২২ জানুয়ারি, ২০১৬ ১৩:০৩

রাজনীতিতে ভালো লোকের অভাব

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

রাজনীতিতে ভালো লোকের অভাব

অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন রাজনীতি স্থিতিশীল। দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডও এগিয়ে চলছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভালো। বিরোধী দলগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত। একটা সরকারের মেয়াদ থাকে পাঁচ বছর। তাকে সেই সময় দেওয়া উচিত, যদি দেশের উন্নয়ন চান। গত বছর রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণে আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি হয়নি। নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও ব্যাহত হয়েছে। বর্তমানে দেশে স্থীতিশীল পরিবেশ আছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নাই। এ কারণেই দেশ অনেক সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। কথাগুলো বলছিলেন— দক্ষিণাঞ্চলের প্রবীণ রাজনীতিক খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক এমপি। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে এখন উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে। পদ্মা সেতু, তাপ বিদ্যুেকন্দ্র, চার লেনের সড়ক, বিমানবন্দর নির্মাণ হচ্ছে। মংলার ইপিজেড-এ বিপুল পরিমাণের বিনিয়োগ আসছে। অর্থনৈতিক জোনের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। মংলা বন্দর আধুনিকায়নের কাজ চলমান। যে কোনো সময়ের চেয়ে মংলা বন্দর এখন গতিশীল এবং জাহাজ আসার পরিমাণও বেশি। বর্তমান সরকারের পলিসি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণেই এটা সম্ভব হচ্ছে। তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, বেগম খালেদা জিয়া খুলনা-২ আসন (সদর) থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু খুলনার উন্নয়ন হয়নি। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের উন্নয়ন ও দেশের সার্বিক উন্নয়ন তখন হয়, যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকেন। তিনি বলেন, ২০০১ সালে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতা ছাড়ার আগে পদ্মা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার সরকার পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক একটা মিথ্যা অজুহাত দিয়ে এটাকে বন্ধ করতে চেয়েছে। আমরা পিছিয়ে গেছি। এখন আবার নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে। এই পদ্মা সেতুর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার উন্নয়ন জড়িত। একই সঙ্গে পায়রা বন্দর নির্মাণের কাজ চলছে। তিনি বলেন, রামপাল তাপ বিদ্যুেকন্দ্র নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। কিন্তু আমার বিশ্বাস আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে রামপাল তাপ বিদ্যুেকন্দ্র থেকে ৬২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রিডে দেওয়া সম্ভব হবে। খানজাহান আলী বিমানবন্দর আগে স্টল বিমানবন্দর হিসেবে ছিল। প্রধানমন্ত্রী তা পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর হিসেবে নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এর জন্য জমি অধিগ্রহণের কর্মকাণ্ড চলছে। খুলনা সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ সার্বিক বিষয়ে তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, নির্বাচনের আগে মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করার সময় সিটির ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সড়ক উন্নয়ন, লিনিয়ার্ক পার্ক নির্মাণ, অ্যাসফল্ট প্লান্ট, শহীদ হাদিস পার্কের উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল খনন, সড়ক বাতির উন্নয়নসহ প্রায় এক হাজার কোটি টাকার অনেকগুলো উন্নয়ন কাজ চলমান ছিল। যার অধিকাংশরই টেন্ডারসহ কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া জেনারেল ফান্ডে ২০ কোটি টাকা রেখে এসেছিলাম। এখন শুনছি এসব উন্নয়ন কাজ সামনে এগোচ্ছে না। থমকে গেছে। কাজের গুণগত মানও খারাপ। ময়ূর নদীর যে ভাবে খনন হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। এর দুই পাড়ের সৌন্দর্য ঠিক রাখা হয়নি। লিনিয়ার্ক পার্ক নির্মাণের বরাদ্দের টাকা ফেরত গেছে।

তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, রাজনীতিতে ভালো লোকজনের বড়ই অভাব। পুরনো দিনে ছাত্রলীগ থেকে যারা রাজনীতিতে এসেছেন তাদের ত্যাগী মনোভাব ছিল। দেশপ্রেম ছিল। দেশের প্রতি ভালোবাসা ছিল। তারা মনে করত রাজনীতি হলো দেশ ও মানুষের জন্য। মানুষ ও দেশ যাতে উপকৃত হয় সেই মানসিকতা নিয়েই রাজনীতি করত। এই মন-মানসিকতার এখন অভাব দেখা দিয়েছে। এখন যারা রাজনীতিতে আসছে তারা হোল টাইমার রাজনীতি করে না। পার্ট টাইম রাজনীতি করে ওপরে ওঠার চেষ্টা করে। এর থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি। তালুকদার আবদুল খালেক বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার মল্লিকের বেড় গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৫২ সালের ১ জুন জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি তিনি তত্কালীন খুলনার মহসীনবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আঞ্চলিক শ্রমিক লীগের খুলনা জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৭৭ সালে তত্কালীন খুলনা মিউনিসিপ্যালিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে মহসীনাবাদ ইউনিয়ন থেকে কমিশনার নির্বাচিত হন এবং ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১, ৯৬, ২০০১ ও ২০১০ সালে বাগেরহাট-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৭ সালে তিনি সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হয়ে ২০০১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর