১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১১:৫৫

মাতৃভাষার সঠিক ব্যবহারে আমরা যত্নবান নই

বিশ্বজিৎ ঘোষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাতৃভাষার সঠিক ব্যবহারে আমরা যত্নবান নই
বাংলা চমৎকার ও শ্রুতিমধুর ভাষা। পৃথিবীব্যাপী বহু মানুষ বাংলায় কথা বলে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রক্তের বিনিময়ে দেশে বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায়। সেদিন শহীদ হয়েছিল সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর প্রমুখ। রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য তাদের ত্যাগের কথা সবাই জানে। এখন সেদিনই বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়। তবে বাংলাদেশে মাতৃভাষার সঠিক ব্যবহারে আমরা যত্নবান নই। এ ব্যাপারে আন্তরিকতার বড় অভাব। রাষ্ট্রের নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভাষার শুদ্ধ ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা কম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অশুদ্ধ উচ্চারণে ভুল ইংরেজি বলেন। কিন্তু শ্রেণিকক্ষে তিনি মাতৃভাষায় কথা বলতে পছন্দ করেন না। ছাত্ররা পরীক্ষার খাতায় বাংলায় লিখলে নম্বর কম দেন। সর্বত্রই প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যবহার উপেক্ষিত। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই আমরা ভাষাপ্রেমে হাবুডুবু খাই। দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রমিত বাংলা ভাষার চেয়ে আঞ্চলিক ভাষা গুরুত্ব পায়। শিশুরা ভুল শব্দ, ভুল উচ্চারণ শেখে। অন্যদিকে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যপুস্তক অধিকাংশ ইংরেজি ভাষায় লেখা। বাংলা একাডেমি বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ্য বাংলা বই প্রকাশ করেছিল। তাদের এই উদ্যোগ আরও কার্যকরী করা জরুরি। ভাষার শুদ্ধতা ও বিকৃত ব্যবহার রোধ করতে রাষ্ট্র, সুশীল সমাজ, শিক্ষক, সাংবাদিক সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। কেবল বাংলা ভাষা নয়, দেশে যেসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বসবাস করে তাদের ভাষা নিয়েও গবেষণা হওয়া জরুরি। আমাদের দেশে প্রায় ৪৭টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে মাত্র ৪-৫টির লিখিত বর্ণমালা রয়েছে। তাদের শিশুরা মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিতে পারে না। তারা প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে এক ধরনের বৈষম্যের শিকার। তাদের পড়তে হয় বাংলা ভাষায়। সুতরাং নৃগোষ্ঠীর শিশুরা মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারে না। ভাষার বিকৃতি রোধে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও রাষ্ট্রকে দায়িত্বশীল হতে হবে। এ ব্যাপারে এখনই উদ্যোগ নিলে বাংলা ভাষার বিকৃতি রোধ সম্ভব হবে। 
লেখক : অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর