছিন্ন করে, জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে কোনো রাজনীতি হতে পারে না। আমাদের সব রাজনীতির মূল লক্ষ্য অর্থনীতি। এ দেশের কোটি কোটি মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দরকার। গণতন্ত্র মানে এই নয় যে, যা খুশি তা-ই করব। মানুষের জানমাল রক্ষা করতে হবে। মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি করতে হবে। একসময় বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ বলত, এখন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ বলে। শি ইজ এ ব্র্যান্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড। সারা দেশ আজকে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে, কী এমন জাদুর কাঠি আছে সেটা দিয়ে সারা বিশ্বকে তিনি আকর্ষণ করেন! সারা বিশ্বের মানুষের কাছে আজকে কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী।’

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার মনে হয় এ দেশের ৪ কোটি মানুষ ট্যাক্স দেওয়ার সক্ষমতা রাখে। কিন্তু আমাদের ট্যাক্স শুধু ৩৫ লাখ মানুষ দেয়, যারা বিত্তবান। আমাদের ট্যাক্সে আরও জোর দেওয়া উচিত। সরকার, জনগণ, ব্যবসায়ী সবাইকে হাত মিলিয়ে চলতে হবে। এখানে উপস্থিত প্রায় সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা ওয়ান-ইলেভেনে জেলে গেছেন, অত্যাচারিত হয়েছেন। আমার সৌভাগ্য আমি বাংলাদেশে ছিলাম না। তবু আমার কর্মচারীদের জেলে নিয়ে গেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানে আবার সেই এক-এগারোর সরকার। এই স্বপ্ন যদি কেউ দেখে, আমার মনে হয় আমাদের এই ব্যবসায়ীরা যথেষ্ট এটাকে কীভাবে প্রতিহত করতে হবে। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বপ্ন দেখে আর কারও কোনো লাভ নাই।’

তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্র হচ্ছে আবার তত্ত্বাবধায়কের নামে এক-এগারোর সরকার নিয়ে আসার। যত বিত্তশালী, ১৫ বছর, ২০ বছর, ৫০ বছর ধরে যারা আজ সমাজে একটা প্রতিষ্ঠিত অবস্থানে গেছেন, তাদের ওপর একটা জুলুম-অত্যাচার হবে। আমাদের প্রয়াত যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান জেলে ছিলেন, আমাদের উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান জেলে ছিলেন। এ দেশের যত নামিদামি ব্যবসায়ী, সবাইকে তারা জেলে নিয়েছিল। কী ছিল তাদের উদ্দেশ্য? আমি তখন লন্ডনে ছিলাম। সেখান থেকে বলেছিলাম সব বন্ধ করো, সমস্ত কিছু বন্ধ করো। বিভিন্নভাবে আমাদের ব্যবসায়ীদের কাছে মেসেজও দিয়েছি, তোমরা মুভ করো। আমি জাতিসংঘে একাধিক চিঠি দিয়েছি- কী হচ্ছে বাংলাদেশে!’ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আজকে এসব ষড়যন্ত্র রুখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন, সে অনুযায়ী যদি আমরা এগিয়ে যাই তাহলে এ দেশে গরিব মানুষ বলে কোনো শব্দ থাকবে না। আমাদের ১৭ কোটি মানুষ একটা শক্তি। আজকে চীনের শক্তি তার মানুষ। আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি মানুষ। আজকে ইউরোপ-আমেরিকা সবাই এখানে কেন, সবাই এখানকার কথা কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বলেছেন। ওদের আন্ডার-সেক্রেটারি বলে গেছেন, আমরা সম্পর্ক জোরদার করার জন্য বাংলাদেশে এসেছি। তারা এমন কিছু আমাদের ওপর চাপিয়ে দেননি যে তোমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার করো, তোমরা এই করো, সেই করো। আমাদের নেত্রীও চান, আমরা