বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

প্রতিশ্রুতিতেই বন্দী বাফুফে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রতিশ্রুতিতেই বন্দী বাফুফে

শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ করে সাড়া ফেলে দিয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী। খেলা হচ্ছে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে। অথচ টুর্নামেন্টকে ঘিরে পুরো দেশেই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। সত্যি বলতে কী শেখ কামাল ক্লাব কাপ ফুটবল নতুন জাগরণ তৈরি করেছে। ভালো ফুটবল ও ভালো দল আসলে গ্যালারি যে ভরে যায় তার প্রমাণ এ টুর্নামেন্ট। স্বল্পদিনের প্রস্তুতি নিয়ে চট্টগ্রাম আবাহনী যে সুন্দর আয়োজন করছে তা প্রশংসা পাবার যোগ্য। বাফুকে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন নিজেও চট্টগ্রাম আবাহনী কর্মকর্তাদের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু বাফুফে আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের উদ্যোগ নিতে পারছে না কেন? ১৯৯২ সালে একবার বিটিসির পৃষ্ঠপোষকতায় ক্লাব কাপের আয়োজন করেছিল। দেশের শীর্ষ পর্যায়ের দল ছাড়া ভারতের ইস্টবেঙ্গল ও  মোহনবাগান অংশ নেওয়ায় টুর্নামেন্টটি ছিল জমজমাট। এরপর কেন জানি বাফুফে ক্লাব কাপের আয়োজন করতে পারেনি।

ভারতে লিগ ছাড়াও টুর্নামেন্টের ছড়াছড়ি। অন্য প্রদেশের কথা বাদই দিলাম। এক মৌসুমে পশ্চিমবঙ্গ ফুটবলে ৭/৮ টা টুর্নামেন্ট করছে। সেখানে বাফুফে পেশাদার লিগ ও ফেডারেশন কাপই নিয়মিত হচ্ছে। শিডিউলে সুপার কাপ ও স্বাধীনতা কাপ থাকলেও তা হচ্ছে না। লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ও বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী বলেছেন, আন্তর্জাতিক ম্যাচের কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দুটো টুর্নামেন্ট করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি শেখ জামাল ধানমন্ডি ও ঢাকা মোহামেডান ক্লাব। এ নিয়ে শেখ জামাল সভাপতি মনজুর কাদের ক্ষোভও প্রকাশ করেন। আসলে ক্ষুব্ধ হওয়ার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। কেননা একটা দল খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে চার টুর্নামেন্টের জন্য। সেখানে ফেডারেশন কাপ ও লিগ আয়োজন করে মৌসুমের ইতি টানে তাহলেতো লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়। দুটো টুর্নামেন্ট হচ্ছে না কিন্তু খেলোয়াড়রাতো আর বাকি অর্থ ক্লাবগুলোকে ফেরত দিচ্ছে না। আন্তর্জাতিক ম্যাচের কথা বলা হচ্ছে কিন্তু এ শিডিউল কি বাফুফের জানা ছিল না। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে কবে?

প্রতি মৌসুমে যদি দুই আসরই হয় তাহলে আর বাফুফের প্রয়োজন আছে কিনা এ নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। প্রথম মেয়াদে ফেডারেশনের সভাপতি হওয়ার পর কাজী সালাউদ্দিন ঘোষণা দিয়েছিলেন এখন শুধু বঙ্গবন্ধু কাপ নয়। আরও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হবে। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে গত জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু কাপ মাঠে নামান। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রতিবছর জানুয়ারি মাসেই বঙ্গবন্ধু কাপ আয়োজন হবে। সভাপতিতো প্রতিশ্রুতি কম দেন না। কিন্তু তাতো আর বাস্তবে দেখা যায় না। সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের (সাফ) সভাপতি হয়ে তিনি বলেছিলেন প্রতি বছর সাফ অঞ্চলের শীর্ষ ক্লাবগুলোকে নিয়ে ক্লাব কাপ হবে। এই প্রতিশ্রুতিও পূরণ করতে পারেননি। বাফুফে পারছে না। কিন্তু চট্টগ্রাম আবাহনী রীতিমতো চমক সৃষ্টি করল। আগস্টে ঘোষণা দিয়ে অক্টোবরেই আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ মাঠে নামিয়ে ফেলল। এরপরও কি বাফুফের ঘুম ভাঙবে না? সত্যি বলতে কি ক্লাব কাপের জন্য নতুন কোনো টুর্নামেন্টের দরকার নেই। বাফুফের যে গতি তাতে সম্ভবও নয়। সুপার কাপকেই তারা আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে রূপান্তরিত করে পারে। সালাউদ্দিন ভুলে গেছেন কিনা জানি না। ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো কোটি টাকার সুপার কাপ মাঠে নামার আগে জমকালো সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, তৃতীয় আসর থেকে প্রাইজমানি শুধু বাড়বে না, সুপার কাপের আকর্ষণ বাড়াতে ভারতের ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ও কলকাতা মোহামেডানকেও  আমন্ত্রণ জানানো হবে। প্রথম সুপার কাপ আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। ফাইনালে চির প্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচ দেখতে পুরো গ্যালারি ভরে গিয়েছিল। যা আশি দশকের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। অনিয়মিত হয়ে পড়াতে সুপার কাপও আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছে। ফুটবলে উন্মাদনা আনতে বাফুফে যদি সুপার কাপকে ক্লাব পর্যায়ে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে রূপান্তরিত করতে পারে তাহলে ফুটবলের চেহারাই পাল্টে যাবে। শেখ কামাল টুর্নামেন্ট দেখে বাফুফে নড়েচড়ে বসবে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। কেননা পেশাদার লিগ বা ফেডারেশন কাপ করে এখন আর দর্শক টানা যাবে না। এ জন্য দরকার নতুনত্ব। যা চট্টগ্রাম আবাহনী দেখিয়ে দিল।

সর্বশেষ খবর