হাজার বছরের বাংলা ভাষা ও কবিতা। আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার বয়স ছয় দশক পেরিয়ে গেছে। ছয় দশক আগে আমরা বুকের রক্ত দিয়ে মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি। এ এক অনন্য ইতিহাস। পৃথিবীতে এর কোনো দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত নেই। বাঙালিরা প্রাণ দিয়ে মুখের ভাষাকে কালজয়ী মহিমা দিয়েছে। বাঙালির জীবনে এ এক অপার গৌরব। আমরা সবাই এ গৌরবের উত্তরাধিকারী।
১৯৪৮ সালে শুরু হয়েছিল আমাদের ভাষা রক্ষার লড়াই। এটা ছিল সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী জোর চেষ্টা চালিয়েছিল উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার; যা রুখে দিয়েছিলেন আমাদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। ১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির যে নবজাগরণ ঘটে, আত্মপরিচয়ের যে স্বাক্ষর সে স্থাপন করে তার বয়স এখন ছয় দশক পেরিয়ে গেছে। কিন্তু আজও আমাদের এই মুখের ভাষাকে জীবনে পূর্ণাঙ্গভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি, তাকে যে বিশিষ্ট মর্যাদা দেওয়ার কথা আমরা সেই সম্মান দিতে পারিনি আমাদের মায়ের ভাষাকে। আমাদের এই মাতৃভাষা আমাদের এই মাতৃভূমির মতোই অসহায়। তাকে পূর্ণ করে তোলার, তার মুখে হাসি ফোটানোর বহু কাজ এখনো বাকি। নানা মাত্রায় নানা ভাবে বাংলা ভাষার পরিধি আমরা প্রসারিত করতে পারি, তাকে করে তুলতে পারি আরও গৌরবমণ্ডিত আরও ঐতিহ্যময়। সে কাজের জন্য গভীরতর চর্চা, অনুশীলন ও সাধনা প্রয়োজন।
রাষ্ট্রের সর্বত্র বাংলা ভাষার ব্যবহার অপরিহার্য। আমাদের ভাষার অফুরন্ত সম্ভাবনা। এই ভাষায় কবিতা লিখেছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশসহ আরও অনেক মহৎ কবি। বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ, শরত্চন্দ্র, বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর, মানিকের হাতে সমৃদ্ধ ও বিকশিত হয়েছে বাংলা গদ্য। হয়ে উঠেছে অশেষ শোভামণ্ডিত অনবদ্য। পরবর্তীকালে আরও অনেক কবি ও লেখকের হাতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ হয়েছে। বিশ্বের যে কোনো সাহিত্যের সঙ্গে তুলনায় বাংলা সাহিত্য সমমানের। বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠতম রচনাসমূহ বহির্বিশ্বে প্রচার করা প্রয়োজন। এ কাজটি সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে হতে পারে। বাংলা এখন বিশ্বে বহু দেশে আদৃত। কোনো কোনো দেশের জাতীয় ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষাকে নিজেদের ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়। জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবেও বাংলাকে গ্রহণ করার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভাষাপ্রেমের মাধ্যমে দেশপ্রেম নিশ্চিত হয়।লেখক : কবি।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা