১৬ মার্চ, ২০১৬ ১৩:৩৪

রদবদল ও বদবদল

হানিফ সংকেত

রদবদল ও বদবদল

এই তুমি-নেই তুমি-সেই তুমি মানে বদলে গেছে।

বাক্যটি শুনলে মনে হতে পারে এটি কোনো প্রেমিক তার প্রেমিকাকে কিংবা প্রেমিকা তার প্রেমিককে বলছে। কিন্তু বদলে যাওয়ার বিষয়টি শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, আরও অনেক ক্ষেত্রেই হয়। মূল্যবোধের অভাবে, মানুষের স্বভাবে অনেক কিছুর প্রভাব পড়ে। তাই নিয়ম-নীতি ভুলে, বাঁকা পথে চলে মানুষগুলোই বদলে যায়। সময় এবং অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে বদলে যায় অনেকের ব্যবহারও। আহারে-বিহারে, বসনে-ভূষণে, চলনে-বলনে, ভঙ্গিতে-সংগীতেও বদলে যায় অনেকে। এই মানুষ আর সেই মানুষ থাকে না। তবে প্রেম-ভালোবাসার ক্ষেত্রে বদলে যাওয়া, ভুলে যাওয়া, দুঃখ দেওয়া, দুঃখ পাওয়ার ঘটনা অহরহই ঘটে থাকে।

এই তো কদিন আগে ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে গেল ভালোবাসা দিবস। ভালোবাসার মানুষরা ‘হাতে হাতে ধরি ধরি’, পরম নির্ভরতায় হেঁটে বেড়িয়েছে সারা দিন। আগের দিন বসন্ত পরদিন ভালোবাসা দুটোতেই ছিল উষ্ণ প্রেমের অনুভূতি। ভিন্ন এক ভালোলাগা আমেজ। মানুষের মধ্যে এই ভালোবাসা যাতে সবসময় থাকে সে জন্য কেউ আবার ‘ভালোবাসা’বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনেরও দাবি জানিয়েছেন। যুক্তি হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ‘সুখ’বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করে সেখানে মন্ত্রীও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আবার এই ভালোবাসা দিবসের আন্তর্জাতিকতা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। অনেক টেলিভিশন অনুষ্ঠান এবং পত্রিকায় ভালোবাসা দিবসকে বলা হয়েছে ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’। এ দেশে ভালোবাসা দিবসের প্রবর্তক বিশিষ্ট লেখক এবং সাংবাদিক শফিক রেহমানের মতে, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বলতে কিছু নেই। কিন্তু আমাদের এখানে ভালোবাসা দিবস বদলে হয়ে গেছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বিদেশে এই দিন সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে পালিত হলেও তিনি এই দিনটিকে শুধু ‘ভালোবাসার দিন’ নাম দিয়েছেন এবং সেটা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রী নয় ভাই-বোন, বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, পশু-পাখি, প্রকৃতি সব কিছুকেই ভালোবাসা। অর্থাত্ ভালোবাসার পরিধিটাকে আরও বিস্তৃত করা। কিন্তু ভালোবাসা দিবসকে ব্যবহার করে আমাদের এখানে মাঝে মাঝে এমন সব কর্মকাণ্ড করা হয়, যা নিয়ে আলোচনা হয়, সমালোচনাও হয়।

যেমন এবারের ভালোবাসা দিবসের পরদিন সকালে হাঁটার সময় আমার এক সাংবাদিক বন্ধু হঠাত্ আমাকে এক অদ্ভুত প্রশ্ন করে বসল, যার অর্থ— আমি ঢাকাকে ভালোবাসি কিনা?

আমি তার এই প্রশ্ন শুনে একটু হোঁচট খেলাম, বিস্মিতও হলাম। বললাম এটা আবার কেমন প্রশ্ন হলো?

বন্ধুটি বলল, আমিও তাই জানি। এটা কোনো প্রশ্ন হতে পারে না। মা-বাবা, ভাই-বোন, দেশ এবং নিজের দেশের রাজধানীকে সবাই ভালোবাসব এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এবার ভালোবাসা দিবসে দেখলাম ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ঢাকাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার প্রচারণা করতে গিয়ে ঢাকাকে ভালোবাসার গান শোনালেন।

বললাম, তাতে সমস্যা কী? ওটা মানুষকে সচেতন করার জন্য করা হয়েছে।

বন্ধুর প্রশ্ন— ওখানে যে দর্শকরা ছিল তারা কি অসচেতন ছিল? আর গান গেয়ে বা গান শুনে কেউ কি ঢাকাকে পরিষ্কার করেছে?

আমাকে চুপ থাকতে দেখে বন্ধুটি বলল, ওই দিন ওই অনুষ্ঠানটি করে বরং ঢাকাকে পরিষ্কার করার নামে ওই স্থানটি অপরিষ্কার করা হয়েছে। রাস্তা আটকে যানজট সৃষ্টি করা হয়েছে। ভালোবাসা দিবসে তরুণ-তরুণীদের আনন্দকে মাটি করা হয়েছে।

বললাম, সব কিছুকে নেগেটিভভাবে দেখা ঠিক নয়।

বন্ধুটি রেগে বলল, পজিটিভ দেখেই বা লাভ কী? সেদিন একটি সুন্দর অনুষ্ঠান হয়েছে মেনে নিলাম। সুন্দর সুন্দর কথা হয়েছে শুনলাম; কিন্তু অনুষ্ঠানের আসল উদ্দেশ্য অর্থাৎ পরিষ্কার হয়েছে কিনা সেটাই প্রশ্ন। আর যদি উদ্দেশ্য থাকে প্রচার-প্রচারণা তাহলে ভিন্ন কথা। নগরবাসী অনেক কথা শুনেছে, তারা কাজ দেখতে চায়। কারণ কাজই কথা বলবে। এসব আনুষ্ঠানিকতা বাদ দিয়ে বরং সেদিন সবাই মিলে যদি শাহবাগ থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত রাস্তাটি পরিষ্কার করতেন তাহলে অন্তত ওই এলাকাটি ঝকঝকে হয়ে যেত। মানুষের দুর্ভোগও হতো না এবং সিটি করপোরেশনের এ উদ্যোগকে সবাই প্রশংসা করত।

আমার বন্ধুটির সঙ্গে আর একজন সাংবাদিক ছিলেন। তিনি প্রতিবাদ জানালেন, এটা কী রকম কথা হলো— সম্মানিত লোকেরা ঝাড়ু নিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করবেন নাকি?

তার কথা শুনে বন্ধুটি আরও রেগে গেল,—

পত্রপত্রিকায় অনেকেরই ঝাড়ু হাতে রাস্তা পরিষ্কার করার ছবি দেখি। ঝাড়ু হাতে ছবি তুলতে পারলে সবার সঙ্গে কাজ করতে অসুবিধা কোথায়? তারা তো আর প্রতিদিন এ কাজটি করছেন না।

আপনিই তো দেখিয়েছেন, (আমাকে উদ্দেশ করে বলল)— ভূরুঙ্গামারী উপজেলার চেয়ারম্যান শুধু রাস্তা নয়, নিজ হাতে ড্রেনও পরিষ্কার করছেন। লালমোহনের একজন চিকিত্সক নিজ হাতে হাসপাতালের টয়লেট পরিষ্কার করছেন। মানুষকে উজ্জীবিত করতে এসব করা তো দোষের কিছু নয়। সেদিন তো দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এই কর্মসূচিকে সমর্থন করে রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ ভবন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছেন। রাজউক চেয়ারম্যান বলেছেন, আগে নিজের ঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। তাই তারা সেই উদ্যোগ নিয়েছেন। তেমনি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাড়ি-ঘর রং করা এবং পরিষ্কার করার বিষয়ে সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন যে উদ্যোগ নিয়েছে সবাই তার প্রশংসা করছেন।

আবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে তেজগাঁওয়ে ট্রাক ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে এলাকাটি যানজটমুক্ত করেছেন, যার সুফল এখন মানুষ পাচ্ছে। গাবতলী হয়ে আমিনবাজার ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি সরিয়ে ওই এলাকাটিও যানজটমুক্ত করেছেন। আগে ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করার আগে যারা গাবতলীর যানজট নিয়ে চিন্তিত থাকতেন তারা এখন চিন্তামুক্ত। আসলে সব কিছুর জন্যই প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা এবং এর সঠিক বাস্তবায়ন। ভালো কাজের প্রশংসা তো সবাই করে।

আমি সাংবাদিক বন্ধুকে থামাতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু বন্ধু আমার বলেই চলেছে, আমাদের সমস্যা কী জানেন? কাজের আগে প্রচার। আপনিই বলেন, ওই দিনের অনুষ্ঠানে উদ্দীপ্ত হয়ে কে কোন রাস্তাটি পরিষ্কার করেছে? যা হচ্ছে সবই রুটিনওয়ার্ক। অথচ টেলিভিশনে আমরা প্রায়ই দেখি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছেলেমেয়েরা নিজেদের উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকা পরিষ্কার করছে। গাছ লাগাচ্ছে। গাছের পরিচর্যা করছে। মানুষের ছাদে বাগান করতে সহযোগিতা করছে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একদল কৃষকের সন্তান তো রীতিমতো কৃষিবিপ্লব শুরু করে দিয়েছে। তাদের ছাদ বাগান প্রকল্প এবং নগর কৃষির ধারণা তো অসাধারণ। গ্রিন সেভারস নামের এই প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে ঢাকা শহরের অনেক বাড়ির ছাদকে সবুজ করে দিয়েছে। এমনি উদ্যোগী তরুণরা এগিয়ে এলে ঢাকা শহর সবুজ হতে আর দেরি নেই। এসব তরুণের বড় গুণ হচ্ছে— এরা প্রচারকাঙাল নয়। প্রচার-প্রচারণার পেছনে সময় নষ্ট না করে কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। অনেকক্ষণ বলার পর বন্ধু থামল।

তার মনের জ্বালা আমি বুঝতে পারলাম। আসলে কে কোন কাজ কী কারণে করে তা সবাই বোঝেন। কবিগুরুও বলেছেন, ‘নামে মানুষকে বড় করে না, মানুষই নামকে জাঁকাইয়া তোলে’। কিছুদিন আগে আমি ভারত গিয়েছিলাম। সেখানে বেশ কটি রাস্তার মোড়ে একটি বড় বিলবোর্ড আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যেখানে লেখা ছিল—

‘কাজে বড়-তাই নামেও বড়’।

যতদূর মনে পড়ে এটি একটি প্রতিষ্ঠানের স্লোগান। বোঝানো হয়েছে কাজে বড় বলেই প্রতিষ্ঠানটির এত সুনাম। অর্থাত্ কাজে বড় হলেই কেউ নামি হয়, দামি হয়। কাজ না করে প্রচার-প্রচারণায় সেটা সম্ভব নয়। বরং তাতে কেউ হাসে, কেউ ক্ষুব্ধ হয়।

আমি বদলে যাওয়ার যে বিষয় নিয়ে লিখতে চেষ্টা করছি তা শুধু ‘ভালোবাসার’ বদলে যাওয়া নয়। আগেই বলেছি, বদলে যাওয়ার এই জগতে অনেক কিছুই বদলায়। কিছু বলে বদলায়, কিছু না বলে বদলায়। শুধু মানুষই নয়, মাছ-মাংস, শাক-সবজি, ফলমূল সব কিছুই বদলে যাচ্ছে। আগে শীতকালীন শাক-সবজি, ফলমূল শীতকালেই পাওয়া যেত। এখন এসব শাক-সবজি সব ঋতুতেই পাওয়া যায়। আবার এসব ফল বা সবজি ঘরে এনে রেখে দিলে পচন ধরবে না। কারণ সে বদলে যায় কেমিক্যালের ছোঁয়ায়। তাই ক্রেতার বিশ্বাস আনার জন্য দোকানের সামনে বড় বড় হরফে লেখা থাকে, ‘ভেজালমুক্ত আম’, ‘ফরমালিনমুক্ত ফল’ কিংবা ‘ফরমালিনমুক্ত বাজার’ ইত্যাদি ইত্যাদি।

কথায় আছে, ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর’। আজকাল এই বিশ্বাসের ধরনও বদলে গেছে। আগে কেউ কিছু বললে সবাই বিশ্বাস করত। এখন চিন্তা করতে হয়, যা বলছে আসলেই তা বিশ্বাসযোগ্য কিনা? কারণ কথায়ও ভেজাল আছে। যে ভেজাল ক্ষেত্রবিশেষ ফরমালিনের চেয়েও ক্ষতিকর। এসব ভেজালের কারণে হারানো বিশ্বাস ফেরানো খুব কঠিন। আমরা নির্ভেজাল খেতে চাই, নির্ভেজাল পেতে চাই, নির্ভেজাল রাখতে চাই, নির্ভেজাল থাকতে চাই। সে জন্য সংগ্রামের শেষ নেই। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কখনো টন টন জিনিস নদীতে ফেলা হয় নইলে রাস্তায় ফেলে চাকায় পেষা হয়। শুধু ফলমূল বা শাক-সবজিই নয়, হোটেলের রান্নাঘরে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, টেপ থেকে সরাসরি বোতলে পানি ভরা, ভেজাল ওষুধের কারখানা এসব শুধু অমানবিকই নয়, দণ্ডনীয় অপরাধ। এসব ক্ষেত্রে ধরা পড়লে দণ্ড হয়, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা স্বল্প অঙ্কের জরিমানানির্ভর। এ যেন গুরু পাপে লঘু দণ্ড। যারা এসব অপকর্ম করে তাদের জন্য বছরে দু-এক বার এ ধরনের জরিমানা দেওয়াটা কষ্টকর নয়। কারণ এদের আয় অনেক। যেহেতু এসব অপরাধের সঙ্গে মৃত্যুঝুঁকি বা পঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই এ-জাতীয় অপরাধের দণ্ডও সেই মানদণ্ডে হওয়া উচিত। লঘুদণ্ডের কারণে এসব ভেজালকারী ধরাকে সরা জ্ঞান করে। এদের চ্যানেল নাকি অনেক ওপরে। যত ওপরেই থাক, চ্যানেলের গোড়া ধরে টান দিতে হবে। নইলে জনতা জেগে যাবে। আর জনতা জাগলে ধরাকে সরা জ্ঞান করা এসব অরাজকের জনতার ভরা মজলিসে শাস্তি পেতে হবে। সব কিছু নিয়েই যেভাবে ব্যবসা শুরু হয়েছে তাতে এরা ক্রমে ক্রমে বিক্রমে-পরাক্রমে অতিক্রম করে যাচ্ছে সব বাধা। রাজনীতি, পরিচিতি, সমাজনীতি, সুস্থিতি, অস্থিতি, মূল্যস্ফীতি, মুদ্রাস্ফীতি, এমনকি মানুষের ভয়-ভীতিও এখন ব্যবসার উপকরণ। তবে অবাধ তথ্যপ্রবাহের এই যুগে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হচ্ছে আত্মগীতি অর্থাত্ যারা নিজের প্রচার নিজেরাই করেন। এদের কাছে কাজের চেয়ে প্রচারের গুরুত্ব বেশি। ইদানীং আবার প্রচার-প্রচারণায় বিদেশপ্রীতি লক্ষণীয়। দেশীয় বিজ্ঞাপনে বিদেশি মডেল। দেশীয় ছবিতে বিদেশি শিল্পী। দেশীয় বিজ্ঞাপন বিদেশে প্রচার। দেশীয় অনুষ্ঠান বিদেশে নির্মাণ। বিদেশি নির্মাতা। সবই যেন বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো ঢুকে পড়েছে। কিছুদিন আগে দেশের বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের পাতাজুড়ে একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেখে অবাক হলাম। বিক্রির বাজারে জমিজমাও একটি পণ্য সুতরাং বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমার আপত্তি অন্য জায়গায়। পুরো পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপনটির প্রায় অর্ধপৃষ্ঠা জুড়েই একজন ক্রিকেট তারকার ছবি। যিনি আমাদের দেশের নন। যদিও আমি সেই ক্রিকেট তারকার ভক্ত। তার পরও আমার আপত্তি হচ্ছে আমাদের দেশে এত বড় বড় বিশ্বসেরা ক্রিকেট তারকা থাকতে অন্য দেশের তারকাকে আমাদের পণ্যের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করতে হবে কেন? আমাদের দেশে সিনেমা-নাটক-থিয়েটার প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্বনামধন্য তারকারা রয়েছেন। তাদের বাদ দিয়ে বিজ্ঞাপনসহ অনেক কিছুতেই আমাদের এই বিদেশমুখী আচরণ কেন, তা আমার বোধগম্য নয়। প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে এ দেশে তাদের জনপ্রিয় করে আমাদের লাভটাই বা কী?

এবার বইমেলা প্রসঙ্গ। শুরু থেকেই যে বদলের কথা বলছি, সেই বদলের হাওয়া খানিকটা বইমেলায়ও লেগেছে। ফেব্রুয়ারিজুড়ে প্রতিদিন মিডিয়ায় বইমেলা ছিল অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি আমাদের অর্জনের মাস, সাংস্কৃতিক জাগরণের মাস। এবার এই মেলার পরিসর বেড়েছে। প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যাও বেড়েছে, বিক্রিও বেড়েছে। নিরুত্তাপ রাজনীতির কারণে মেলা ছিল উত্তপ্ত, ছিল না কোনো শঙ্কা। ছিল প্রাণের জোয়ার। বইপ্রেমীরা মেলায় এসেছেন কাতারে কাতার। তবে কেনেনি তত বই, কেনা উচিত যা তার। যদিও মেলায় এসে বই কিনতেই হবে এমন কোনো কথা নেই, মেলায় আসাটাও আনন্দের। ফেব্রুয়ারির এই মেলা আমাদের চেতনার উন্মেষ ঘটায়, পারস্পরিক সৌহার্দ্যের বন্ধন দৃঢ় করে। তবে বই কিনুক বা নাই কিনুক, এবারে বইয়ের সংখ্যা ছিল অন্যবারের চেয়ে বেশি। যে কারণে একটি প্রশ্ন এবার বেশ জনপ্রিয় হয়েছে, তা হলো— এবারে কয়টা? অর্থাত্ এক লেখক আর এক লেখককে দেখলেই জিজ্ঞাসা করেছেন, কিংবা কোনো পাঠক কোনো লেখককে জিজ্ঞাসা করেছেন— ভাই! এবার কয়টা? কেউ বলেছেন পাঁচটা, কেউ ছয়টা, কেউ দশটা, কেউ বলেছেন ডজন, কেউ বা আরও বেশি। অর্থাত্ এতগুলো বই তিনি লিখেছেন। কোয়ালিটি যাই হোক কোয়ান্টিটি কম নয়। বিষয়টি অনেকটা টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মতো। ঈদের সময় এক একজন শিল্পী ১৫টা, ২০টা করে নাটক করছেন। নাট্যকাররা ডজন ডজন মিনি ধারাবাহিক লিখছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে চ্যানেলের সংখ্যা যত বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে মান যেন ততই কমছে। কিবা নাটক কিবা গান, কিবা খবর কিবা ফান কিংবা আলোচনা অনুষ্ঠান— যে চ্যানেলেই যখন যান সব যেন সমান। এই মান নিয়ে কারও অপমানবোধ নেই। চললেই হলো। তেমনি বইয়ের ভিতর কী আছে না আছে তা কোনো বিষয় নয়। ছাপা হলেই হলো। তাহলেই ‘এবার কয়টা’ এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যাবে— ছয়টা, দশটা কিংবা বারোটা। এবারের মেলায় নবীন ও বিখ্যাত (!) কয়েকজন লেখকের বইয়ের নাম একসময়কার ‘পাইছি তোরে’, ‘খাইছি তোরে’ জাতীয় সিনেমার নামকে মনে করিয়ে দেয়। নামের কারণে কিছু কিছু বই বাড়িতে নিয়ে পরিবারের কাউকে দেখানো যাবে না। বইমেলা চলাকালে একটি টকশোয় একজন বিখ্যাত কবি বলছিলেন— আগে একটি বই লিখতে কয়েক বছর লেগে যেত। প্রচণ্ড টেনশন হতো, বইটি কেমন হবে, পাঠকরা ঠিকভাবে নেবে কিনা এসব চিন্তায়। এখন এক রাতেই কবিতার বই কিংবা উপন্যাস লেখা হয়ে যায়। আর প্রযুক্তির কল্যাণে ১০-১৫ হাজার টাকায় একটি বই ছাপানোও যায়। কিন্তু তাতে যা ছাপা হয় তা আদৌ কবিতা কিংবা উপন্যাস হয় কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। অথচ এ-জাতীয় বইয়ের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কারণ বই প্রকাশনার ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম-নীতি মানা হয় না। যেখানে নিয়ম-নীতি নেই, সেখানে অনিয়ম বাসা বাঁধবেই। এটাও অনেকটা টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মতো, অধিকাংশ টিভি চ্যানেলে অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য কোনো নীতিমালা নেই। নীতিমালা একটাই— কর্তার ইচ্ছায় কর্ম অর্থাত্ মালিক যা বলবেন তাই হবে। তিনি যে পেশার বা যে রুচির মানুষই হোন না কেন তার রুচি এবং ইচ্ছাতেই চ্যানেল চলবে, তিনি যা চাইবেন সেটাই হচ্ছে নিয়ম। তিনি যদি বলেন, অমুক গান ভালো, সবাই বলবে, হ্যাঁ ওটাই ভালো। তর্ক করা যাবে না। তর্ক করলে যদি চাকরি চলে যায়! সুতরাং ওটাই চালাতে হবে। ওরা ওটা চালাতে বাধ্য হলেও দর্শকরা তা দেখতে বাধ্য নয়। তবে বিটিভিকে যে যাই বলুক সেখানে কিছু নীতিমালা আছে। যেহেতু অর্থযোগ কম তাই অনেকেই এখন বিটিভিমুখী হন না— তাই অনুষ্ঠানের মানে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবে নীতিমালার কারণে গান-বাজনা, নাটকের বাইরেও টেলিভিশনের যে তিনটি মূলমন্ত্র শিক্ষা, তথ্য ও বিনোদন এগুলোর সমন্বয় করে অনুষ্ঠান হয় বিটিভিতে। গ্রন্থ প্রকাশনায়ও তেমন একটি গ্রন্থনীতি থাকা দরকার। যতদূর জানি আমাদের পাশের দেশগুলোয় এ গ্রন্থনীতি থাকলেও আমাদের দেশে নেই। অথচ গ্রন্থনীতি প্রণয়নের জন্য কমিটিও হয়েছিল। তারা সুপারিশও করেছিলেন কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা পাস হয়নি। এ সম্পর্কে বইমেলার শেষ দিনে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোয় তিনজন বিশিষ্ট ব্যক্তির আলোচনা শুনছিলাম। তারা বই এবং বইয়ের প্রকাশকদের নিয়েও কথা বলছিলেন। আজকাল নাকি অনেকে নিজের অর্থে বই ছাপিয়ে কোনো নামি প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশ করেন এবং বিনিময়ে সেই প্রকাশককে অর্থ প্রদান করেন। প্রকাশকও অত্যন্ত চতুর— তিনি ২০-২৫ কপি বই ছাপিয়ে নিজে পাঁচটি রেখে লেখককে ২০টি বই ধরিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আপনার বইয়ের প্রচণ্ড কাটতি। অনেক ছেপেছিলাম, সব শেষ’। প্রবাসে বসবাস করেন এমন অনেকেরও বইমেলায় বই প্রকাশ করার সুপ্ত ইচ্ছা থাকে। বই প্রকাশের জন্য এক-দুই লাখ টাকা খরচ করা তাদের জন্য কোনো কঠিন ব্যাপার নয়। দেশে এসে তারাও কোনো বড় প্রকাশকের শরণাপন্ন হন এবং একই পদ্ধতিতে নিজের পয়সায় বই প্রকাশ করেন। অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে, বই প্রকাশ করতে এখন সবাইকে লেখক হতে হয় না। ইচ্ছাটাই প্রধান। মেধা না থাকলেও, অর্থ থাকলে চলবে। অন্যকে দিয়েও আজকাল বই লেখানো যায় এবং লেখানো হয়। নাটক লেখার মতো বই লেখারও প্যানেল রাইটার রয়েছে। একটি লিখে দিচ্ছে ‘বাবুল’ আর একটি ‘আবুল’। আর এই আবুল-বাবুলদের সাহায্যে একই ব্যক্তির গণ্ডায় গণ্ডায় বইও নাকি প্রকাশ হচ্ছে। নিজের অর্থে নিজের বই প্রকাশ করার বিষয়টি অনেকটা সিডি বা ক্যাসেট প্রকাশনার মতো। একসময় আমাদের দেশের নামকরা ক্যাসেট কোম্পানিগুলোতে একটি অলিখিত নিয়ম চালু ছিল। যারা গান গাইতে চান বা শিল্পী হতে চান তাদের স্বপ্ন একটি বড় প্রযোজনা সংস্থা থেকে তাদের একটি ক্যাসেট বা সিডি প্রকাশ করা। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে ক্যাসেট কোম্পানির দেওয়া যে কোনো অর্থনৈতিক শর্তই তাকে মানতে হতো। গান রেকর্ড এবং কভার ডিজাইন করা থেকে শুরু করে সিডি প্রকাশের জন্য যা যা দরকার সব কিছুই শিল্পী তার নিজের অর্থে করে দিতেন। শুধু তাই নয়, অনেক শিল্পী তার ক্যাসেটের বিজ্ঞাপন, পোস্টার ছাপানো সবই নিজের অর্থে করতেন। বিনিময়ে শুধু ক্যাসেট কোম্পানির নামটি ব্যবহার করে বলতেন, ‘আমার অ্যালবামটি বেরিয়েছে অমুক কোম্পানি থেকে’। আর এতেই শিল্পী খুশি। কিন্তু এসব করে সবাই কি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে? পায়নি। তেমনি অন্যকে দিয়ে বই লিখিয়ে কিংবা নিজের পয়সায় ছাপিয়ে কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ডেকে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রকাশনা উত্সব করলেই সবাই লেখক হতে পারে না। এসব বই পাঠকদেরও আকর্ষণ করে না। বই প্রকাশ করে নিজে আনন্দ পেলে চলবে না অন্যকেও আনন্দ দিতে হবে। অন্যে পড়ার মতো বিষয়বস্তু থাকতে হবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বইয়ের গুণগত মান ভালো না হলে মেলার পরিসর আর বইয়ের সংখ্যা বাড়িয়ে লাভ নেই। যেমন ভালো না হলে অনুষ্ঠানের সংখ্যা বাড়িয়ে লাভ নেই। কারণ ভালো কিছু না হলে দর্শকরা দেখবে না। তেমনি ভালো বই না হলে পাঠকরা পড়বে না।

একটা সময় ছিল যখন প্রতিষ্ঠিত ও ভালো লেখকদের মতো সত্যিকার গুণীজন ও সৃজনশীল ব্যক্তি যারা মিডিয়া বোঝেন এবং অভিজ্ঞ, তারাই নাটক লিখতেন, নাটক নির্মাণ করতেন। আর যারা অভিনয় করতেন তারাও ছিলেন টেলিভিশনে তালিকাভুক্ত শিল্পী। তখন তারকা শব্দটির এত প্রচলন ছিল না। বলা হতো দক্ষ অভিনেত্রী কিংবা শক্তিমান অভিনেতা। কিন্তু তখন শিল্পীদের সবাই চিনতেন যদিও অনেকে বলবেন তখন একটি চ্যানেল ছিল দর্শকরা দেখতে বাধ্য হতেন, তাই চেনাও সহজ হতো। কিন্তু এখন নানা চ্যানেলে এক একজনকে শতবার দেখা যায়, একই বিজ্ঞাপন হাজারবার প্রচার হয় তার পরও এখনকার অধিকাংশ শিল্পী বা মডেলকে কেউ চেনে না। প্রধান কারণ হচ্ছে মান। এই মিডিয়া প্রপাতের যুগে অথবা হুজুগে অনুষ্ঠানের মানে জেনে বা না জেনে, মেনে বা না মেনে চলছে নির্মাণের হিড়িক। মান থাক বা না থাক অনুষ্ঠান বানিয়েই চলছে। ১০০ পর্ব থেকে ১০০০ পর্ব। আজকাল নাটক নির্মাণ কিংবা প্রচারের জন্য নাটক নির্বাচন প্রক্রিয়া চ্যানেলের কর্মকর্তাদের হাতে নেই। স্পন্সর প্রতিষ্ঠান কিংবা এজেন্সি ঠিক করে দেয় কোন নাটক কোন চ্যানেলে কখন যাবে? কারা অভিনয় করবে? কে লিখবে? শুধু তাই নয়, নাটকটি প্রচারযোগ্য কিনা তা দেখার অধিকারও অনেক চ্যানেলের নেই। তারা অর্থ পেলেই খুশি। ব্যবসার কাছে শিল্পমানের কোনো মূল্য নেই। কোটি কোটি টাকা লগ্নি করে চ্যানেল খুলে কে লোকসান চাইবে? তাই অর্থপ্রাপ্তিতেই অনেকে অর্থ খুঁজে পান। অনুষ্ঠান কেমন গেল, দর্শকরা কী বলল তাতে কিছু যায় আসে না। কেউ আছেন নিজের চ্যানেলে নিজেদের বানানো অনুষ্ঠান চালিয়ে নিজে নিজেই ‘ফার্স্ট’ হয়ে যাচ্ছেন। নিজেই নিজের ঢোল পিটিয়ে বলছেন, ‘আমিই সেরা’। যদিও অতি পেটানোতে সেই ঢোল মাঝে মাঝে ফেটেও যাচ্ছে। তা দেখে লোকে হাসছে কিন্তু ওরা বুঝছে না। মজার ব্যাপার হলো, এরা নিজেরাই শুধু বলে না, অন্যকে দিয়েও বলায়। বলা বাহুল্য এসব বলার জন্য কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি (!) ‘স্ট্যান্ডবাই’ থাকেন। বিষয়টা অনেকটা সার্টিফিকেট নেওয়ার মতো। এসব করে তো রিমোটের হাত থেকে বাঁচা যাবে না। কারণ যন্ত্রটি এই প্রচারকাঙালদের হাতে থাকে না। তাই দরকার দর্শকদের সার্টিফিকেট।

তবে খারাপের পাশে ভালোর সংখ্যাও কম নয়। টেলিভিশনের কথাই যদি বলি অনেক ধারাবাহিক নাটক, খণ্ডনাটক জনপ্রিয় হয়েছে। অনেক শিল্পী জনপ্রিয় হয়েছেন। অনেক কলাকুশলী নির্মাতা তৈরি হয়েছে। তার মানে যা ভালো দর্শকরা তা দেখেন। তার জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষাও করেন। তেমনি ভালো বই পাঠকরা পড়েন এবং তার বিক্রিও হয় অনেক। যেমন এবারের মেলায় পুরনোদের সঙ্গে অনেক নবীন প্রকাশক এসেছেন। অনেক তরুণ লেখক এসেছেন, প্রতিষ্ঠিত লেখকের পাশাপাশি যারা আমাদের অনেক ভালো ভালো বইও উপহার দিয়েছেন; যা পাঠকদের আকৃষ্ট করেছে এবং বিক্রিও হয়েছে অনেক।

ছবিতেও বদলের হাওয়া লেগেছে। ইদানীং আমাদের এখানে অনেক ছবি তৈরি হচ্ছে। অনেকেই বলেন এগুলো পূর্ণদৈর্ঘ্য টেলিফিল্ম। নির্দিষ্ট কয়েকটি হলে মুক্তি পায়। আগে যেমন আমরা শুনতাম দেশব্যাপী ঐতিহাসিক শুভমুক্তি পাচ্ছে অমুক ছবি। এখন ওসবের বালাই নেই। বদলে গেছে সব। এখন অধিকাংশ ছবিই প্রথম মুক্তি পায় টিভিতে। আগে সপরিবারে সবাই ছবি দেখতে যেতেন। এখনকার মতো বলতে হতো না সপরিবারে হলে গিয়ে ছবি দেখবেন। কিন্তু আজকাল কিছু কিছু ছবির যে প্রোমো এবং আইটেম সং দেখা যায়, তাতে কোনো বোধবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি সপরিবারে এসব ছবি দেখতে যাবেন না, এটাই স্বাভাবিক। লক্ষণীয় বিষয় হলো টিভি অনুষ্ঠানের মতো এসব ছবি দর্শক দেখুক বা না দেখুক এরা সবাই অনেক পুরস্কারে ভূষিত হন। কেউ কেউ বলেন, পুরস্কার পান না পুরস্কার জোগাড় করেন। যে কারণে অনেকের পুরস্কারপ্রাপ্তিতে অভিনন্দন জানানোর বদলে প্রশ্ন জাগে— তিনি কেন পুরস্কার পেলেন? কীভাবে পেলেন? টিভিতেও দু-এক জন আছেন অনুষ্ঠান বানানোর আগে চিন্তা করেন, কী করলে, কাকে ধরলে কোন পদ্ধতিতে এগোলে পুরস্কার পাওয়া যাবে। এসব পুরস্কারের পেছনে প্রচুর তদবির থাকে, শ্রম থাকে, লবিস্ট থাকে, অর্থ থাকে। তবে দর্শকরা এসব দেখে দেখে অনেক কিছুই জেনেছেন, শিখেছেন। এই শেখা কেউ দেখে শেখে, কেউ ঠেকে শেখে। কেউ জেনে শেখে, কেউ মেনে শেখে। কেউ ভুল বুঝে শেখে, কেউ মূল খুঁজে শেখে। কেউ বই পড়ে শেখে, কেউ বেকায়দায় পড়ে শেখে।

প্রিয় পাঠক! শুরু করেছিলাম বদলে যাওয়া নিয়ে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুরোধে আমি মিডিয়ার কিছু টুকরো টুকরো বদলে যাওয়ার গল্প বলতে চেষ্টা করেছি। কাল যেমন বদলায় তেমন কালের সঙ্গে বদলায় অনেক রীতি-নীতি, প্রেম-প্রীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি কিংবা সম্প্রীতি। ক্ষেত্রবিশেষ স্মৃতিও হয়ে যায় বিস্মৃতি। নানা কারণে মানুষ বদলায়। কেউ ভালো পথে যাওয়ার জন্য বদলায়। কেউ বদলায় খারাপ পথের জন্য। তাই কোনো বদল রদবদল, কোনো বদল বদবদল। ইচ্ছায় অনিচ্ছায় সময়ে অসময়ে অনেক জায়গায় রদবদল হয়। দেখতে হবে এই রদবদল যেন বদবদল না হয়। যোগ্য জায়গায় যোগ্য লোকের অভাব হলে অঘটন ঘটাই স্বাভাবিক। কথায় আছে,‘Don’t play with fire’, আগুন নিয়ে খেলো না। কারণ আগুনে যেমন রান্না হয়, আগুনে তেমন আগুন লাগে। ছুরি দিয়ে যেমন জীবন নেওয়া যায়, ছুরি দিয়ে তেমনি মানুষ বাঁচানো যায়, অপারেশন করে। অর্থাত্ ছুরি দিয়ে মরা-বাঁচা দুটোই করা যায়। আমাদের বুঝতে হবে আমরা কী দিয়ে কী করব। অনেকেই বলেন নিজে নিজে ডাক্তারি, দ্রুত পড়ে ডাক তারই। অসুখ না বুঝে, না জেনে, কারণ না খুঁজে না মেনে, নানা জনের নানা কথায়, নানা প্রথায় চিকিৎসা নিলে পরপারের ডাক— ডাক্তার দেখানোর আগেই এসে পড়ার আশঙ্কা থাকে। আর সে জন্যই বোধহয় বলে, ‘ডাক্তার আসিবার পূর্বেই রোগীর মৃত্যু হইল’। কিন্তু এই মৃত্যু আমরা কেউই চাই না। সুতরাং সব অনিয়মের নিয়মগুলো রুদ্ধ করে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে জীবনটাকে শুদ্ধ করে নিতে পারলেই ভালো হয়। বদলে গেলেই ভালো কিছু হয় না, ভালো যা হয়, ভালো যে হয়— আপন গুণেই হয়। 


লেখক: গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, পরিবেশ ও সমাজ উন্নয়ন কর্মী। তারিখ : ১২ মার্চ, ২০১৬


বিডি-প্রতিদিন/ ১৬ মার্চ, ২০১৬/ রশিদা

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর