শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

শিবসেনায় কলঙ্কিত ক্রিকেট

ক্রীড়া ডেস্ক

শিবসেনায় কলঙ্কিত ক্রিকেট

শিবসেনার আক্রমণের পর সব ভেস্তে গেছে। শুধু ক্রিকেট নয়,

ক্রিকেট বিশ্বে সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ ভারত। ক্রিকেটকে রাজনীতি থেকে মুক্ত রাখার বড় দাবি ছিল তাদেরই। সেই ভারতেই ক্রিকেট এখন রাজনীতির অংশ হয়ে গেছে। গতকাল মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম সংলগ্ন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কার‌্যালয়ে প্রবেশ করে বিক্ষোভ করেছে কট্টরপন্থি রাজনৈতিক সংগঠন শিবসেনা। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত যাতে কোনো ম্যাচ না খেলে, সেজন্য বিসিসিআই সভাপতি শশাঙ্ক মনোহরের কক্ষে ঢুকে হুমকিও দিয়েছে শিবসেনার কর্মীরা। ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন নজীরবিহীন ঘটনা আর কোথাও কখনো এর আগে ঘটেনি। এমন ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছে ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা আইসিসি। 

গতকাল সকালে বিসিসিআইয়ের কার‌্যালয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রধান শাহরিয়ার খান ও প্রধান নির্বাহী নাজাম শেঠির সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ নিয়ে আলোচনার কথা ছিল বিসিবিবির নবনিযুক্ত সভাপতি শশাঙ্ক মনোহরের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা ছিল। বহু প্রতীক্ষিত ভারত-পাকিস্তান সিরিজ যাতে আবার চালু হয় এজন্য বৈঠকটি ছিল মহাগুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শিবসেনার আক্রমণের পর সব ভেস্তে গেছে। শুধু ক্রিকেট নয়, পাকিস্তানের সঙ্গে যেকোনো ধরনের সম্পর্ক রাখার ঘোর বিরোধী শিবসেনা। তাই সকালেই মিটিং ভেস্তে দিতে তারা ঢুকে পড়ে বিসিসিআইয়ের কার‌্যালয়ে। প্ল্যাকার্ড, ব্যানার নিয়ে শিবসেনা কর্মীরা বিসিসিআই কার‌্যালয়ের ভিতরে ঢুকে। তারা পাকিস্তানবিরোধী স্লোগানে স্লোগানে পুরো এলাকা প্রকম্পিত করে তোলে।  পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচি দেবে বলেও হুমকি দেয়। ভারতীয় প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের (আইপিএল) সভাপতি রাজীব শুক্লা টুইটারে লিখেছেন, আশা করি, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ভারতের মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। এমন ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের সাবেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার ও আইসিসির সভাপতি জহির আব্বাস। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট আর রাজনীতি দুইটা ভিন্ন জিনিস। এই দুইটা বিষয়কে আলাদা করে দেখাই উচিত।’ আব্বাস বলেন, ‘ভারতে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন থেকেই দেখে আসছি। কিন্তু আইসিসির সভাপতি হিসেবে আমার লক্ষ্য সব কিছুর ঊর্ধ্বে থেকে ক্রিকেট যতটা সম্ভব ছড়িয়ে দেওয়া। পাকিস্তান-ভারত ম্যাচের উত্তেজনা ক্রিকেটকে আরও সমৃদ্ধ করবে। এখানে আমি ক্ষতির কিছু দেখছি না। তাছাড়া খেলা তো আর পাকিস্তানের মাটিতে হচ্ছে না। খেলা হবে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে। তাহলে এতো আপত্তি কেন?’ আব্বাসের দাবি, ‘ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে গোটা ক্রিকেটবিশ্ব। ভারত ও পাকিস্তান মাঠে একে অপরের বিরুদ্ধে খেলছে, ক্রিকেটে এর চেয়ে সুখকর ঘটনা আর কি হতে পারে? এই সিরিজের ব্যাপারে ভারতের কাছ থেকে ক্রিকেটপ্রেমীরা সুসংবাদ শুনতে চায়!’ শিবসেনার এমন কাণ্ডের পরও ভারত-পাকিস্তান সিরিজ নিয়ে আলোচনা কত দূর গড়াবে তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু এ ঘটনার পর, একটা প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, ভারতে কি ক্রিকেট এখন নিরাপদ? কিংবা এই ঘটনা যদি, ভারতে না ঘটে যদি অন্য কোনো দেশে হতো তাহলে? যেখানে বাংলাদেশে কোনো ঘটনা না ঘটতেই অনুমানে নির্ভর তথ্যের ভিত্তিতে অস্ট্রেলিয়া দল সফর স্থগিত করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা মহিলা ক্রিকেট দল সফর স্থগিত করেছে। এখন দেখার বিষয়, দক্ষিণ আফ্রিকা ভারতের বিরুদ্ধে চলমান ওয়ানডে সিরিজ শেষ করার আগেই দেশে ফিরে যায় কিনা? না গেলে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে, সবাই শক্তের ভক্ত! বাংলাদেশের জায়গায় ভারত হলে, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ স্থগিত করার দুঃসাহস দেখাতো না!

সর্বশেষ খবর