বুধবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ইতিহাস গড়ে চট্টগ্রাম আবাহনী ফাইনালে

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

ইতিহাস গড়ে চট্টগ্রাম আবাহনী ফাইনালে

বাজানের জালে বল। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবলে সেমিফাইনালে প্রথম গোল করে এভাবেই উৎসবে মেতে ওঠে চট্টগ্রাম আবাহনী -বাংলাদেশ প্রতিদিন

চট্টগ্রাম আবাহনীর সামনে ছিল ইতিহাস গড়ার হাতছানি। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনালে আফগান ক্লাব বাজানকে হারালেই নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠার সুযোগ। এমন সুযোগের সামনে দাঁড়িয়ে পূর্ণতা দিতে কার্পণ্য করেননি এলিটা, এমিলি, জাহিদরা। গতকাল এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সেমিফাইনালে আফগানিস্তানের চ্যাম্পিয়ন ক্লাব বাজানকে ৩-১ গোলে হারিয়ে নিজেদের মাটিতে ইতিহাস রচনা করল চট্টগ্রাম আবাহনী। ক্লাবটি আজ দ্বিতীয় সেমিফাইনালের জয়ী দলের বিপক্ষে শুক্রবার ফাইনালে মুখোমুখি হবে। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের অধিকাংশ ফুটবলার চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে খেলছেন। মূলত এ কারণেই দলটি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে।

খেলাটি দেখতে কাল মাঠে উপস্থিত হয়েছিল হাজার বিশেক দর্শক। জাতীয় পতাকা নিয়ে প্রিয় দলকে সমর্থন জোগাতে কমতি ছিল না উৎসাহের। দর্শকে ঠাসা স্টেডিয়ামে শুরু থেকে নান্দনিক ফুটবল খেলতে থাকে দুই দল। সাত মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী। মধ্যমাঠ থেকে বল নিয়ে বাজানের ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন এলিটা। গোলপোস্টে শটও নেন। কিন্তু বাজানের গোলরক্ষক ইউসুফজাই তা কোনোরকমে ঠেকিয়ে দেন। কিন্তু বল চলে আসে সামনে দাঁড়ানো জাহিদ হাসান এমিলির পায়ে। দেশসেরা স্ট্রাইকার সময় ক্ষেপণ না করে শট নেন। শটটি সরাসরি গায়ে লাগে বাজানের এক খেলোয়াড়ের। ফলে এগিয়ে যাওয়া হয়নি চট্টগ্রাম আবাহনীর। দুই মিনিট পর পাল্টা আক্রমণে যায় বাজান। মিডফিল্ডার আনোয়ার আকবরির নেওয়া দূরপাল্লার শট ক্রসবার ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। ২৪ মিনিটে বহু আরাধ্য গোল পায় স্বাগতিক আবাহনী। ডান পাশ থেকে জাহিদের নেওয়া কর্নার কিকে এমিলি হেড করে পাস দেন সতীর্থ স্টিভেন টমাসকে। শূন্যে থাকা অবস্থায় টমাসও হেড করে বলকে জড়িয়ে দেন বাজানের জালে (১-০)। ওই গোলের পর স্টেডিয়ামজুড়ে শুধুই আবাহনীর প্রশংসাধ্বনি আবাহনী, আবাহনী। ৩২ মিনিটে আবার এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় স্বাগতিকরা। ডান প্রান্ত থেকে এমিলির নেওয়া দূরপাল্লার শট ঠেকিয়ে দেন বাজানের গোলরক্ষক। ৪৩ মিনিটে আবারও সুযোগ তৈরি করেন এমিলিরা। ডান প্রান্তে জাহিদের কাছ থেকে বল পেয়ে গোলবারে জোরালো শট নেন হেমন্ত ভিনসেন্ট। হেমন্তের দুর্দান্ত শট কর্নারের বিনিময়ে বাজানকে বিপদমুক্ত করেন গোলরক্ষক ইউসুফজাই। ১ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় চট্টগ্রাম আবাহনী।

দ্বিতীয়ার্ধে এগিয়ে থাকার আÍবিশ্বাস নিয়ে খেলতে নামে স্বাগতিক দল। বাজান নামে ম্যাচে ফেরার দৃঢ়তা নিয়ে। ৫৮ মিনিটে স্বাগতিক চট্টগ্রামের সমর্থকদের ফের আনন্দে ভাসান এলিটা। চমৎকার গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ (২-০) করতে ভুল করেননি। মিঠুন চৌধুরীর ক্রসে মুহূর্তেই তা জালে পাঠান এলিটা। দুই মিনিট পর পাল্টা আক্রমণ করে আফগান ক্লাবটি। একক প্রচেষ্টায় আবাহনীর ডি বক্সে ঢুকে জোরালো শট নেন রেজা। কিন্তু আবাহনীর গোলরক্ষক রাসেল মাহমুদের দৃঢ়তায় রক্ষা পায় চট্টগ্রাম আবাহনী। ৭৯ মিনিটে অধিনায়ক গোলাম হজরতের কল্যাণে ব্যবধান কমায় ২-১ বাজান। অধিনায়কের নেওয়া ফ্রি কিক আবাহনীর টমাসের মাথায় লেগে নিজেদের গোলবারে ঢুকে পড়ে। ৮৯ মিনিটে বাজানের জালে শেষ পেরেক ঠুকে সমর্থকদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইয়ে দেন এলিটা। তার দেওয়া গোলটি টুর্নামেন্টের সেরা গোলও বলা যেতে পারে। মাঝমাঠ থেকে একক প্রচেষ্টায় দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ব্যবধান ৩-১ করেন তিনি। ম্যাচ শেষে উৎফুল­ চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘আমি ছেলেদের কাছে যা চেয়েছি তাই তারা মাঠে দেখিয়েছে। তাদের পারফরম্যান্সে আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট। গ্রুপ পর্বে আমরা ভালো খেলেও ইস্টবেঙ্গলের কাছে হেরে যাই। তাই ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে তাদের চাই। আমার বিশ্বাস, শেখ কামাল ক্লাব কাপের ট্রফি চট্টগ্রাম আবাহনীই ঘরে তুলবে।’ অন্যদিকে, বাজানের কোচ ওয়াহিদুল্লাহ বলেন, ‘সোমবারের ভ‚মিকম্পে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের পরিবারের সদস্য হতাহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে আনোয়ার আকবরি ভাইকে হারিয়েছেন। এ দুর্ঘটনার পর কারও মানসিক অবস্থা খেলার মতো ছিল না। তার পরও তারা ভালো খেলেছেন। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ। আমি চট্টগ্রাম আবাহনীকেও ধন্যবাদ জানাই তারা ভালো খেলে ফাইনালে গেছে।’

সর্বশেষ খবর