বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হৃদয়ের চিকিৎসায় সাওল পদ্ধতি এক সামাজিক আন্দোলন

কবি মোহন রায়হান, চেয়ারম্যান, সাওল হার্ট সেন্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক

হৃদয়ের চিকিৎসায় সাওল পদ্ধতি এক সামাজিক আন্দোলন

কাটাছেঁড়া ছাড়াই হৃদরোগের চিকিৎসায় সাওল পদ্ধতি নামে শুরু হয় এক সামাজিক আন্দোলন। মানুষ জানতে পারে জীবনযাপন আর খাদ্যাভ্যাস বদলে রুখে দেওয়া যায় হৃদরোগের মরণকামড়। সাওলের শুরুর গল্প জানতে চাইলে সাওল হার্ট সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কবি মোহন রায়হান বলেন, ২০০৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঙ্গ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ভারতে যাই। অনুষ্ঠান শেষে রুটিন চেকআপ করতে কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে যাই। চেকআপের পর আমার হার্টে ব্লক ধরা পড়ে। ডাক্তার হার্টের বাইপাস করা অথবা রিং লাগানোর পরামর্শ দেন।

এ কথা শুনে আমার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। কারণ এর পেছনে আছে প্রিয়জন হারানোর ইতিহাস। হৃদরোগে আমার বাবা, বড়ভাইসহ অনেকে মারা গেছেন। যদিও তারা বিখ্যাত হদরোগ বিশেষজ্ঞদের চিকিৎসা নিয়েছিলেন। ভাইয়ের হার্টে বাইপাস সার্জারি করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি বেশিদিন বাঁচেননি।

সেদিন হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার মুখে একটি বইয়ের স্টল দেখতে পাই। ‘হৃদরোগ থেকে মুক্তির সহজ ৫ পদক্ষেপ’ নামে ডা. বিমল ছাজেড়ের একটি বই দেখতে পাই। বইটি হোটেলে নিয়ে সারা রাত ধরে পড়ি। এরপর সকালে সিদ্ধান্ত নিই আমি সার্জারি করব না, ঢাকা ফিরে এ বই মোতাবেক চেষ্টা করে দেখব। এরপর আমি ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপনে পরিবর্তন এনে আমার মধ্যে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে পাই। ধীরে ধীরে আমি সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে শুরু করি। এরপর বিমল ছাজেড়ের সঙ্গে দেখা করে সাওল পদ্ধতির চিকিৎসা দেশে জনপ্রিয় করতে আগ্রহ প্রকাশ করি। আমার সঙ্গে আরও অনেকেই আগ্রহী হয়ে এগিয়ে আসেন। আমি নিজে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ শেষে বিজয়ের বেশে দেশে ফিরে আমাদের অন্যতম এক শপথ ছিল দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা। চিকিৎসা ক্ষেত্রে হার্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। তাই নিজে সুস্থ হওয়ার পর দেশের মানুষের হৃদয়কে সুস্থ রাখার শপথ নিই। তবে ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ্য ছিল না। স্বপ্ন পূরণে জমি বিক্রি করে, ঋণ করে অনেক কষ্টে সাওল হার্ট কেয়ার প্রতিষ্ঠা করি। এ হাসপাতালে বিনা অপারেশনে কাটাছেঁড়া ছাড়াই হার্টের চিকিৎসা করা হয়। ফলে হার্টে রিং কিংবা বাইপাস ছাড়াই এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে হাজারও রোগী সুস্থ হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা রোগীর স্থায়ী চিকিৎসা সেবা নিয়ে কাজ করি। মূলত রোগের মূল কারণ জীবনযাপনের ধরন ও খাদ্যাভ্যাস। তাই একজন হার্টের রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেক রোগীর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তনে কাজ করি।

সর্বশেষ খবর