শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কেটে গেল হকির সংকট

সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আবদুস সাদেক

মেজবাহ্-উল-হক

কেটে গেল হকির সংকট

দীর্ঘ সভার পর ফ্যালকন হল থেকে বের হয়ে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সামনে এলেন হকি ফেডারেশনের সভাপতি বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল আবু এসরার। সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল আবদুস সাদেক, ফেডারেশনের সিনিয়র সহসভাপতি। ছিলেন সাধারণ সম্পাদক খাজা রহমতুল্লাহ ও গভর্নিং বডির অন্য সদস্যরাও। ততক্ষণে মিডিয়া কর্মীরা তাদের ঘিরে ধরেছেন। হাসি মুখেই গতকাল ফেভারেশনের সভাপতি জানালেন, হকির বৃহত্তর স্বার্থে সবার প্রিয় সাদেক ভাইকে (আবদুস সাদেক) সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে, আর খাজা রহমতুল্লাহ এখন সহসভাপতি। আশা করি, এখন হকির সংকটও দূর হয়ে গেল।

বাংলাদেশ জাতীয় হকি দলের প্রথম অধিনায়ক আবদুস সাদেক দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হলেন হকি ফেডারেশনের। এর আগে ১৯৮২-৮৫ মেয়াদেও তিনি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মজার ব্যাপার হলো, সেই সময়ও হকিতে একটা সংকট তৈরি হয়েছিল। এবারও সংকটের সময় এগিয়ে এলেন সাদেক।  

হকিতে সাদেক যেন দেবদূতের মতো। যখনই সমস্যা দেখা দেয় তিনি চলে আসেন এবং সমাধান করে ছাড়েন। এবারও আশাবাদী সাদেক। তিনি বলেন, ‘৮২-তে এমন একটা সংকটাপন্ন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তারপর আমি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছিলাম। আমি সবাইকে মাঠে নিয়ে আসতে পেরেছিলাম তখন। আশা করি, এবারও ব্যর্থ হব না। আমি পারব। সবাই মাঠে আসবে। সবাই সহযোগিতা করবে। হকির উন্নতি হবে। ক্লাবগুলোর সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা স্বাগত জানিয়েছে।’

সাদেক বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত আসলে নিতে হয়েছে হকির স্বার্থেই। সবাই চেয়েছে। তা ছাড়া রহমতুল্লাহও তো থাকছেন। তিনি এখন সহসভাপতি। এখানে অনেক তরুণ আছেন। অন্তত ১০-১২ জন জাতীয় দলের খেলোয়াড় রয়েছেন। সবাই সবার জায়গা থেকে সহযোগিতা করবেন। আমার মনে হয়, যে সমস্যা তৈরি হয়েছিল এখন তার সমাধান হয়েছে। এটা হকির জন্য খুবই ভালো হয়েছে।’

অনেক দিন থেকেই হকিতে স্থবিরতা বিরাজ করছিল। খাজা রহমতুল্লাহর পদত্যাগের দাবিতে মোহামেডান, মেরিনার্স, ওয়ারী, ওয়ান্ডারার্স ও বাংলাদেশ স্পোর্টিং গতবার লিগ বর্জন করে। পাঁচ ক্লাবের সঙ্গে এবার উষা ক্রীড়া চক্রও বেঁকে বসেছিল। তাই হকির বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে সাদেককে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমি ৩৩ বছর আগে প্রথমবারের মতো সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলাম হকি ফেডারেশনের। তিন বছর দায়িত্ব পালন করার পর ছেড়ে দিয়েছি। সেটাও ৩০ বছর আগের ঘটনা। আমি সবসময় চাই হকি মাঠে থাকুক। খেলোয়াড়রা খেলুক। যেহেতু একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে তাই হকির বৃহত্তর স্বার্থে আমি আবার দায়িত্ব নিলাম। এখন সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’

সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ায় ব্যথিত নন খাজা রহমতুল্লাহও। নিজের পদের চেয়ে হকির মাঠে ফেরাটাই তার কাছে বড়। রহমতুল্লাহ বলেন, ‘এটা আমি ইতিবাচকভাবেই দেখছি। খেলোয়াড়রা মাঠে নামছে এটাই সবচেয়ে বড় কথা। আমরা এখানে যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তারা হকির বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করেই নিয়েছি। আমরা সবাই দীর্ঘদিন থেকে হকির সঙ্গে জড়িত। সবাই হকির ভালো চাই। এখানে আজ যে সিদ্ধান্তগুলো হয়েছে আমরা সবাই সর্বসম্মতিক্রমে নিয়েছি। আশা করছি দ্রুতই সবাই মাঠে ফিরবে। আমরা হকিটাকে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় মাঠে ফেরাতে পারব।’ আবদুস সাদেক সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় সন্তুষ্ট লিগ বর্জনকারী ক্লাবগুলোও। জাতীয় দলের খেলোয়াড়রাও ক্যাম্পে ফিরছে। হকিতে যেন আবার সুবাতাস বইতে শুরু করেছে।

গতকালের সভায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দলবদলের তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে। এয়ার ভাইস মার্শাল আবু এসরার বলেন, ‘হকিকে কীভাবে মাঠে ফিরিয়ে আনা যায়, ভবিষ্যতে হকিকে গতিশীল রাখতে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে তা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। তৃতীয় বিভাগ হকি আবার চালু করার জন্য কী কী করতে হবে তা নিয়ে কথা হয়েছে। খেলোয়াড়দের দলবদল ১৩, ১৪, ১৫ ডিসেম্বর হবে। বিজয় দিবস হকির পরই শুরু হবে প্রিমিয়ার লিগ। এখন আমাদের প্রিমিয়ার লিগে ১২টি দল খেলে কিন্তু এই সংখ্যাটা কীভাবে পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করে ১৬টিতে নিতে পারি তা চেষ্টা করব। কীভাবে প্রথম বিভাগে দলের সংখ্যা বাড়ানো যায়। দ্বিতীয় বিভাগে কীভাবে ক্লাব বাড়ানো যায়। তৃতীয় বিভাগ কীভাবে তৈরি করা যায়। স্কুল হকি কীভাবে ভালো করা যায়। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’

রহমতুল্লাহ ছিলেন নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। তাই নির্বাচন ছাড়াই নতুন সাধারণ সম্পাদক পদে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রে কোনো বাধা আছে কিনা? এমন প্রশ্নে ফেডারেশনের সভাপতি বলেন, ‘আমাদের একটা সহসভাপতি পদ খালি ছিল, আমরা সেই পদে খাজা রহমতুল্লাহকে নিয়োগ দিয়েছি। আর সাদেক ভাই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। তাই সাধারণ সম্পাদকের পদে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এটা গঠনতন্ত্র মেনেই করা হয়েছে। এখানে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাতে গভর্নিং বডির কারও কোনো দ্বিমত ছিল না।’

 

 

সর্বশেষ খবর