৭ জানুয়ারি, ২০১৬ ১৩:৩২
কলকাতার চিঠি

ভোটের দামামা পশ্চিমবঙ্গে

সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত

ভোটের দামামা পশ্চিমবঙ্গে

ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গে যা ঘটছে প্রতিদিন তা সংবাদ মাধ্যমে পড়ে দেখে, রাজ্যের ১০ কোটি মানুষ বিভ্রান্ত। নতুন বছরের শুরুতেই নির্বাচনী দামামা বেজে উঠেছে। এ বছরের মে মাসে আট দফায় ভোট হবে পশ্চিমবঙ্গে। এত দফায় ভোট এ রাজ্যে আগে হয়নি। নির্বাচন কমিশন মনে করে, পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, আট দফায় ভোট সামাল দেওয়া যাবে না। বর্তমান সরকার পক্ষের মা-মাটি-মানুষের মা তথা বঙ্গেশ্বরী তার কাজের হিসাব দিতে গিয়ে বলেছেন, ৪০০ বছরের মোগল আমল থেকে যে কাজ হয়নি তা তিনি চার বছরে করে ফেলেছেন। তার এই উক্তি শুনে কেউ বলছেন, তিনি অঙ্ক ইতিহাস জানেন না, কেউ বলছেন, মাথাটা পুরো গেছে। কিন্তু বিষয়টি গুরুতর। কারণ মানুষ মনে করে কথায় কথায় ৯ কোটির বেশি মানুষকে তিনি বিভ্রান্ত করে চলেছেন। মঙ্গলবারই তিনি জঙ্গলমহলে বলেছেন, সিপিএমের ধার করা ২৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ তিনি শোধ করেছেন। কিন্তু তিনি যে ৮৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন, তা বেমালুম চেপে গেছেন। প্রতিক্রিয়ায় সাবেক অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত বলেছেন, অঙ্ক শেখার জন্য মমতার আবার ক্লাস ফোরে ভর্তি হওয়া উচিত। শুরু হয়েছিল ১৪ মাস আগে খাগড়াগড় কাণ্ড দিয়ে। সম্প্রতি পাঠানকোটে পাকি জঙ্গি হামলা হয়েছে। কিন্তু এ রাজ্যে যা হচ্ছে তা পাঠানকোটের থেকে অনেকগুণ বেশি। যা প্রতিদিনের কাগজে পশ্চিমবঙ্গ তথা দেশের মানুষ দেখতে পাচ্ছেন। ভারত-পাকিস্তানের বৈরিতা চিরকালীন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কি মমতার শত্রু? প্রতিদিন রাজ্যের নারীদের ওপর নৃশংস আক্রমণ চলছে। থানার ওসিকে পর্যন্ত খুন করে ফেলা হয়েছে।

তাও রাজ্যের পুলিশ নির্বিকার। থানায় থানায় ঢুকে পেটানো হচ্ছে পুলিশদের। কিন্তু মমতার আমলে পুলিশ এতটাই অসহায় যে, মার খেয়েও দোষীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে না। একজন পুলিশ সুপার তো তাকে জঙ্গলমহলের মা বলে ডাকেন প্রকাশ্যেই। মমতার আরেকটা বড় দাবি হলো, তিনি পশ্চিমবঙ্গের পড়ুয়া মেয়েদের বিনামূল্যে সাইকেল দিয়েছেন। এই প্রচার তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তব হলো সাইকেল দেওয়া হয়েছে ইউনিসেফের টাকায়। ঘটনাচক্রে ইউনিসেফের কর্তাও একজন বাংলাদেশি নাগরিক। এই সাইকেল বিলি কাণ্ড নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলোও। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, সাইকেল বণ্টনের হিসাব চাই। কত টাকা কোথায় খরচ হয়েছে তার হিসাব চাই। না হলে এটা নিয়েও আদালতে মামলা করবেন তিনি।

এবার তাকানো যাক নির্বাচনের দিকে। ভোট যত এগিয়ে আসছে মা-মাটি-মানুষের মা তার সন্তানদের ভুলে গিয়ে পুজোআর্চায় মন দিয়েছেন। সারা বছর যেখানে-সেখানে নামাজ পড়েছেন। আর এখন মুকুল রায়কে নিয়ে বিভিন্ন কালীমন্দিরে পুজো দিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু তিনি কেন সারা বছর মুসলমানদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন সেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন মৌলভীরা। আর দিদিমণি যখন বুঝতে পেরেছেন যে, তার প্রতারণা মুসলিমরা ধরে ফেলেছেন তখন তিনি এক লাফে চলে গেছেন হিন্দুত্ব লাইনে। আর সেখানে তার দোসর হয়েছেন মুকুল রায়। বাংলার বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে কালীমন্দিরে পুজো আর প্রসাদ বিতরণ করছেন। কে এই মুকুল রায়? সারদা চিটফান্ড কাণ্ডে অভিযোগের তীর রয়েছে মুকুল রায়ের দিকে। জেল যাত্রা আটকাতে মুকুল দিদির সঙ্গে লোক দেখানো ঝগড়া করে দিল্লিতে গিয়ে বসেছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দিদির গোপন বোঝাপড়ার দৌত্য করেছেন। সেই দৌত্যের জেরেই পশ্চিমবঙ্গে সারদা কাণ্ডের সিবিআই তদন্ত কার্যত বন্ধ। যে মুকুল আর মমতার জেলে থাকার কথা ছিল, তারা রীতিমতো বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভোটের আগেই বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের গোপন আঁতাত হয়ে যাবে। দীর্ঘদিন দূরে দূরে থাকার পর মুকুল এখন দিদির কাছাকাছি এসেছেন। যে মমতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কোমরে দড়ি পরাবেন বলেছিলেন আর যে মোদি মমতাকে ছাড়বেন না বলেছিলেন তারা দুজনেই এখন চুপ। বিজেপির সঙ্গে মমতার পুরনো সম্পর্ক। কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপির হাত ধরেই তিনি সর্বভারতীয় রাজনীতিতে উঠে আসেন। আবার সেই বিজেপিরই কাছাকাছি আসছেন মমতা। ঘনিষ্ঠতার দূতিয়ালি করেছেন মুকুল রায়।  এর আগে কংগ্রেসের সঙ্গে সখ্য বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। দেখা করেছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও। কিন্তু সেখানে সুবিধে হয়নি তার। কংগ্রেস এবং বামেরাই কাছাকাছি আসছে। তাই আর বিলম্ব না করে ফের বিজেপির দিকে ঝুঁকছেন মমতা।

 

বিডি-প্রতিদিন/ ০৭ জানুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর