শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মাশরাফি সত্যি অদম্য

মেজবাহ্-উল-হক

মাশরাফি সত্যি অদম্য

ভোর থেকেই খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের টিকিট কাউন্টারে লম্বা লাইন। দীর্ঘ লাইনে সবার শেষে বাবার হাত ধরে দাঁড়িয়ে ৪-৫ বছরের শিশুটি। তার মাথায় বাংলাদেশের পতাকা আঁকা ব্যান্ড আর গালে লেখা মাশরাফি! খেলা শুরু হয়ে গেছে তখন। টস হেরে ব্যাট করছে বিসিবি একাদশ। সাত-আট জনের একটি দল দৌড়ে যাচ্ছে স্টেডিয়ামের গেটের দিকে। সবার হাতে ছোট ছোট প্ল্যাকার্ড; তাতে লেখা শাবাশ বাংলাদেশ, গর্জে ওঠো মাশরাফি!

স্টেডিয়ামের পূর্ব গ্যালারিতে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা দেখতে আসা তরুণীর হাতে সবুজ রঙে লেখা লাভ ইউ ম্যাশ! গতকাল ফতুল্লায় জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচের খেলা দেখতে আসা দর্শকের অধিকাংশই মাশরাফির ভক্ত! বোঝা গেল নড়াইল এক্সপ্রেস যখন ৭ নম্বরে ব্যাট করতে নামেন। মাশরাফি, মাশরাফি স্লোগানে যেন প্রকম্পিত হচ্ছিল খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম। কিন্তু ব্যাট হাতে মাশরাফি ভক্তদের ভালোবাসার জবাবটা দিতে পারেননি। মাত্র ১ রান করেই রান আউটের ফাঁদে পড়েন। অবশ্য এ আউটে মাশরাফির চেয়ে বেশি দায়ী অন্য প্রান্তে থাকা মুশফিকুর রহিম। ১টি শট রান নেওয়ার জন্য তিনি ম্যাশকে কল দেন। কিন্তু মুশফিক সময়মতো পৌঁছে গেলেও মাশরাফি আউট হয়ে যান। হয়তো নড়াইল এক্সপ্রেসের এ রান আউটটা শঙ্কায় ফেলে দিয়েছিল তার ভক্তদের। কেননা আগের দিনই কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে বলেছিলেন, ‘জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে একাদশে থাকতে হলে ফিটনেসের প্রমাণ দিতে হবে মাশরাফিকে।’ সে কারণেই কিনা ম্যাশের রান আউটের পর স্টেডিয়ামে যেন পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছিল!

মাশরাফি ব্যাটসম্যান নন, তাই রান করা না করা কোনো বিষয় নয়। কিন্তু যেভাবে রান আউট হয়েছেন তাতে তার নিজেরও যে কিছুটা গাফিলতি ছিল না তা নয়। আর একটু জোরে দৌড় দিলে হয়তো রান আউটের হাত থেকে রক্ষাও পেয়ে যেতেন। তবে ব্যাটিংয়ে সুবিধা করতে না পারলেও বোলিংয়ের সময় ঠিকই ভক্তদের আশ্বস্ত করেছেন মাশরাফি! প্রথম স্পেলেই ৪ ওভার বোলিং করেন। মাত্র ১৬ রান দিয়ে ১টি মেডেনও আদায় করে নিয়েছেন। দ্বিতীয় স্পেলে ৩ ওভার বোলিং করে রান দিয়েছেন মাত্র ১৫। ৭ ওভারের স্পেলে রান মাত্র ৩১। সপ্তাহ তিনেক আগেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মাশরাফি। অদম্য মানসিকতার কারণে ফিরেও এসেছেন দ্রুতই। অথচ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে পুরোপুরি সুস্থ হতে অনেক সময় লাগে। এর আগে সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মাসখানেক বিশ্রামের পর তারা মাঠে ফিরে ছিলেন। কিন্তু মাশরাফি বলেই এত দ্রুত ফেরা সম্ভব হয়েছে। মাশরাফি সম্পর্কে প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘শুধু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে বলেই নয়, গত তিন মাসে কোনো অনুশীলন করার সুযোগ পাননি মাশরাফি। একটা ছেলে যখন অনেক দিন মাঠের বাইরে থাকে তার নিজেকে ফিরে পেতে সময় লাগে। তাই মাশরাফিকে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ দিয়েছি।’

খেলোয়াড়মাত্রেরই বড় শত্র“ ইনজুরি। কিন্তু এ ইনজুরিকে বন্ধু বানিয়ে নিয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। তাই তো পায়ে সাতবার অস্ত্রোপচারের পরও খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। একজন পেসারের জন্য এটি বিরল ঘটনা। সব শেষ অস্ত্রোপচারের সময় মাশরাফির অস্ট্রেলীয় শল্য চিকিৎসক ডেভিড ইয়াং তো রাখঢাক না করে সরাসরি বলেই দিয়েছিলেন, আর একবার অস্ত্রোপচার হলে ম্যাশ চিরদিনের জন্য পঙ্গুও হয়ে যেতে পারেন। তখন মাশরাফি বলেছিলেন, ‘দেশের হয়ে খেলতে খেলতে যদি আমি মারাও যাই তবু খেলা বন্ধ করতে পারব না।’ দেশ ও মানুষের প্রতি কতটা ভালোবাসা থাকলে কোনো ক্রিকেটার এভাবে কথা বলতে পারেন! আর সেই মাশরাফি ডেঙ্গুর কাছে হার মানবেন, তা কী করে হয়! তার পরও ফিটনেস একটা বড় ব্যাপার। সে কারণেই প্রস্তুতি ম্যাচের দিকে তাকিয়ে ছিলেন কোচ ও নির্বাচকরা। প্রস্তুতি ম্যাচে ৭ ওভার বোলিং করেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন ম্যাশ। নড়াইল এক্সপ্রেস আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন কঠোর অনুশীলন ও দৃঢ় মনোবল থাকলে জয় করা যায় ‘অসম্ভব’কেও।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর