২২ মার্চ, ২০১৬ ১৫:২০

চীনের কাছে স্বার্থের চেয়ে বন্ধুত্ব বেশি গুরুত্বপূর্ণ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

চীনের কাছে স্বার্থের চেয়ে বন্ধুত্ব বেশি গুরুত্বপূর্ণ

রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়াং

চীন স্বার্থের চেয়ে বন্ধুত্বকে বেশি গুরুত্ব দেয় বলে জানিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়াং। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীন সহায়তায় আগ্রহী। এ জন্য অন্য যে কোনো দেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতেও চীন প্রস্তুত। এই মনোভাব শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নয়, বরং চীনের পররাষ্ট্রনীতিই হলো— স্বার্থের আগে বন্ধুত্ব। সেই সঙ্গে ‘অন্যকে সহায়তা করার মাধ্যমে নিজেকে সহায়তা করা’র নীতিতে বিশ্বাস করে চীন।

জাতীয় প্রেসক্লাবে গতকাল কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিক্যাবের নিয়মিত আয়োজন ‘ডিক্যাব টক’-এ রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ডিক্যাব সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টি এবং স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক পান্থ রহমান। মা মিং কিয়াং বলেন, ‘সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে যেমন ভিশন-২০২১ রয়েছে, তেমনি চীনও কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার শত বর্ষপূতি উদযাপনের জন্য ২০২১ সালে উন্নত জীবনমান গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে।’

বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ঐতিহাসিক নানা মিলের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ইতিমধ্যে আঞ্চলিক বিভিন্ন উদ্যোগে বাংলাদেশ ও চীন একে অপরের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক কানেকটিভিটির ক্ষেত্রে চীনের রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড-এ বাংলাদেশ সম্মত। সদস্য হিসেবে আছে চীনের এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (আইইবি) ও ব্রিকস্ ব্যাংকেও। চীনের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, বাংলাদেশের প্রত্যাশা পূরণে পাশে থাকবে চীন।’

মা মিং কিয়াং বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে চীন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বৃহৎ বৃহৎ প্রকল্পে সংযুক্ত। কাজাখস্তানের সঙ্গে ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চীন। পাকিস্তানের সঙ্গে ৪৬ বিলিয়ন ও ভারতের সঙ্গে ২৩ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে সম্প্রতি।’ বাংলাদেশের সঙ্গে এমন বড় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে কেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চাহিদা থাকতে হবে। চাহিদা থাকলেই সবাই আসবে। দ্বিতীয়ত, তথ্যপ্রবাহের ঘাটতি অনেক সময় অনেক সুযোগ নষ্ট করে দেয়। আমরা যতটুকু জানি, প্রথমে সোনাদিয়ায় করার ইচ্ছা থাকলেও এখন পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর করার বিষয়ে বাংলাদেশ বেশি আগ্রহী। সোনাদিয়া কিংবা পায়রা যেখানেই করা হোক, চীন সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। এমনকি অন্য দেশের সঙ্গে মিলে কাজ করতেও চীনের আপত্তি নেই।’ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে এখন পর্যন্ত কোনো গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হয়নি। এ কারণে আমদানি-রপ্তানির জন্য সিঙ্গাপুর কিংবা শ্রীলঙ্কার ওপর নির্ভর করতে হয় বাংলাদেশকে। যদি এখানে কোনো গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হয়, তাহলে পাশের দুটি বৃহৎ অর্থনীতির সংযোগস্থল হতে পারে বাংলাদেশ।’

মা মিং কিয়াং বলেন, ‘বাংলাদেশ ও চীনের বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা কমানোর সুযোগ আছে। কারণ চীন পরবর্তী ৫ বছরে ১০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করবে। বাংলাদেশ এই সুযোগ নিতে পারে। বাংলাদেশকে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে হবে। যদি চাহিদা অনুযায়ী জোগান বাংলাদেশ থেকে পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই চীনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশকেই বেছে নেবে।’ তিনি বলেন, ‘চলতি বছর অনেকে বিনিয়োগকারী এ দেশে আসবে। বিশেষ করে জ্বালানি খাত, সরকারি প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ ও তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী চীন। চট্টগ্রামে শুধু চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিষয়ও প্রক্রিয়াধীন।’ বাংলাদেশে আইএস আছে এমন দাবি করে অনিরাপদ ঘোষণা করা পশ্চিমা একাধিক রাষ্ট্রের সঙ্গে একমত নন চীনা কূটনীতিক। তিনি বলেন, ‘তদন্ত শেষ হওয়ার আগে আইএসের উপস্থিতি নিয়ে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন নয়। আমি একজন কূটনীতিক হিসেবে তদন্তের আগেই কোনো অনুমান করতে পারি না। অনুমানের ভিত্তিতে চীনের লোকজনকে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতেও বলতে পারি না। সাম্প্রতিক ওই ঘটনাগুলোর সঙ্গে আইএস ছিল, না সন্ত্রাসীরা ছিল সে ব্যাপারে পুলিশ ও র‌্যাবের তদন্তের ওপরই নির্ভর করতে চায় চীন।’ গভীর সমুদ্র থেকে খনিজ সম্পদ আহরণে চীন সহায়তা করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এখনো তেমন কোনো অ্যাপ্রোচ করার সুযোগ আমরা পাইনি। আমরা পত্রিকায় দেখেছি, দুই-তিনটি ব্লকে অনুসন্ধান চালানো হবে। চীনের দুটি কোম্পানি এ বিষয়ে প্রাথমিক আগ্রহ দেখিয়েছে।’ চীন থেকে বাংলাদেশের সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ সম্পর্ক আরও বেগবান হবে বলে বেইজিং বিশ্বাস করে। কারণ চীনের সরঞ্জাম মানসম্মত।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর