বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিলুপ্তির পথে ঐহিত্যবাহী খাবাসপুর ক্লাব

কামরুজ্জামান সোহেল,ফরিদপুর

বিলুপ্তির পথে ঐহিত্যবাহী খাবাসপুর ক্লাব

ফরিদপুরের ক্রীড়াঙ্গনের এক সময়ের আলোচিত, সারাজাগানো প্রাচীনতম পূর্বখাবাসপুর স্পোর্টস অ্যান্ড ওয়েল ফেয়ার ক্লাবটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী এ ক্লাবটি কেবলমাত্র কালের সাক্ষী হয়ে টিকে রয়েছে। আশি থেকে নব্বই দশকে এ ক্লাবটির অংশগ্রহণ ছাড়া জেলার কোনো প্রতিযোগিতাই জৌলস পেত না। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, টেবিল টেনিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন খেলাধুলায় এ ক্লাবটি অসংখ্য পুরস্কার ছিনিয়ে এনেছে। ঐতিহ্যবাহী এ ক্লাবটির পৃষ্ঠপোষকতায় বেশকিছু খেলোয়াড় ফুটবল, ক্রিকেট, হকিতে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছে। এক সময় পূর্বখাবাসপুর স্পোর্টস অ্যান্ড ওয়েল ফেয়ার ক্লাবটি দক্ষিণাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ ক্লাবের সুনাম অর্জন করেছিল। কিন্তু সেই সুনাম এখন আর নেই। এক সময় ক্লাবটিতে বিভিন্ন পুরস্কারে ঠাসা থাকলেও সেগুলোর এখন আর কোনো হদিস নেই। একটা সময় এ ক্লাবের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক হতে বিভিন্ন রকম প্রতিযোগিতা হতো। বিগত একযুগেরও বেশি সময় ধরে ক্লাবের হাল ধরার যোগ্য কোনো লোক না পাওয়ায় এতিহ্যবাহী এ ক্লাবটি তার গৌরব হারিয়ে ফেলেছে। স্থানীয়রা জানান, পূর্বখাবাসপুর মহল্লার হারুন, নুরু মিয়া, সাইদ, অলি স্যার, ননি, বক্কার, মন্টু, হালিম, আতম টুকু, আকিদুল, আ. হাই, বাকিসহ বেশকিছু উদ্যোমী তরুণ ১৯৫০ সালে পূর্বখাবাসপুর-ঝিলটুলী মহল্লার সীমানায় হিতৈষী স্কুলের সামনে এ ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেন। সরকারের কাছ থেকে প্রায় ৮ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে ক্লাবের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিকে বেশকিছু ধনাঢ্য ব্যক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় ক্লাবটি ফরিদপুর জেলায় শক্ত অবস্থান তৈরি করে। প্রতি বছর ক্লাবের পক্ষ থেকে খেলাধুলা আয়োজনের পাশাপাশি বিনোদনের জন্য ‘নাটক’ প্রদর্শনী হতো। এ ক্লাব থেকে তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের আর্থিক সহযোগিতাও করা হতো। কিন্তু কালের পরিক্রমায় ঐতিহ্যবাহী এ ক্লাবটি তার সুনাম হারাতে বসেছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্লাবটি পরিচালনার জন্য তেমন কেউ এগিয়ে না আসায় জৌলুস হারায় এ ক্লাবটি। বর্তমানে নামের উপরই টিকে আছে ক্লাবটি। ক্লাবের বেশকিছুটা জায়গা দখলে চলে গেছে। বছরের বেশির ভাগ সময়ই ক্লাবটি বন্ধ থাকে। কালে-ভদ্রে কেউ ক্লাবটি খুললেও সেখানে আর খেলাধুলার কোনো পরিবেশ নেই। ক্লাবের অর্জন বিভিন্ন টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন/রানারআপ ট্রফিগুলোও বেহাত হয়ে গেছে। নেই চেয়ার-টেবিলও। সরকারের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন ক্রীড়া সামগ্রীগুলোরও কোনো হদিস নেই। শুধুমাত্র একটি টেবিল টেনিস বোর্ড রয়েছে। সেটিও খেলার উপযোগী নয়। দিনের পর দিন ক্লাবটির প্রতি স্থানীয়দের আগ্রহ হারাতে থাকায় ক্লাবটি এখন বিলুপ্তির পথে রয়েছে। বিভিন্ন সময় ক্লাবের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দেখভাল করে থাকেন ক্রীড়াপাগল হিসেবে পরিচিত ‘রশিদ মোল্যা’ নামের এক ব্যক্তি। সে তার নিজ উদ্যোগে মাঝেমধ্যে ক্লাবটি পরিষ্কার পরিছন্ন করে থাকেন। একটি সাইনবোর্ডও লাগিয়েছেন। বিভিন্ন সময় ক্লাবটিকে রক্ষা করতে নানা জনের কাছে রশিদ মোল্যা ছুটোছুটি করেন। ফরিদপুরের গৌরব, এতিহ্যবাহী ‘খাবাসপুর স্পোর্টস অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার ক্লাবটি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে সব মহলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সর্বশেষ খবর