শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্মৃতিতে ১০ জানুয়ারি

ইনাম আহমদ চৌধুরী

স্মৃতিতে ১০ জানুয়ারি

যাপিত জীবনের প্রতিটি দিনই তো তার আপন তাৎপর্য এবং অপরিহার্যতা নিয়ে হিসাবের খাতায় থেকে যায়, কিন্তু এমন দিনও আসে যা ঘটিত কার্যক্রমের কল্যাণে হয়ে ওঠে অতীব ব্যতিক্রমী, অনন্য সাধারণ- স্মৃতির মণিকোঠায় অনির্বাণ ঔজ্জ্বল্য নিয়ে যার অচলায়তন অবস্থান। আমার জীবনে ১০ জানুয়ারি এমন একটি দিন- ইতিহাস সৃষ্টিকারী একটি ঘটনার অতুলনীয় সুখস্মৃতি ধারণ করে তা অবিনশ্বর। ওইদিন আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম পূর্ণতা পেয়েছিল। ওইদিন বাংলাদেশের স্থপতি, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একই দিনে দিল্লিতে ও ঢাকায় শুভাগমন প্রত্যক্ষ করার এবং তার আয়োজনে সামান্য অংশ নেওয়ার বিরল সৌভাগ্য হয়েছিল আমার।

৫ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে ঢাকা থেকে প্রথমে বিদেশগামী সরকারি দল দিল্লি যায়; তদানীন্তন মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর আশু মুক্তির আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা সমন্বিত ও জোরদার এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের কতিপয় অতীব জরুরি অর্থনৈতিক বাণিজ্যিক সমস্যা সমাধান-মানসে। ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সদ্য নিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ এবং সদস্য ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের মেম্বার অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক এবং চিফ অব প্রটোকল ফারুক চৌধুরী (সদস্য-সচিব) এবং বাণিজ্য-শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব, আমি। দিল্লিতে দলে যুক্ত হন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন মিশনপ্রধান হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী।

৮ জানুয়ারি যখন ভারত ও বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের বৈঠক দিল্লির নর্থ-ব্লকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে হচ্ছিল তখনই খবর এলো বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেয়েছেন। একটি বিশেষ পিআইএ বিমানে তিনি লন্ডনের পথে পাকিস্তান ত্যাগ করেছেন। আনন্দধ্বনি ও স্বতঃস্ফূর্ত করতালিতে মুখর হয়ে উঠল সম্মেলন কক্ষ।

স্থির হলো উভয় দেশের প্রতিনিধিবর্গ সমন্বিত যোগাযোগের মাধ্যমে আরোপিত দায়িত্ব পালন করবেন। এটাও ঠিক হলো বঙ্গবন্ধু দিল্লিতে শুভ পদার্পণের তাৎক্ষণিক আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা অন্তে উপস্থিত রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন দেশীয় কূটনীতিক ও সাংবাদিকদের এবং তাদের মাধ্যমে উন্মুখ পৃথিবীর কাছে বঙ্গবন্ধু ইংরেজিতে একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেবেন। স্বকর্ণে প্রত্যক্ষভাবে তারা শুনবেন বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বর ও বক্তব্য। পরবর্তীতে নিকটবর্তী নির্ধারিত সভাস্থলে হবে জনসভা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর উপস্থিতিতে। ভাষণ দেবেন বঙ্গবন্ধু। অতঃপর পুষ্প-তোরণসজ্জিত রাজপথে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সমভ্যিহারে বঙ্গবন্ধু যাবেন রাষ্ট্রপতি ভবনে। সেখানে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা, বৈঠক ও একান্ত আলোচনা অন্তে বঙ্গবন্ধু তাঁকে বহনকারী ব্রিটিশ বিমানের পরিবর্তে ভারতীয় রাষ্ট্রপতির সরকারি বিমান ‘রাজহংস’যোগে কলকাতা হয়ে ঢাকা প্রত্যাবর্তন করবেন। কলকাতায়ও হবে একটি জনসভা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ ও রাষ্ট্রাচার প্রধান ফারুক চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর সহগামীদের সঙ্গে রাজহংসযোগে যাবেন। দিল্লিতে জনসভা শেষেই অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন ও আমি, ভারতীয় দুজন পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে বিশেষ বিমানে কলকাতা গিয়ে সেখানে বঙ্গবন্ধুর অভ্যর্থনার সরকারি ব্যবস্থাদিতে সহায়তা করব। অবশ্য, পরিকল্পিত এ কার্যক্রমের পরিবর্তন হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর অভিপ্রায় অনুযায়ী।

১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সাল- পৌষ মাসের দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে এক ঐতিহাসিক সকাল। অপেক্ষারত ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, মন্ত্রিসভার সদস্যবর্গ, সামরিক ও বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, কূটনীতিক, শত শত মিডিয়াকর্মী, সাংবাদিক। তখন বাংলাদেশ পেয়েছে শুধু ভুটান ও ভারতের স্বীকৃতি। তবুও সেই সকালে বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন তদানীন্তন সোভিয়েত রাশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের সব দেশের রাষ্ট্রদূত। পশ্চিম ইউরোপের ব্রিটেন, ইতালি, ফ্রান্স, নরওয়ে, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম ও পশ্চিম জার্মানির রাষ্ট্রদূত বা কূটনৈতিক প্রতিনিধি। সর্বমোট ২০টি দেশের। আর উৎফুল্ল বিরাট জনতা।

সব প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে অবতরণ করল ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর রুপালি কমেট বিমান। বাংলাদেশের রাষ্ট্রাচার প্রধান ত্বরিতগতিতে বিমানের সোপান আরোহণ করলেন বঙ্গবন্ধুর অনুগামী হিসেবে আসতে। কিছুক্ষণ পরেই উন্মুক্ত বিমানদ্বারে এসে দাঁড়ালেন গলাবন্দ জ্যাকেট ও কালো ওভারকোট পরিহিত সুদর্শন, খুজ, দীর্ঘকায় সহাস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হলো তোপধ্বনি, ক্রমান্বয়ে ২১টি। হাত তুলে অভিবাদন জানালেন সংগ্রাম-বিজয়ী নবীন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। উচ্চারিত হলো ‘জয় বাংলা’। দৃপ্ত পদক্ষেপে সোপান বেয়ে নেমে এলেন তিনি। আলিঙ্গন, করমর্দন, শুভেচ্ছা বিনিময়। রাষ্ট্রাচার প্রধান তাঁর অনুগামী। অদূরে অবস্থানরত বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের বাকি চারজনের ওপর তাঁর দৃষ্টি পড়ল। আমরা হাত তুলে ‘জয় বাংলা’ বলে জানালাম আমাদের স্বপ্নের কান্ডারিকে সশ্রদ্ধ অভিবাদন। মন্ত্রী আজাদ এগিয়ে গেলেন। আর বঙ্গবন্ধু তাঁকে করলেন সাদর আলিঙ্গন। চারদিকে অজস্র ক্যামেরা, টিভি, মাইক্রোফোন। পুষ্পস্তবকের সমাহার। ব্রাস ব্যান্ডে বেজে উঠল দুটি দেশের জাতীয় সংগীত-

আমার সোনার বাংলা আর জনগণ মন। রচয়িতা একই কবি।

এরপরই বঙ্গবন্ধু ইংরেজিতে তাঁর বলতে গেলে বিশ্ববাসীকে তাঁর ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন  তাঁর মুক্তি ও জয়যাত্রা হয়েছে- from darkness to light, from captivity to freeom, from desolation to hope’। সফল মুক্তিযুদ্ধের পর তাঁর স্বাধীন স্বদেশে প্রত্যাবর্তন এটাই জানান দিচ্ছে যে- Truth has at last triumped over falsehood, Sanity over insanity, courage over cowardice Justice over injustice, good over evil: স্বদেশে তার ফেরা হবে দেশকে শান্তি, প্রগতি আর উন্নতির পথে চালনা করার জন্য- ‘turning victrory into a road of peace, progress and prosperity’ সন্তুষ্টির কথা, তাঁর এই ঐতিহাসিক উক্তির কয়েক দশক পরে তাঁরই পরম যোগ্য দুহিতা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে সব প্রতিবন্ধকতার মোকাবিলা করে নির্দেশিত সেই পথেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তুমুল করতালির মধ্যে এ সংক্ষিপ্ত ভাষণ প্রদান শেষে বঙ্গবন্ধু উপস্থিত নেতৃবর্গ এবং সমবেত সম্মানিত সুধীজন ও কূটনীতিকদের সঙ্গে ঘুরেফিরে কিছু শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার পাশে। কী প্রত্যয়দীপ্ত বঙ্গবন্ধুর অবয়ব, কী সুন্দর স্মিতহাস্যে তাঁর ভাব প্রকাশ। আত্মমর্যাদা বোধ ও আত্মবিশ্বাস বিচ্ছুরিত হচ্ছে তাঁর প্রতিটি দৃপ্ত পদক্ষেপে। প্রতিটি উচ্চারিত বাক্যে প্রকাশ পাচ্ছে তাঁর প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, দেশপ্রেম, মানবতাবোধ এবং তীব্র ভাবানুভূতি-সমন্বিত তার সংযত ও সুচিন্তিত মনোভাব। মনে হচ্ছিল যেন অতীব অভিজ্ঞ এক রাষ্ট্রনায়ক বিচরণ করছেন তারই অনুগত এক ভক্তম লীর মাঝে।

ঐতিহাসিক নগরী দিল্লিতে আজ উপমহাদেশের ইতিহাসে আরেক অধ্যায়ের সূচনা করলেন এ বিজয়ী মহামানব। সেই ইন্দ্রপ্রস্থের যুগ থেকে কত রাজত্ব-সাম্রাজ্যের উত্থান পতনের সাক্ষ্য বহন করছে এ জনপদ। সাইবার গিরিপথ দিয়ে এসেছে আর্য। ‘শক হুন দল পাঠান মোগল’ এসেছে। পাঠান-মোগলরা দিয়েছে কুতুব মিনার, লালকেল্লা, তাজমহল। এসেছে সুদূর ইউরোপ থেকে ব্রিটিশ রাজ। উপমহাদেশের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের কেন্দ্রভূমি ছিল এটা। ছাত্রনেতা শেখ মুজিব তো এ শহরেই এসেছিলেন ৪৬ সালে মুসলিম লীগ কাউন্সিল অধিবেশনে ব্রিটিশ তাড়ানোর উদ্যোগে। আর আজ? পৌষের এই কুয়াশা বিদীর্ণকারী সূর্যোদয়ের লগ্নে উপমহাদেশের মানচিত্র পাল্টে দেওয়া এ বীর পুরুষকে সন্দর্শনের জন্য স্বাগত জানাতে সবাই এসেছেন। যেসব দেশ স্বীকৃতি দেয়নি (কেবল দুটো দেশ ছাড়া আর সবাই) তাদের প্রতিনিধিরাও কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও প্রচলিত নীতি উপেক্ষা করে এখানে উপস্থিত। এত মানুষের বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস।

তারপর বিমানবন্দর থেকে মোটর মিছিলে সভাস্থলে। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী প্রথমে হিন্দিতে (আমাদের কানে উর্দুই মনে হচ্ছিল দিল্লিই তো উর্দুর জন্মভূমি) সংক্ষিপ্ত স্বাগত ভাষণ দিলেন। তারপরে বঙ্গবন্ধু বাংলা ভাষায়ই শুরু করলেন তার বক্তব্য। মুহুর্মুহু হাততালি। পরিশেষে তিনি পাঠ করলেন লিখিত ইংরেজি বক্তৃতার কিয়দংশ। চারদিকে আনন্দধ্বনি। বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের মূল কথা ভারত ও ভারতবাসীকে আমাদের মুক্তি সংগ্রামে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য এবং কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় প্রদানের জন্য সকৃতজ্ঞ ধন্যবাদ জ্ঞাপন। কারও প্রতি তাঁর কোনো বিদ্বেষ নেই, ঘৃণা নেই, নেই প্রতিহিংসার মনোভাব। সবার সঙ্গেই বন্ধুত্ব-দুশমনি কারও সঙ্গেই নেই। এ উপমহাদেশের সব দেশের সঙ্গে মৈত্রীর সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধনে গ্রথিত হয়ে জনকল্যাণে এক ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগের উদাত্ত আহ্বান।

সভা শেষে বঙ্গবন্ধুর মোটর মিছিলের যাত্রা সুসজ্জিত তোরণমন্ডিত রাজপথ দিয়ে। এবার গন্তব্য রাষ্ট্রপতি ভবন। রাস্তার দুই পাশে অভ্যর্থনা জানাতে মানুষের সারি। পূর্বে নির্ধারিত ব্যবস্থা অনুযায়ী অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন ও আমি ফিরে এলাম বিমানবন্দরে। আরও দুজন ভারতীয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ আমাদের যেতে হবে কলকাতা। সেখানে বঙ্গবন্ধুর অভ্যর্থনার আয়োজনে ভারতের রাষ্ট্রাচার প্রধান মাহবুব খান বিশদ নির্দেশনাবলি ও পরামর্শ দিয়েছেন। মনে হলো অতীব দক্ষ ও কর্মঠ এ কর্মকর্তা সব কিছুই তার নখদর্পণে। বিমানবন্দরে তখনো বেশ লোকজন রয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে অনেকেরই মুখে বঙ্গবন্ধুর সপ্রশংসা স্তুতি। আমাদের শকট চালকের উক্তি-‘লিডার হো তো অ্যায়সা’। এ যেন সবারই মনোভাবের অনুরণন।

এয়ারপোর্টে কলকাতা যাত্রার জন্য এয়ারফোর্সের প্লেনের অপেক্ষারত অবস্থায়ই খবর পেলাম, বঙ্গবন্ধুর যাত্রাসূচির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। ভারতীয় রাষ্ট্রাচার প্রধান মাহবুব খান জানালেন, বঙ্গবন্ধু ঢাকা যাবেন তাঁকে বহনকারী ব্রিটিশ প্লেনেই-রাজহংসে নয়। কলকাতা এবার যাত্রাবিরতি হবে না, সোজা তিনি ঢাকা যাবেন। কলকাতা আসবেন পরবর্তীতে। পরে জানালেন, বঙ্গবন্ধুর ভ্রমণসূচির পরিবর্তন কীভাবে হয়েছিল। ব্রিটিশ সরকারের সৌজন্যমূলক আয়োজনে যে প্লেনে তিনি এসেছিলেন, তা থেকে আকস্মিকভাবে ভারতীয় ‘রাজহংস’ বিমানে ঢাকা যাওয়ার ব্যবস্থা বঙ্গবন্ধু সমীচীন বিবেচনা করেননি’ মোটেই। বাংলাদেশের রাষ্ট্রাচার প্রধান ফারুক চৌধুরী ব্রিটিশ হাইকমিশনার (দিল্লিতে নিযুক্ত) স্যার টেরোস সারভির কাছ থেকে খোঁজ নিয়েও জেনেছেন ব্রিটিশ প্লেনটি নিরাপদেই ঢাকা বিমানবন্দরের রানওয়েতে অবতরণ করতে পারবে। সুতরাং প্লেন পরিবর্তন অহেতুক এবং অসৌজন্যমূলক হয়ে দাঁড়ায়।

ভাবলে আশ্চার্যমন্ডিত হতে হয়, উত্তেজনামুখর সেই মুহূর্তগুলোতে কী করে বঙ্গবন্ধু কোনো ব্রিফিং ছাড়াই তাৎক্ষণিকভাবে দেশের স্বার্থ ও রাষ্ট্রাচারসম্মত রীতি সুরক্ষা করে সুবিবেচিত বিজ্ঞজনোচিত সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন। আর কী অসাধারণ দূরদর্শী ছিলেন তিনি। পৌষালি অপরাহ্ণে বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী রুপালি ব্রিটিশ বিমানটি যখন তেজগাঁও বিমানবন্দরে অবতরণ করল সারা এয়ারপোর্ট অঞ্চল এবং তাঁর শুভাগমনের রাজপথ তখন জনমহাসমুদ্রে রূপায়িত। সে কী অভাবনীয় উচ্ছ্বাস, উল্লাস। মহা প্রাপ্তির শান্তিদায়িনী তৃপ্তি। চোখে আনন্দাশ্রু নিয়ে সংগ্রামের পূর্তিতে বাংলার মাটিতে বীরের বেশে নেমে এলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাস্তবিক অর্থে আজ শেষ হলো আমাদের ১০ মাসের রক্তঝরা সংগ্রাম। সবার মনে পৃথক জাতিসত্তা নিয়ে নিজস্ব রাষ্ট্র-সীমানায় প্রতিষ্ঠিত হলো বাঙালি জাতি। আওয়ামী লীগের তাঁর সহকর্মী নেতাদের সঙ্গে তিনি উন্মুক্ত ট্রাকে যাত্রা করলেন সভাভিমুখে। পিতা ফিরে এলেন তাঁর প্রাণপ্রিয় মানুষের কাছে।

 

 লেখক : উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর