শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মাশরাফির লক্ষ্য হোয়াইটওয়াশ

মেজবাহ্-উল-হক

মাশরাফির লক্ষ্য হোয়াইটওয়াশ

গতকাল সন্ধ্যায় ফতুল্লা স্টেডিয়ামে ফ্লাড লাইটে অনুশীলনে ফুটবল খেলছেন মাশরাফি মুশফিক নাসির আরাফাত সানিরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

হোয়াইটওয়াশের কথাটা শোনার পর স্মিত হাসলেন মাশরাফি। বোঝাই গেল প্রশ্নটি তার মনে ধরেছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক যে পারফরম্যান্স তাতে জিম্বাবুয়ের মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শুধু সিরিজ জয়ে ক্রিকেটভক্তদের মনের আশ মেটার কথা নয়! তা মাশরাফিও জানেন। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে আজ হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্য নিয়েই যে টাইগাররা মাঠে নামছেন, তা তো ‘ওপেন সিক্রেট’! তার পরও মাশরাফি ভদ্রতা দেখিয়ে কথার লাগাম টেনে বললেন, ‘যদিও সবাই হোয়াইটওয়াশের কথাই চিন্তা করছে তার পরও খেলোয়াড়দের মধ্যে এমন ভাবনা আসা ঠিক নয়। এটা অনেক সময় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আমাদের লক্ষ্য এখন প্রথম ম্যাচ ঘিরে। জানি প্রথম ম্যাচের ফলের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে।’

তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানো, তারপর ঘরের মাঠে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ক্রিকেট পরাশক্তিকে ধারাবাহিকভাবে নাস্তানাবুদ করার পর জিম্বাবুয়ের মতো ‘পুঁচকে’ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ভক্তদের অলিখিত দাবি ‘বাংলাওয়াশ’!

কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচে পরাজয়টা ভাবনার জগৎকে কিঞ্চিৎ সংকুচিত করে দিচ্ছে! নামে হোক না বিসিবি, সে দলে অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি তো ছিলেনই। তা ছাড়া ঘোষিত ১৪ সদস্যের জাতীয় দল থেকে মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাস, সাব্বির রহমান, ইমরুল কায়েস, জুবায়ের হোসেন লিখনও ছিলেন। তার পরও পরাজয়টা উদ্বিগ্ন করছে মাশরাফিকেও। তবে ওই ম্যাচে ফলাফলের চেয়ে প্রস্তুতিটাকেও বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘হারতে আর কার ভালো লাগে? সেটা যে কোনো ম্যাচেই হোক কিংবা যে কোনো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেই হোক। তবে এ ম্যাচে আমাদের প্র্যাকটিসটা ভালোই হয়েছে। মুশফিক শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করেছে। ইমরুল তো হাফ সেঞ্চুরি করেছে। লিটনও রান পেয়েছে। যদিও সাব্বির ভালো করতে পারেনি। তবে আমি বলব, অনুশীলন ভালোই হয়েছে।’

নিজের প্রস্তুতি সম্পর্কে নড়াইল এক্সপ্রেস বলেন, ‘যদিও এখনো আমি শতভাগ সুস্থ নই। তার পরও খেলতে পারব। প্রস্তুতি ম্যাচে ৩৫ ওভার ফিল্ডিং করেছি সব মিলে। বোলিং করেছি ৭ ওভার। একদিন পরই ম্যাচ, তাই ঝুঁকি নিতে চাইনি।’

 

 

প্রস্তুতি ম্যাচে পরাজয় নিয়ে মাশরাফি উদ্বিগ্ন হলেও মূল লড়াইয়ে চিত্র অন্য রকম হবে বলেই আশা করছেন অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘হারলে সব সময় খারাপ লাগে। ওরা ভালো ব্যাটিং করেছে। উইকেট দেখে আমার মনে হয়েছিল সাড়ে তিন শ’ স্কোর হওয়ার মতো। কিন্তু মাঝে বেশি উইকেট পড়ে যাওয়ায় আমাদের রান কম হয়েছে। তবে আসল লড়াইয়ে চিত্র অন্য রকম থাকবে। আমাদের বোলাররা সবাই ফর্মে। ভালো ব্যাটসম্যান আছে। তাই সমস্যা হবে না। কিন্তু আমাদের সেরা পারফরম্যান্সটাই প্রদর্শন করতে হবে। আমি জয়ের ব্যাপারে আমাবাদী।’

যে কোনো ম্যাচের আগে পরিকল্পনায় থাকে প্রতিপক্ষের দুর্বল দিকগুলো খুঁজে বের করা, সেই সঙ্গে নিজেদের শক্তিমত্তার ওপর বিশ্বাস রাখা। মাশরাফিও উভয় দিকেই খেয়াল রাখছেন। তবে প্রস্তুতি ম্যাচে পরিষ্কার বোঝা গেছে সাকিব আল হাসানের অভাবটা। ম্যাশ বলেন, ‘সাকিব হচ্ছে এখন এক নির্ভরতার নাম। শুধু দল নয়, পুরো দেশ তাকিয়ে থাকে সাকিবের দিকে যে সে কিছু একটা করবে। তবে আমি চাই ব্যাটিং অর্ডারে সাকিব পর্যন্ত যেন আমাদের যেতে না হয়। আর বোলিংয়ে তো ওকে লাগবেই।’

সাম্প্রতিক বাংলাদেশের যে সফলতা তাতে বড় অবদান আছে সৌম্য সরকারের। কিছু দিন থেকে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন এই ওপেনার। কিন্তু অনুশীলনের সময় বাম পাঁজরে আঘাত পেয়ে সিরিজই শেষ হয়ে গেছে তার। তবে মাশরাফি সৌম্যর অভাববোধ করলেও এ বিষয়টি নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন। তিনি বলেন, ‘শুধু আমি কেন, পুরো দলই সৌম্যকে মিস করবে। দুর্দান্ত এক ব্যাটসম্যান। তবে এও ঠিক, সৌম্যর ইনজুরিতে অন্যদের জন্য সুযোগ তৈরি হয়ে গেল। তাই আমি পেছনে তাকাতে চাই না। দলে যারা আছে তাদের নিয়েই জয়ের চেষ্টা করব।’

বড় দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত জয় পাওয়ায় এখন টাইগারদের কাছে ‘জয়’টা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তাই জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে চাইবে বাংলাদেশ। ছোট দলের বিরুদ্ধে বড় দলের আচরণ যেমন হয়। আধিপত্য বিস্তার প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেন, ‘প্রতিটি ম্যাচেই আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে হয়। খেলতে নামার পর আপনি যখন ভালো করবেন তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বিষয়টা চলে আসে। তবে আমার কাছে সবার আগে যে বিষয়টা সেটা হচ্ছে জয়। জিততেই হবে।’

প্রতিপক্ষ হিসেবে জিম্বাবুয়েকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে ম্যাশ বলেন, ‘ওদের ব্যাটিং ভারসাম্যপূর্ণ। মনে হয় ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হবে। তবে এসব নিয়ে ভেবে লাভ নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেমনই হোক জয়ই আসল কথা।’

সর্বশেষ খবর