৩১ জানুয়ারি, ২০১৬ ১৪:১৩

বঙ্গবন্ধুর সেই শেখ আজিজ এখন

বাদল নূর

বঙ্গবন্ধুর সেই শেখ আজিজ এখন

প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আবদুল আজিজের রোগজর্জর শরীর। বয়স ৮৭। বয়সের আক্রমণে দুর্বল দেহ। তবু অটুট তার দেশের কল্যাণচিন্তা। একদার কর্মচঞ্চল ন্যায়নিষ্ঠ মানুষটি এখন প্রায় নিশ্চল। বিছানায় শুয়ে শুয়েই কালাতিপাত করছেন শেখ আজিজ। তিনি চোখে দেখেন না, কানেও কম শোনেন। বুকে ও কোমরে ব্যথা। চলাফেরা করতে খুবই কষ্ট। কাজের লোকদের কাঁধে ভর দিয়ে টয়লেট ও বাথরুমে যাতায়াত করেন। তিনি যে রুমে থাকেন সেখানে হিটার দিয়ে গরম করে রাখা হয়েছে। তবে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলতে পারেন।

দেশের বিভিন্ন খবরও রাখেন তিনি। শেখ আজিজ আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ছিলেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার একাধারে যোগাযোগ, কৃষি, তথ্য এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দীর্ঘদিন সুপ্রিমকোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন তিনি। স্বাধীনতা ঘোষণা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের ৯ নম্বর সেক্টরের লিয়াজোঁ অফিসার ছিলেন। গুলশানে তার বাসভবনে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাত্কারে আক্ষেপ করে শেখ আবদুল আজিজ বলেন, দীর্ঘদিন যাদের সঙ্গে রাজনীতি করেছিলেন তাদের সঙ্গে এখন আর দেখা হয় না। এমনকি বন্ধুবান্ধবও আসেন না। এক মাস আগে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাকে দেখতে তার বাসায় এসেছিলেন বলে জানান তিনি। প্রায় ছয় মাস আগে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ তাকে দেখতে যান। এ ছাড়াও প্রায় এক বছর আগে ন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান দেখতে এসেছিলেন আবদুল আজিজকে। এ ছাড়া ২০১০ সালে অসুস্থ হয়ে গুলশানের সিকদার মেডিকেলে ভর্তি থাকাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দেখতে এসে এক লাখ টাকা চিকিত্সার খরচ দেন। পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ কবে শেষ হবে জানতে চান শেখ আবদুল আজিজ। জানতে চাইলেন পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে কিনা। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু হলে দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে দেশের যে কোনো স্থান থেকে যাতায়াতে সুবিধা হবে। অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমার বাগেরহাটে ১০০ বছরের পুরনো রেললাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটা উচিত হয়নি। শেখ আজিজ স্ত্রী শওকত আরার সঙ্গে গুলশানের ৭ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাড়িতে বাস করেন। স্ত্রী শওকত আরারও স্বাস্থ্য খারাপ যাচ্ছে, তাকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। শেখ আজিজ ও শওকত আরাকে দেখভাল করেন বাড়ির কেয়ারটেকার মো. আবুল কাশেম এবং কাজের লোক আবুল কালাম, শাহজাহান ও মর্জিনা। শেখ আবদুল আজিজের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলে শেখ আশিক হাফিজ প্রকৌশলী, চাকরি করেন আমেরিকায়। বড় মেয়ে সিমিন শেখ আমেরিকার ওয়াশিংটনে প্রাইমারি শিক্ষা অফিসার এবং ছোট মেয়ে নাবিন শেখ মেঘলা ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত। শেখ আজিজের জন্ম ১৯২৯ সালে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার তেলিগাতী গ্রামে। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ও এলএলবি পাস করেন।

প্রবীণ রাজনীতিবিদ শেখ আবদুল আজিজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সতর্ক হয়ে চলাফেরা করা দরকার। বঙ্গবন্ধুকে আমি বলেছিলাম একটু সতর্ক হয়ে চলাফেরা করবেন। আমার কথা শুনে বঙ্গবন্ধু হাসলেন। তার পরে তো যা হওয়ার হলো। বর্তমান সরকারের প্রতি সন্ত্রাস-দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কল্যাণমূলক দেশ গড়তে চেয়েছিলেন, তা করে যেতে পারেননি। পঁচাত্তর সালের ১৫ আগস্ট তাকে হত্যা করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে অপশক্তিদের একটি চক্র।

শেখ আজিজ বলেন, ওই চক্রটি চার বছর ধরে কারাগারে আমাকে নিষ্ঠুর নির্যাতন করে। কারাগারে আমাকে ফাঁসির সেলে রাখা হয়। জাতীয় চার নেতার পাশের রুমে আমি ছিলাম। চার নেতাকে যখন হত্যা করা হয় তখন আমি তাদের আহাজারি শুনতে পাই। এ অপরাধের বিচার হওয়া জরুরি। তিনি বলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে দেশ ভালো চলছে। বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়ায় দেশবাসী খুশি বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে মন্ত্রীদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে। আমি মন্ত্রী থাকতে মানুষের জন্য কাজ করেছি। তখন কৃষকদের বিনামূল্যে সার, বীজ, ওষুধ, সেচ পাম্প দিয়েছি।

শেখ আবদুল আজিজ বলেন, দেশ ও জনগণের উন্নয়নে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, সচেতন নাগরিক এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়াতে হবে। শেখ হাসিনার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। হাসিনা তো স্বজন বলতে সবাইকেই হারিয়েছেন। দেশের উন্নয়নের জন্য তিনি যেভাবে আত্মত্যাগ করবেন, কাজ করবেন, অন্য কেউ তা করবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যবাহী দল, স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারীদের দল। এ দলের কাছে মানুষের অনেক প্রত্যাশা। তাই দলের নেতা-কর্মী, মন্ত্রী-এমপিদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে লালন করে দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর