সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা
সা ক্ষাৎ কা র

দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের অংশীদার শরিয়াহ ব্যাংক

মো. আহসান-উজ জামান, এমডি অ্যান্ড সিইও, মিডল্যান্ড ব্যাংক পিএলসি

দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের অংশীদার শরিয়াহ ব্যাংক

ইসলামী ব্যাংকগুলো দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে; অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখছে এবং ইসলামী নীতির ভিত্তিতে আর্থিক সেবা প্রদান করছে। এই ব্যাংকগুলো সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে সাহায্য করছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে প্রতিযোগিতা বেড়েছে এবং প্রচলিত ব্যাংকগুলোকে ইসলামিক ব্যাংকিং নীতিগুলো গ্রহণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করছে। উপরন্তু, ইসলামী ব্যাংকগুলো অবকাঠামো এবং উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কৃষি, তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য উৎপাদনশীল, এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের খাতগুলোর জন্য অর্থায়ন করছে ইসলামী ব্যাংকগুলো, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যাবশ্যক। ইসলামী ব্যাংকগুলোও বিনিয়োগ সেবা প্রদানের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে। তারা অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাবঞ্চিতদের কাছে পৌঁছাচ্ছে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় এবং তাদের ইসলামী নীতিসম্পন্ন আর্থিক পরিষেবা গ্রহণের সুযোগ করে দিচ্ছে। রেমিট্যান্স আহরণের ক্ষেত্রেও ইসলামী ব্যাংকগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীরা দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমেই তাদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা বেশি পাঠিয়ে থাকে, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখে। সংক্ষেপে, বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকগুলো নৈতিক ও সুদমুক্ত আর্থিক সেবা প্রদান, উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, দারিদ্র্যবিমোচন প্রচেষ্টাকে সমর্থন এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছে। বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। প্রথমত, আমাদের দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে এবং ইসলামী ব্যাংকগুলো তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আর্থিক পরিষেবা প্রদান করছে। শরিয়াহসম্মত নীতির এই আনুগত্য, যেমন সুদের নিষেধাজ্ঞা (রিবা) এবং নৈতিক অনুশীলনের প্রচার, গ্রাহকদের চাহিদার সঙ্গে অনুরণিত হয়। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশি জনগণের মধ্যে ইসলামিক ব্যাংকিং সম্পর্কে সচেতনতা ও জ্ঞান ক্রমবর্ধমান। মিডিয়া, শিক্ষা এবং আলোচনা সভাসহ বিভিন্নভাবে সাধারণ মানুষ ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের ধারণা এবং সুবিধা সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন হয়ে উঠছে। এই বর্ধিত সচেতনতা এই ব্যাংকগুলোর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তায় অবদান রেখেছে। এ ছাড়া, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকগুলোর কর্মক্ষমতা ও স্থিতিশীলতা তাদের সুনাম বৃদ্ধি করছে। প্রাথমিকভাবে একটি ভিন্ন বাজার হওয়া সত্ত্বেও, এই ব্যাংকগুলো শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি এবং লাভজনক অবস্থান নিশ্চিত করেছে। এই অর্জনগুলো গ্রাহকদের মধ্যে আস্থা তৈরি করছে, যার ফলে তাদের পরিষেবার চাহিদা বেড়েছে। উপরন্তু, ইসলামী ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের বিস্তৃত পরিসরের চাহিদা মেটাতে তাদের পণ্য সেবা সম্প্রসারণ করতে সফল হয়েছে। তারা শুধু মৌলিক ব্যাংকিং পরিষেবাই নয় বরং কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ এবং ভোক্তা অর্থায়নের মতো সেক্টরগুলোর জন্য উদ্ভাবনী ইসলামিক অর্থায়নের বিকল্প ক্ষেত্রগুলোও প্রদান করে। পণ্যের এই বৈচিত্র্য একটি বৃহত্তর গ্রাহক গোষ্ঠীকে আকৃষ্ট করছে। সবশেষে, ইসলামিক ব্যাংকিং পদ্ধতির মুনাফা ভাগাভাগি মডেল সম্পদের আরও ন্যায়সঙ্গত বণ্টন নিশ্চিত করে এবং দায়িত্বশীল আর্থিক আচরণকে উৎসাহিত করে। পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকগুলোর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে তাদের সামঞ্জস্যতা, গ্রাহক সচেতনতা বৃদ্ধি, শক্তিশালী কর্মদক্ষতা, প্রসারিত পণ্য সেবা এবং ন্যায়সঙ্গত মুনাফা ভাগাভাগি করার প্রক্রিয়া অন্যতম সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

সর্বশেষ খবর