সবাই চাই একটা সুন্দর নির্বাচন হোক। এ ব্যাপারে তো কারও কোনো আপস নেই। আমি সরাসরি রাজনীতির মাঠে জড়িত নই, কিন্তু এই কথা মনে হলে আমার ইচ্ছা হয় আবার রাজনীতির মাঠে আমিও আসি। কারণ আমরা এখানে ভুক্তভোগী। যারা ভুক্তভোগী তারা জানি। আমার নয়জন অফিসারকে নিয়ে গেছে। দুই মাস তাদের জেলে আটকে রেখেছে এবং তাদের দিয়ে আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ানো হয়েছে। এমনকি মার্ডার কেসেরও সাক্ষ্য দেওয়ানো হয়েছে জোর করে। কিছু লোককে আট-নয় মাস জেলে রেখে দিয়েছে। এর যদি আমরা পুনরাবৃত্তি চাই, তাহলে আপনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনতে পারেন। আমি নিশ্চিত আপনারা আর কেউ চান না সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসুক।’ এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘এখানে এক শ ভাগ মানুষ বর্তমান সরকার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ম্যান্ডেট দিয়েছেন। আমরা ব্যবসায়ীরা আছি। আজীবন আপনার সঙ্গে থাকব, আমৃত্যু আপনার সঙ্গে থাকব। কারণ আপনার ব্যতিক্রম তো আপনি। আজ সারা দুনিয়ার চমক শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা সারা দুনিয়াকে আকৃষ্ট করতে পারেন। ইউরোপ-আমেরিকা-ভারত এবং কূটনীতির দিকে তিনি আমাদের দেশকে একটা মিডল অবস্থানে রাখছেন। আমাদের সঙ্গে সবার ভালো সম্পর্ক। কারও সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক নেই। তার যে একটা অভিজ্ঞতা, ২০-২৫ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যে অভিজ্ঞতা, এটা আরেকজনের হতে ২০ বছর লাগবে। সুতরাং আমাদের সার্বক্ষণিক ওনার সেবা নিতে হবে। আমাদের টাইম টু টাইম ওনার সঙ্গে বসতে হবে। এতে করে কিছু সাজেশন তো দিতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘সব কথার শেষ কথা, সারা দেশ, সারা দেশের মানুষ, ব্যবসায়ীরা আপনার সঙ্গে আছেন। এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। দ্বিমত থাকার কারও কোনো অবকাশ নেই। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দরভাবে সংবিধান অনুযায়ী হবে। সংবিধানের বাইরে যেন কেউ এক ইঞ্চিও ব্যত্যয় না ঘটায় তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।’ বসুন্ধরা চেয়ারম্যান বলেন, ‘৬ ঘণ্টা হয়তো বাবা-মা-ভাইবোন সবার কথা ভাবতে হয়। আপনাকে বিনিদ্র রজনিও কাটাতে হয়। আমরা যদি সেসব চিন্তা করি তাহলে ঘর থেকে বের হতাম না। আপনার দুঃখ আমরা শেয়ার করতে পারব না, কিন্তু আমরা সবাই, সারা বাংলাদেশের মানুষ বলি আপনি কীসের নেশায় বাংলাদেশে আছেন। বঙ্গবন্ধুর যে প্রতিশ্রুতি তা বাস্তবায়নের জন্য আপনি চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন।’ আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘আমি আশা করি, বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ বুঝবে, আগামী দিনে এর ফল পাবে। আজকে পদ্মা সেতুর সুবিধাভোগী কারা, আজকে মোংলা থেকে তরকারি (সবজি) নিয়ে বিক্রি করে যাচ্ছে। আগে যে তরকারি বিক্রি করতে পারত না আজকে সেই তরকারি অনেক বেশি দামে বিক্রি করতে পারছে। এই সেতু নিয়ে কত রকমের ষড়যন্ত্র। এর পরও আমাদের নেত্রী সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘজীবী করুক। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ওনার বিকল্প শুধু উনি। আপনারা সবাই ওনার জন্য দোয়া করবেন।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর