বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হৃৎপিণ্ডের দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসায় জোর দিতে হবে

মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আসিফ ইকবাল, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, কার্ডিওলজি ও মেডিসিন বিভাগ, আলোক হেলথ কেয়ার লিমিটেড

নিজস্ব প্রতিবেদক

হৃৎপিণ্ডের দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসায় জোর দিতে হবে

আলোক হেলথ কেয়ার লিমিটেডের কার্ডিওলজি ও মেডিসিন বিভাগের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আসিফ ইকবাল বলেন, দেশে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ বৃদ্ধির জানা-অজানা কারণ রয়েছে। আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান ও জীবনযাত্রার অভ্যাসগত কারণে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক বেশি। তিনি বলেন, ‘সাধারণত হৃদরোগ বলতে আমরা হৃদযন্ত্রের অক্সিজেন বহনকারী ধমনির সংকীর্ণতা বা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে যে অসুস্থতার সৃষ্টি হয় তাকে বুঝি। এ রোগসংক্রান্ত এসিসি/এএইচএ/এএটিএস/এসসিএএল/এসটিএস/এফডিএ’র নির্দেশিকা বিশ্লেষণ করলে আমরা রোগের মূলত তিন প্রকার চিকিৎসা পদ্ধতি পেয়ে থাকি।’

প্রথমত. নিয়মিত ওষুধ খাওয়া, যা সব রোগীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটা সব স্তরের চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য প্রযোজ্য। দ্বিতীয়ত. ইনভেসিভ ট্রিটমেন্ট যেমন হৃৎপিণ্ডের বন্ধ প্রায় ধমনির মধ্যে ঢুকে এক বা একাধিক রিং বসানো অথবা বুক কেটে বাইপাস সার্জারি করা। যা মূলত বিলম্ব-বিহীন, দ্রুত ও জরুরি চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তৃতীয়ত. কোনো প্রকার ইনভেসিভ পদ্ধতি ছাড়াই হৃৎপিণ্ডের রক্তনালির সংকীর্ণতা বা বন্ধ হয়ে যাওয়া ধমনির উপযুক্ত চিকিৎসা করা, যা কি না ক্রমবর্ধমান ও স্থিতিশীল হৃৎপিণ্ডের ব্যথার রোগীর জন্য প্রযোজ্য। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইউএস এফডিএ নির্দেশিত ইইসিপি পদ্ধতি, যা কি না বিজ্ঞানসম্মত, অত্যন্ত কার্যকর, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন, ব্যয় সহনীয়, সহজ ও একটি নিরাপদ চিকিৎসা ব্যবস্থা। ইতোমধ্যে ইইসিপি ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হৃৎপিণ্ডের ক্রমবর্ধমান ও স্থিতিশীল এনজাইনা বা ব্যথায় সফলতার সঙ্গে বহুলাংশে ব্যবহার হয়ে আসছে।

ইইসিপি হৃৎপিণ্ডের দীর্ঘস্থায়ী ও স্থিতিশীল (ক্রমবর্ধমান) এনজাইনা বা বুক ব্যথার এফডিএ অনুমোদিত (রিং পরানো ও হার্ট অপারেশন ছাড়াই) একটি পরীক্ষিত নিরাপদ ও সন্তোষজনক চিকিৎসা পদ্ধতি। এ চিকিৎসা ব্রেনস্ট্রোক, স্নায়ুরোগ, ডায়াবেটিস, চক্ষু, ফুসফুস, কিডনি, যৌন অক্ষমতা, মানসিক রোগ ও রক্ত সঞ্চালনের স্বল্পতাজনিত সব ধরনের রোগের চিকিৎসায় ইইসিপি সমানভাবে কার্যকর।

ইইসিপির কার্যপদ্ধতি : আমাদের হৃৎপিণ্ড সিস্টলের সময়ে পরিশোধিত রক্তকে নির্ধারিত চাপ ও গতিতে শরীরের অগণিত ধমনির মাধ্যমে সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে দেয় এবং ডায়াস্টলের সময় এই রক্তের গতি অনেকটাই স্থির থাকে। ইইসিপি জিবি ডায়াস্টলের সময় শরীরের নিচের অংশের সব ধমনির ওপর শরীরের বাইরে অবস্থিত কাফের মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের কাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চাপ সৃষ্টি করে ও রক্তকে অপেক্ষাকৃত উচ্চচাপে দ্রুত হৃৎপিণ্ডে ফেরত পাঠায়। এ কাজটি রোগীর ক্রমাগত ইসিজি, কম্পিউটার ও কম্প্রেসারের সমন্বিত কার্যের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। দ্রুতগতিতে ফেরত আসা এ রক্তের তরঙ্গ হৃৎপিণ্ডের করোনারি ধমনিতে চাপ সৃষ্টি করে। যেখানে বাধাপ্রাপ্ত হয় সেখানে একাধিক জৈব-বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে রক্ত চলাচলের জায়গা তৈরি করে। এরপর বাধাকে অতিক্রম করে অক্সিজেন সংবলিত রক্ত হৃৎপিণ্ডের অসুস্থ জায়গায় পাঠাতে সক্ষম হয়। এর ফলে রোগীর হৃদরোগজনিত বুক ব্যথার উপশম হয়, দৈনন্দিন কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও আগের মতো স্বাভাবিক জীবন ব্যবস্থায় ফেরত আসে।

ইইসিপি চিকিৎসার সফলতা : সফল চিকিৎসার কারণে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে বিশেষ করে ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে এই চিকিৎসা বেশি হয়। হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় এ পদ্ধতি দিন দিন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আমাদের দেশেও জনপ্রিয় হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর