২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১০:৫৩

দরকার পারস্পরিক সংবেদনশীলতা

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

দরকার পারস্পরিক সংবেদনশীলতা

কথা হচ্ছিল ছোটগল্প নিয়ে। একসময় ছোটগল্প খুব লেখা হতো। বড় লেখকরা সবাই লিখতেন। পাঠকও ছিল প্রচুর। ওই ধারাটা এখন ক্ষীণপ্রায় হয়ে এসেছে। এর কারণ কী? দুটি কারণ বলা সহজ। একটি হচ্ছে, ছোটগল্পের জায়গা এখন প্রায় একচেটিয়াভাবেই দখল করে নিয়েছে ছোট উপন্যাস; অনেক ক্ষেত্রেই যেগুলো ছোটগল্পই বটে, কিছুটা প্রলম্ব্বিত আকারে। দ্বিতীয় কারণ, ছোটগল্প লেখা সহজ মনে হলেও আসলে সহজ নয়। কবিতা লেখার ক্ষেত্রেও অবশ্য ব্যাপারটা সত্য; দেখতে সহজ মনে হয় ঠিকই, কিন্তু ভালো কবিতা রচনা করা সত্যিকার অর্থেই কঠিন, যদিও কবিযশপ্রার্থীরা তা ভাবেন না, যে জন্য কবিতার এত ছড়াছড়ি দেখতে পাই। তবে কোনোমতে একটি কবিতা খাড়া করার তুলনায় একটি ছোটগল্প লেখা অনেক বেশি কষ্টসাধ্য। কেননা ছোটগল্পে কেবল গল্প থাকলে পাঠক সন্তুষ্ট হবে না, গল্পের ভিতর সে জীবনের খবর চাইবে, আশা করবে দর্শকের আভাস, প্রত্যাশা থাকবে অল্পকথায় বড় ঘটনাকে দেখতে পাওয়ার এবং গল্পে অন্তে একটি চমকের। এত সব জিনিসকে একত্র করা সোজা কথা নয়।

ছোটগল্পের এই ক্ষীণ প্রবাহের তাৎপর্যটা কিন্তু কেবল ওই সাহিত্যের একটি বিশেষ রূপকল্পের ক্ষেত্রেই সীমিত নয়। এর ভিতরে আরও একটা বড় খবরও রয়েছে বৈকি। সেটা হলো, বড় এখন ছোট হয়ে যাচ্ছে এবং ছোটর পক্ষে বড় হওয়াটা কঠিন হয়ে পড়েছে। উপন্যাস ছোট হয়ে এসেছে, সে তার বিস্তৃতি হারিয়ে রূপ নিতে চাইছে ছোটগল্পের; আর অন্যদিকে ছোটগল্পের পক্ষে বড় একটা স্রোতধারা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না, সেদিক থেকে সে ছোটই থেকে যাচ্ছে।

আমরা এ রকম একটা অবস্থার মধ্যে এসে পড়েছি; যেখানে অনেক বড় বড় জিনিস চতুষ্পার্শ্বে দেখতে হয়, সহ্য করতেও হয়। কিন্তু তাদের ভিতরে অন্তর্বস্তুর বড়ই অভাব। তারা বড় কিন্তু মোটেই মহত্ নয়। বড় বড় কথাও শোনা যাবে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সেসব কথা অন্তঃসারশূন্য। জীবনকে সহজভাবে নাও, অল্পে সন্তুষ্ট থাক। এ শিক্ষাটা আমাদের সংস্কৃতির অভ্যন্তরে রয়েছে। অন্য জাতির তুলনায় আমরা পিছিয়ে পড়েছি এবং এখনো বেশ পেছনেই রয়েছি। তবে অল্প কিছু লোক বুদ্ধি খাটিয়ে এগিয়ে গেছে এবং অবশিষ্টরা যাতে এগোতে না পারে তার আয়োজন সম্পন্ন করে রেখেছে। তাদের এই উন্নতি যে পরিশ্রমের কারণে ঘটেছে তা মোটেই নয়, সম্ভব হয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে। সেটি হচ্ছে দেশি-বিদেশি কর্তাব্যক্তিদের আনুকূল্যে। এবং ওই কর্তাব্যক্তিরা যে বড় হয়েছেন, সেটাও ঘটেছে বিদেশিদের সাহায্য ও সহযোগিতায় এবং তাদের দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করার সুযোগ বৃদ্ধি করে দেওয়ার বিনিময়ে। অথচ সাধারণ মানুষ আছে। ওই সব বৃহত্ আয়তন ও আকৃতির চাপে এবং দাপটে এই মানুষগুলো ছোট হয়ে গেছে। তাদের জীবনের ছোটগল্প সাহিত্যে উঠে আসবে এমনটা ঘটেছে, কিন্তু সেই আসাটা ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে পড়েছে। ছোট এবং বড়র ব্যবধান সমাজে যেমন বেড়েছে, সাহিত্যেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

সাধারণ মানুষ নিত্যদিন লড়াই করে, কিন্তু তারা সাহিত্যে সাতচল্লিশের আগে-পরে যেমন এসেছে, একাত্তরের আগে-পরে তেমনভাবে আসেনি। এ ক্ষেত্রে বড় কারণ সাধারণ মানুষের জীবন থেকে লেখকদের শ্রেণীগত অবস্থানের ক্রমবর্ধমান দূরত্ব। তদুপরি তারা যে মধ্যবিত্ত পাঠকের জন্য লেখেন সেই পাঠক যে ধরনের কাহিনী শুনতে চান তা শীর্ণকায় উপন্যাসে যথোপযুক্ত রূপে পাওয়া যায় না; মধ্যবিত্ত জীবনের প্রাপ্য উপাদান ছোটগল্পের জন্য পর্যাপ্ত নয়, ছোটগল্পের জন্য জীবজীবনের গভীরে যাওয়া আবশ্যক। সেখানে মধ্যবিত্ত অপাঙেক্তয় নয় ঠিকই, কিন্তু মধ্যবিত্তের জীবনে যা পাওয়া যায় তা গভীরভাবে নাড়া দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত নয় এবং এর বিপরীতে ছোটগল্প যতই ছোট হোক তার সার্থকতা নির্ভর করে পাঠককে আনন্দ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা হলেও বিচলিত করার মধ্যেই।

বিচলিত করা এবং হওয়ার ব্যাপারটা উপেক্ষা করার বিষয় নয়। সাহিত্যের কাজ ওই দুটোই। আনন্দ দেওয়া এবং বিচলিত করা। আমাদের এখন এমন অবস্থা যে, আনন্দ অবশ্যই চাই, আনন্দ লাভের জন্য সর্বদাই ব্যস্ত থাকি, কিন্তু বিচলিত হতে মোটেই সম্মত হই না। ছোটগল্পের জনপ্রিয়তা হ্রাসের সেটা একটা কারণ হতে পারে। পয়সা খরচ করে দুশ্চিন্তা কিনতে যাব কেন? তার চেয়ে বিনোদন যেখানে পাওয়া যায়, সেদিকেই হস্ত প্রসারণকে বিচক্ষণতার প্রমাণ বলে ভাবাটাই সঙ্গত। সমস্যাটা কেবল ছোটগল্পের হবে কেন, এটা তো আমাদের জীবনেরই ব্যাপার। এত সব ঘটনা ঘটছে চতুর্দিকে, অনেকগুলোই ভয়ঙ্কর, কিন্তু কোনোটাই আমাদের বিচলিত করতে পারে না। আমরা ভীষণ কঠিন ও নিতান্তই পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। নিজেকে নিয়েই এত অধিক দুশ্চিন্তা যে, তার বাইরে যে তাকাব, সংবেদনশীল হব অন্যের দুঃখে, চিন্তিত হব সমষ্টিগত সমস্যা নিয়ে, এমনটা ঘটতে চায় না। আমাদের সমষ্টিগত ভবিষ্যত্ সম্ব্বন্ধে হতাশ হওয়ার একটি বড় কারণ হচ্ছে বিচলিত না হওয়া।

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য, আমরা শিক্ষিত বাঙালিরা সাহিত্যকে আনন্দলাভের প্রধান উত্স হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত ছিলাম, এখন হয়তো নই। কিন্তু ওই যে একসময় ছিলাম, সেটা উপকার যেমন করেছে, ক্ষতিও সেই তুলনায় কম করেনি। আর এখন তো এমন দশা যে, আনন্দলাভের অন্য সব ক্ষেত্রেই প্রায় বিপর্যস্ত, নির্ভরশীলতা মূলত টেলিভিশনের ওপরই। সাহিত্যে অতিরিক্ত উত্সাহ আমাদের ভাববাদী হতে উত্সাহিত করেছে। আমাদের চিন্তাগুলোর পক্ষে বৈজ্ঞানিক হওয়ার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক ধরনের মানসিক আলস্যকেও প্রশ্রয় দিয়েছে। ফলে জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় যে উত্সাহিত হয়ে পড়ব এমন আগ্রহটা ভিতর থেকে অনুপ্রেরণা পায়নি। উঁচু মাপের মানুষ কাউকে কাউকে পাওয়া গেছে, কিন্তু সংস্কৃতির সাধারণ মানটি উন্নত হয়নি। সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াটাও ব্যাহত হয়ে পড়েছে। রবীন্দ্রনাথ তার জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে, ১৯৪১ সালে বিশ্বযুদ্ধের সেই ভয়ঙ্কর তাণ্ডবের অবস্থা এবং ভারতবর্ষের দুর্দশা দেখে ‘সভ্যতার সংকট’ নামে অত্যন্ত মূল্যবান যে প্রবন্ধটি লিখেছিলেন তাতে শেকসপিয়রের নাটকের সঙ্গে ‘মেকলের ভাষাপ্রবাহের তরঙ্গভঙ্গের’ উল্লেখ আছে। সেকালে মেকলের রচনাও মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাঙালির কাছে মূল্যবান বিবেচিত হতো, অথচ মেকলে ছিলেন ঘোরতর ভারতবিদ্বেষী, বিশেষ করে বাঙালিদের ওপর তার রাগটা ছিল প্রবল। এই যে মেকলের রচনাকেও আদর্শজ্ঞান করা, এটা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হয়নি। ওদিকে কোনো জনগোষ্ঠীর জন্য সাহিত্য যে প্রধান নির্ভরের জায়গা হতে পারে না, এই সত্যটা যখন উন্মোচিত হয়ে পড়ল তখন বুঝতে পারলাম যে, আমরা অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছি। তড়িঘড়ি বিকল্প গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি।

এমনিতেই বিদ্যার ওপর আমাদের খুব বেশি নির্ভর করতে হয়েছে। আমরা অর্থাত্ মধ্যবিত্তরা অন্য কোনো কিছুর ওপর ভর করার মতো ভরসা পাইনি। কৃষি থেকে দূরত্বে এবং শিল্প থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন থাকার দরুন একসময় বিদ্যাকে খাটিয়েই যা কিছু সম্ভব উপার্জনের আশা করেছে এই মধ্যবিত্ত। পড়ালেখাটাকে উন্নতির তো অবশ্যই, টিকে থাকার অবলম্ব্বন হিসেবেও দেখা হয়েছে। ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা অতটা সাফল্য কিছুতেই অর্জন করতে পারতেন না, যদি না বিদ্যাসাগর হতেন, বিদ্যা না থাকলে তিনি হারিয়ে যেতেন। তিনি যে করুণাসাগর বলে সম্ভাবিত হয়েছেন, তাও অর্জন সম্ভব হতো না। বিদ্যাসাগর অসামান্য মানুষ ছিলেন। তবে এমনকি তার ক্ষেত্রেও কেবল বিদ্যায় যে কুলাবে, এটা পরিষ্কারভাবে বোঝা গিয়েছিল। তিনি কেবল বিদ্বান ছিলেন না, তার বুদ্ধি-বিবেচনাও অত্যন্ত প্রখর ছিল। বিদ্যাসাগর পাঠ্যপুস্তক রচনা করেছেন এবং বইয়ের প্রকাশনা ও বিক্রির প্রতিষ্ঠানও খুলেছিলেন, সেই কালে ব্রাহ্মণরা যখন বৈশ্যদের ঘৃণাই করত। বুর্জোয়া মনোভাবাপন্ন ছিলেন শক্ত শিরদাঁড়ার এই মানুষটি। শুধু যদি পণ্ডিত হতেন তাহলে দরিদ্রই থেকে যেতেন; সমাজের উপকার দূরের কথা, নিজের উপকার করতেই হিমশিম খেতেন। বুদ্ধি-বিবেচনা জিনিসটা অবশ্য খারাপ কাজেও ব্যবহূত হতে পারে। ঝোপ বুঝে কোপ মারার কাজটিকেও ওই পর্যায়ে ফেলা চলে। বিদ্যাসাগর যে তা করেননি সেটার উল্লেখ নিষ্প্রয়োজন। বুদ্ধি-বিবেচনার চেয়ে বিদ্যাবুদ্ধিই বোধ করি তার ক্ষেত্রে অধিক পরিমাণে কাজ করেছে। নিরঙ্কুশ বিদ্যায় কুলায় না, বুদ্ধিও থাকতে হয়। বাণীটি এ রকমই।

এখন অবশ্য যুগ বদলেছে। কেউ বিদ্যাদিগগজ হলে সেকালে লোকে তাকে ঠাট্টাই করত; একালে ঠাট্টাও করে না, কেননা ওই রকমের মানুষেরা বিবেচনার ভিতরেই আসে না। এখন বিদ্যাবুদ্ধিও সাফল্যের জন্য অপর্যাপ্ত মূলধন। বিশেষ করে একাত্তরে স্বাধীন হওয়ার পর থেকে কিছু লোকের ভিতর বড় হওয়ার সুযোগ এমনই উন্মুক্ত এবং আকাঙ্ক্ষা এতটাই উদীপ্ত হয়ে উঠল যে, বিদ্যাবুদ্ধি তো নয়ই, বুদ্ধি-বিবেচনারও আর তেমন কার্যকারিতা রইল না। সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হয়ে পড়ল প্রতারণা ও লুণ্ঠন। বাংলাদেশ জায়গাটা খুবই ছোট, এর সম্পদ সীমিত, জনসংখ্যা অত্যধিক। এ রকম পরিস্থিতিতে বড় হওয়া মানেই অসংখ্য মানুষকে অত্যন্ত নির্মমভাবে ছোট করা। সেটাই ঘটেছে এবং আগামীতে আরও প্রবলরূপে ঘটতে থাকবে বলে আশঙ্কা। ওই বড়রা ছোটই আসলে, তবে তাদের দাপট বিকট। অধিকাংশ মানুষই পরিশ্রম করে। কঠিন পরিশ্রম। কিন্তু অবস্থানের দিক থেকে তারা বড় হতে পারে না। তারা বড় স্বপ্ন দেখবে, এমন সাহস রাখে না। আশাগুলো খুবই ছোট ছোট। দুঃখই প্রলম্ব্বিত, সুখ অত্যন্ত সীমিত। তারা ক্রমাগত ভূমিহীন ও বাস্তুভিটাহীন হয়ে পড়ছে। আসলে যে যত পরিশ্রম করে সে তত দরিদ্র হয়, এমনটাই দাঁড়াচ্ছে। ঘুরিয়ে বললে অবশ্য বলা যেতে পারে যে, দরিদ্ররাই পরিশ্রম করে, ধনীদের পরিশ্রম শুধু ঘুরে বেড়ানো এবং আত্মসুখ বৃদ্ধি।

ছোটগল্প না হোক, ছোট ছোট গল্পগুলো তো রয়েছে। সেই গল্পে প্রতিরোধের খবরও আছে বৈকি। স্থানীয়ভাবে প্রতিরোধ হচ্ছে। আগেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে। রুখে দাঁড়ানো এই মানুষগুলো বড় প্রতিরোধেও অংশ নেয়। যেমন— রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে, ঊনসত্তরের অভ্যুত্থানে, একাত্তরের যুদ্ধে। কিন্তু অন্য সময়ে স্থানীয় প্রতিরোধ স্থানীয়ই থাকে, মূল ধারার সঙ্গে তাকে যুক্ত করা সম্ভব হয় না। বিপদটা কিন্তু সেখানেই। একে বিপদই বলতে হয়। কেননা, স্থানীয় প্রতিরোধে মুক্তি আসে না। আবার মুক্তি যে আসেনি তার প্রমাণও পাওয়া যায় স্থানীয় মানুষের পক্ষে প্রতিরোধ যে দরকার হয়ে পড়ে সেই সত্যটি থেকেই।

মূল প্রয়োজনটা তাই ছোটদের বিক্ষোভকে মূল ধারায় নিয়ে যাওয়া। সেটাই হওয়া উচিত মুখ্য রাজনীতি। বিশেষ করে তাদের জন্য যারা সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করবেন। ওই কাজটা সঠিকভাবে করা হয়নি। কেন্দ্রীয় রাজনীতি স্থানীয় অভাব-অভিযোগ, ক্ষোভ-বিক্ষোভকে নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারেনি। বড়রা রয়ে গেছে বড়দের জায়গায়ই, কিন্তু তারা সেখানে থাকবে না ছোটরা যদি সংগঠিত হতে পারে। সেই সংগঠনই হবে তখন রাজনীতির মুখ্য প্রবাহ, বড়রা তখন আর নিজেদের জায়গায় টিকে থাকতে পারবে না, তাদের পতন ঘটবে। কাজটা কষ্টসাধ্য। যেমন ছোটগল্প লেখা কঠিন, কবিতা লেখার তুলনায়। আমরা কবিতার ভাষায়ই যত আওয়াজ তুলি, আসল কাজ এগোবে না, যদি না মানুষের দুঃখ-কষ্টের খোঁজখবর করি, অর্থাত্ ছোটগল্পের চর্চা করি বড় গল্পের দিকে এগোনোর জন্য। সত্যিকারের বড় রয়েছে ছোটর ভিতরেই। ভাববাদী কথাবার্তায় কুলাবে না, বিদ্যাবুদ্ধি খাটিয়ে কঠিন পরিশ্রম আবশ্যক হবে। মধ্যবিত্তের শ্রেণি সীমানাটাকে ভাঙতেই হবে মুক্তির প্রয়োজনে। এটা ছোটগল্পের ক্ষেত্রে যেমন সত্য, তেমনি সত্য সমষ্টিগত জীবনের বেলায়ও। বিচলিত না হয়ে উপায় নেই, অগ্রসর হওয়ার প্রয়োজনে। এবং যথার্থ আনন্দলাভের জন্যও বটে। পারস্পরিক সংবেদনশীলতা আজ বড়ই দরকার, সে সংবেদনশীলতা গড়ে উঠবে সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনের পরিপূরক সাংস্কৃতিক তৎপরতার ভিতর দিয়ে; সংস্কৃতিতে সাহিত্য একটা বড় জায়গা পাবে নিশ্চয়ই। কিন্তু তাকে প্রধান করাটা ভুল হবে, একমাত্র করার তো প্রশ্নই ওঠে না।

লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর