৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ১১:৫২

জাতীয় পার্টির উচিত অবিলম্বে সরকার থেকে বেরিয়ে আসা

রিয়াজ হায়দার, চট্টগ্রাম

জাতীয় পার্টির উচিত অবিলম্বে সরকার থেকে বেরিয়ে আসা

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, অবিলম্বে সরকার থেকে জাতীয় পার্টির বের হওয়া উচিত। দেশে তৃতীয় একটি বড় রাজনৈতিক দল থাকা খুব দরকার। সত্যিকারের বিরোধী দল হতে হবে জাপাকে। আর এ জন্যই তার উচিত অবিলম্বে সরকার থেকে বেরিয়ে আসা।

মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী তিন তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ছিলেন চট্টগ্রাম নগরের প্রথম মনোনীত মেয়র। ষাটের দশকে ছিলেন ছাত্রলীগেও।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মাহমুদুল ইসলাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ কমপ্লেক্স ‘জমিয়তুল ফালাহ মুসল্লি পরিষদের’ও সভাপতি। তিনি রাজনীতিতে ও সমাজে মৌলবাদী থাকা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ইসলাম অনুমোদন করে না। ইসলাম ধর্ম পরকালভিত্তিক। এই ধর্মকে বিক্রি করে দুনিয়াবি ফায়দা নেওয়া ইসলাম সমর্থন করে না। পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ৪০ নম্বর আয়াতে আছে, ‘কোরআনকে অল্পতেই বিক্রি কোরো না।’ সে কারণে রোজার মাসে তারাবির নামাজ পড়ানোর সময় হাফেজ সাহেবের সঙ্গে ‘দরদাম’ করার রেওয়াজ নেই। কিন্তু আমাদের দেশে এই পবিত্র ধর্মকে নিয়ে যেন বিক্রি বাট্টা চলছে। মাহমুদুল ইসলাম আরও বলেন, লোহা কাটতে লোহা লাগবে। ধর্ম ব্যবসায়ী জেএমবি-জামায়াতকে মোকাবিলায় সরকারের উচিত অরাজনৈতিক খাঁটি আলেমদের নিয়ে আলোচনায় বসা। তাদের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ বিরোধী সচেতনতা তৈরি করা।  ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম বাংলাদশের এই প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বলেন, রাষ্ট্রীয় স্বার্থ সবার ওপরে। রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এ জন্য জাতীয় ঐক্য দরকার। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, যুদ্ধাপরাধ বিচার, উন্নয়ন, গণতন্ত্র, সুশাসন এসব ইস্যুতে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। মাহমুদুল ইসলাম এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, গণতন্ত্র আর সুশাসনে দুর্বলতা থাকলেও উন্নয়নে সজাগ আছে সরকার। দুর্বলতা কাটাতে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় আর ঐক্য দরকার। সহিষ্ণুতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অসহিষ্ণু আচরণ দিয়ে গণতন্ত্র চলে না। বড় রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য আর সমন্বয় মানে কী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামীকে ছাড় দেওয়া? বা বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোটকে মেনে নেওয়া?  —এমন প্রশ্নে সাবেক এই এমপি বলেন, সরকারের ‘আটটি হাত’ আছে। এক একটি দিয়ে এক একটি বিষয়কে হ্যান্ডেল করা যেতে পারে। সাম্প্রতিক পৌর নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যকার দূরত্ব বা অবিশ্বাস সৃষ্টির লক্ষণ পাওয়া গেছে। হয়তো যুদ্ধাপরাধ বিচার ইস্যুতে পক্ষে-বিপক্ষে বিএনপির ম্রিয়মাণ নীতির কারণেই এমনটি হয়েছে। বিষয়টি আমলে নিয়েও এগোনো দরকার। সদ্য অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন নিয়ে কারও অভিযোগ থাকলে তো ট্রাইব্যুনালের দরজা খোলা আছে। বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব বিতর্ক প্রসঙ্গে মাহমুদুল বলেন, আইএস অস্তিত্ব নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে দেশে জঙ্গিবাদের তত্পরতা ভয়াবহ পরিণতি ভয়ে আনতে পারে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। এদেশে ইসলাম আসে সুফিবাদের হাত ধরে, যেখানে জঙ্গিবাদের স্থান নেই। তা ছাড়া, আল্লাহর অলি হতে হলে মাদ্রাসায় পড়তে হবে— এমনও তো কথা নেই। সরকারকে গভীরভাবে অনুসন্ধান করা উচিত কেন এদেশে একই সঙ্গে ব্লগার ও সুফিবাদ অনুসারীদের টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে। কেন তারা অভিন্ন শক্তির টার্গেট। সুফি দর্শনের কথা বললে তা জেএমবি জামায়াতের আদর্শের বিরুদ্ধে যায়। চট্টগ্রামের উন্নয়ন এবং নতুন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের এগিয়ে চলা প্রসঙ্গে সাবেক এই মেয়র বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নে সমন্বয় নেই। সম্প্রতি সমন্বয় সভা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সভা হওয়া আর মেয়রের ‘হুকুম মানা’ এক কথা নয়। আইনগতভাবেই অন্য সেবা ও উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা মানতে বাধ্যবাধকতা তৈরি করা দরকার। তাতে উন্নয়ন ও সেবা কাঙ্ক্ষিত গতি পাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর