১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১৩:০০

সর্বত্র বাংলা চালু হয়নি এখনো

আহমদ রফিক

সর্বত্র বাংলা চালু হয়নি এখনো

শুরুটা ১৯৪৭ সালের প্রথম দিকে, যখন মুসলিম লীগের শীর্ষ নেতারা বলতে থাকেন, হবু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। এর লিখিত প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন যে কজন বাঙালি মুসলমান বুদ্ধিজীবী দৈনিক পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখে, সাংবাদিক-লেখক আবদুল হক তাদের অন্যতম। এভাবে শুরু হয় রাষ্ট্রভাষা উপলক্ষে বাঙালি-অবাঙালির বাদ-প্রতিবাদ। পাকিস্তান হওয়ার পর ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ এই সময়ে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, আন্দোলন তীব্র হয় বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে। বায়ান্নর আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ছাত্রদের শহীদ হওয়া ভাষা আন্দোলনের চরিত্র বদলে যায়। ভাষাচেতনার বিস্তার ঘটে শুধু ছাত্রসমাজেই নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যে পাকিস্তান-চেতনার সঙ্গে ভাষাচেতনার দ্বন্দ্ব্ব শুরু হয়। একের পর এক পাকিস্তান সরকারের বাংলাবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বাঙালিরা লড়াই করেছে। যদিও এ লড়াইয়ের ভিত তৈরি করেছে ছাত্রসমাজ, কিন্তু ঘটনাপরম্পরায় তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক, পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষ। এ সমর্থনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি জোরদার হয়। এরপর ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষা রক্ষা পায়। ভাষা সংগ্রামের সময় আমার বয়স ছিল ২৩ বছর।

তখন আমরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজনৈতিক বাধাকে উপেক্ষা করে মাতৃভাষা রক্ষার জন্য আন্দোলন করেছি। ১৯৫২ সালের ২৭ এপ্রিল নতুন করে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদ গঠিত হয়। আতাউর রহমান খান আহ্বায়ক। এর ফলে রাজনৈতিক নেতারা চলে এলেন সামনের সারিতে। তারা অবশ্য কাজও করেছেন পরে। এরপর সরকার নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য বিচারপতি এলিসকে নিয়ে একটি কমিশন গঠন করে। দেখা গেল মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে আমার পাশের রুমে থাকত ব্রিগেডিয়ার আবদুল মালিক। সে-সহ আরও চার-পাঁচজনকে ডাকা হয় কমিশনের সামনে সাক্ষ্য দিতে। আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কাউকে ডাকা হয়নি। এলিস সাহেব মনগড়া প্রতিবেদনে সরকারের সাফাই গাইলেন। ইত্তেফাকসহ বেশ কিছু পত্রিকা এলিসের রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করল। এরপর ১৯৫৬ সালে এসে বাংলা রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পেল। মাতৃভাষা আন্দোলনের ছয় দশক পার হওয়ার পর আজও রক্তভেজা একুশের চেতনা কিংবা বাংলা ভাষার ব্যবহার সর্বত্র হয়নি। বাংলা ভাষার ব্যবহার যারা টিকিয়ে রাখতে চান তাহলে বায়ান্নর রক্তঝরা দিনকে স্মরণ করে, ভাষার প্রতি ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। মাতৃভাষা প্রীতির মাধ্যমে দেশপ্রেম গড়ে ওঠে। মনে রাখতে হবে, বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের সম্মান বৃদ্ধি পায়।

লেখক : কবি, ভাষা সংগ্রামী ও চিকিৎসক।


বিডি-প্রতিদিন/ ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর