রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সেঞ্চুরি করে ফর্মে

মেজবাহ্-উল-হক

সেঞ্চুরি করে ফর্মে

দলের প্রয়োজনে আবারও জ্বলে উঠলেন মুশফিকুর রহিম। গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের সহজ জয়ে তিনি অবদান রাখেন ১০৭ রানের জ্বলজ্বলে এক ইনিংস খেলে - রোহেত রাজীব

শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের পূর্ব গ্যালারিতে হঠাৎ ভেসে উঠল বিশাল আকারের লাল-সবুজ পতাকাটি। পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া সূর্যের রক্তিম আভা এবং ফ্লাড লাইটের মৃদু আলোয় তখন স্টেডিয়ামে এক মোহনীয় পরিবেশ। লাউড স্পিকারে বাজছে পপ মিউজিক, তালে তালে গ্যালারিতে চলছে নৃত্য। পতাকার দিকে তাকিয়ে  মনে হচ্ছিল যেন সবুজ ভেদ করে গ্যালারিতে উদিত হয়েছে আরেকটি নতুন সূর্য!

নাহ্! গ্যালারিতে নয়। গতকাল পড়ন্ত বিকালে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ঠিকই আরেকটি সূর্য উঠেছিল, তবে সেটা ২২ গজে। যার আলো শেরে বাংলার গ্যালারি আলোকিত করে ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরিটা কার না ভালো লেগেছে বলুন! রান খরায় ভোগার পরও দলের বিপদের সময় ব্যাট হাতে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের সবচেয়ে কঠিন উইকেটে খেললেন ১০৭ রানের দারুণ এক ইনিংস। ১০৯ বলে, ৯টি বাউন্ডারির সঙ্গে ছিল একটি বিশাল ছক্কা। মুশির ক্যারিয়ারে চতুর্থ সেঞ্চুরি এটি। মুশফিক নিজে সেঞ্চুরি করার পাশাপাশি তামিম ইকবাল ও সাব্বির রহমানের সঙ্গে দুটি বড় জুটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই জুটি-ই গতকাল বাংলাদেশের বড় ইনিংসের ভীত গড়ে দেয়। তবে মুশফিকের এই সেঞ্চুরিটি আগের তিন সেঞ্চুরির চেয়ে অবশ্য অনন্য। কেননা ‘পুঁচকে’ জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে কাল প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বার বার বিপদে পড়েছে। কিন্তু মুশফিক কাঁধে গুরু দায়িত্ব নিয়ে এক প্রান্ত আগলে রাখার পাশাপাশি রানের চাকাও সচল রেখেছিলেন। মুশফিক যখন ব্যাট হাতে মাঠে নামেন তার আগেই সাজঘরে ফিরেছেন টপ অর্ডারের দুই তারকা ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। স্কোর বোর্ডে তখন ৩০ রান। তামিমকে নিয়ে ৭০ রানের জুটি গড়ে সেবার ধাক্কাটা ভালোভাবেই সামাল দেন মুশি। কিন্তু দলের রান একশ পূরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আউট হয়ে যান তামিম। ভরসার প্রতীক সাকিব আল হাসানও সুবিধা করতে পারলেন না। ২১ বলে ১৬ রান করে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন তিনি। ২৩ রানের ব্যবধানে দুই বন্ধু তামিম-সাকিবকে হারিয়ে তখন মহাবিপদে বাংলাদেশ। এমন কঠিন পরিস্থিতিও অনুক‚লে নিয়ে আসেন মুশফিক। পঞ্চম উইকেটে সাব্বিরের সঙ্গে গড়েন ১১৯ রানের জুটি। তবে এই উইকেটে রান করা যে মোটেও সহজ ছিল না তা ম্যাচ শেষে জানালেন মুশফিক, ‘রান করা যাচ্ছিল না ঠিক মতো। তবে এমন উইকেটে বড় ইনিংস খেলতে পেরে ভালোই লাগছে।’ মুশফিকের এই সেঞ্চুরিটা অবশ্য সমালোচনার এক উত্তম জবাবও। বিশ্বকাপের পর পাকিস্তান সিরিজে তিন ওয়ানডেই দারুণ ব্যাটিং করেছেন তিনি। একটি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি এবং শেষ ম্যাচে ছিল অপরাজিত ৪৯ রান। কিন্তু পরের দুই সিরিজে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে মুশফিককে তার চেনা রূপে দেখা যায়নি। সুযোগ পেয়ে সমালোচকরা তাদের কাজে মেতে উঠেছিলেন। কিন্তু মুশফিক চুপচাপ সব সমালোচনা সহ্য করে গেছেন। আর নিজের সেরা ফর্ম ফিরে পেতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। জিম্বাবুয়ে সফরের জন্য প্রশিক্ষণ শিবিরে সবার আগে উপস্থিত হতেন মুশি। এই সফরের প্রতিটি ম্যাচ দিবা-রাত্রির হওয়ায় শিডিউলে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন ছিল বিকালে। কিন্তু মুশফিক অনুশীলন শুরু করতেন সকাল থেকেই। অবশেষে কঠোর অনুশীলনের পুরস্কার পেয়ে গেলেন। সিরিজের প্রথম ম্যাচেই ক্যারিশম্যাটিক সেঞ্চুরি। সমালোচনার জবাবটাও মুশফিক ব্যাট হাতেই দিলেন।  সেঞ্চুরি করার পর মুশফিক যেন অনেকটা নির্ভার। ম্যাচ  শেষে বলেন, ‘যদিও আমার কখনোই মনে হয়নি আমি অফ ফর্মে। তবে বড় ইনিংস খেলতে পারছিলাম না। অবশেষে বড় ইনিংস খেলতে পেরে ভালোই লাগছে।’

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ২৭৩/৯, ৫০ ওভার (তামিম-৪০, মুশফিক-১০৭, সাকিব-১৬, সাব্বির-৫৭, মাশরাফি-১৪, আরাফাত-১৫)।

জিম্বাবুয়ে : ১২৮/১০, ৩৬.১ ওভার (জঙ্গি-৩৯, চিগুম্বুরা ৪১। সাকিব-৪৭/৫, মাশরাফি-১৩/২, আল-আমিন-১৫/১, নাসির-৬/১)।

ফল : বাংলাদেশ ১৪৫ রানে জয়ী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর