২৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১১:৩৬
অন্য চোখ

শত বছরের সমান স্মৃতির স্কুলে

মুস্তাফা জামান আব্বাসী

শত বছরের সমান স্মৃতির স্কুলে

কালের কপোলতলে শুভ্র সমুজ্জ্বল; কালের একটি ঘড়ি। সিলেটের কিংবদন্তি জানাচ্ছে, ‘চান্নিঘাটের সিঁড়ি, বঙ্কুবাবুর দাড়ি, জিতুমিয়ার গাড়ি আর আলি আমজাদের ঘড়ি’। সিলেট শহরে ১৪০ বছর ধরে শোভা পাচ্ছে সুরমা নদীর ধারে ঐতিহাসিক এই ঘড়ি, যা বন্ধ হয়নি। নওয়াব আলি আহমেদ খান দিল্লির চাঁদনী চক দেখে স্থির করেন যে, তার ছেলে নওয়াব আলি আমজাদ খানের নামে   একটি ঘড়ি স্থাপন করবেন সিলেটে। অন্য বিবরণে জানা যায়, আলি আমজাদ নিজেই ঘড়িটি স্থাপন করেন। গল্পটি উড়িয়ে দেওয়া যায় এ কারণে যে, ১৮৭১ সালে তার বয়স তিন। তাই এই বয়সে ঘড়িটি স্থাপন করা তার পক্ষে অসম্ভব। বয়স বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি লেখাপড়ায় অনেক দূর এগিয়ে যান। সিলেটের ইতিহাসে এই ‘ঘড়িঘর’টি স্মরণীয়। এ কারণে যে, একে ঘিরেই তৈরি হয়েছে অনেক ইতিহাস। আজ মৌলভীবাজার আলি আমজাদ খান মহিলা বিদ্যালয়ের বিশেষ অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে তার কথা এবং পেছনের পৃথ্বিপাশার নওয়াব বাড়ির ইতিহাসের বটগাছের নিচে দাঁড়িয়ে মনে পড়বে নাদিরের কবিতা :

The tall tree for centuries stand/ Tall and elegant for all to admire ......../ It is not weary; it is not tired nor weakened by the long years/ Its roots are deep and strong holding strongly to the ground/ No wind or storm can sway it or weaken it at all/ Standing proudly the oak tree looks on/ Strong, elegant, rising high and spreading far the oak tree stands cynosure of all eyes.

আমাদের মতো সাধারণ মানুষরা এখানে এসে একত্রিত হবেন, বলবেন পুরনো দিনের কথা, যারা কিছু রেখে গেছেন তাদের কথা, হতে পারে তা একটি ঘড়ি বা তার নামের স্কুল। দীর্ঘ পথপরিক্রমায় স্কুলে যারা পড়েছেন তারা জীবনকে করেছেন সমৃদ্ধ। স্ত্রী আসমা রোজই এই স্কুলের কথা বলেন, যেখানে তিনি পড়েছেন, স্কুলের দিদিমণিদের কথা বলেন, যারা পরম স্নেহে দিয়েছেন ভালোবাসার প্রথম পাঠ। বলেন জানালার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মনু নদীর কথা, যার কথা তার ছটি গ্রন্থের প্রতিটিতে উচ্চকিত। স্কুলের নামকরা শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রী, ছাত্র-ছাত্রী, স্কুলকে ঘিরে দেখেছেন অনেক স্বপ্ন। পৃথ্বিপাশার জমিদাররা গত। মনু নদীর পার দিয়ে হেঁটেছি গান গাইতে গাইতে। হাসন রাজার গান, শীতলং শাহ ফকিরের গান। এই অঞ্চলের গান গেয়েছি, সংগ্রহ করেছি, যেমন মালজুড়া গান, ধামাইল গান, রাধাকৃষ্ণের বিচ্ছেদ। সে কারণেই হয়তো ডাক পড়েছে। সবাই আমরা ক্ষণিকের অতিথি। কিছুক্ষণের জন্য এই বটগাছের নিচে আমাদের অবস্থান। সেখানে খুঁজে পাই সাকলি সালামত-এর ইতিহাস, পাই খান ইব্রাহিম খান লোদি, আলি আহমেদ খান প্রমুখের নাম। ইরানের শাহ্ রেজা শাহ্ পাহ্লভি পৃথ্বিপাশায় এসেছিলেন অতিথি হয়ে, সঙ্গে গভর্নর জেনারেল খাজা নাজিমউদ্দিন; আইয়ুব খান ছিলেন নিরাপত্তার দায়িত্বে। নওয়াব আলি সাফদার খান ও নওয়াব আলি সারোয়ার খানের ইতিহাস বিস্মৃত হয়নি কেউ। এরাও সিলেটকে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আন্দোলনে ও পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে কাজ করেছেন। মৌলভীবাজারে আজ এই অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে আমার একটি ইচ্ছার কথা জানাতে পারি। তা হলো— সিলেটের মেয়র ২০১৬ সালে আরেকটি ঘড়ি স্থাপন করতে পারেন, যেটি হবে একবিংশ শতাব্দীর ডিজিটাল ঘড়ি। ঘড়ির নামকরণ হতে পারে : ‘স্বাধীনতা ঘড়ি’। এই স্কুলেও একটি ডিজিটাল ঘড়ি স্থাপন করা যেতে পারে যেটি আলি আমজাদ খানের স্মৃতিকে করবে উচ্চকিত। চাই এমন মানুষ, যারা আমাদের সমাজকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারবে। আজ এই সুন্দর দিনে সবাইকে মনে করছি এবং আশা করছি, এই স্কুলের মেয়েরা বাংলাদেশের দিগন্তে আনবে নতুন সূর্য, যেখানে দেশ হবে সত্যিকার অর্থে প্রগতির সারথি।  

[email protected]

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর