রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

১৪ বছরের মাশরাফিনামা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

চৌদ্দ বছর আগের কথা। টেস্ট আঙ্গিনায় বাংলাদেশ তখন শিশু। মাত্র ষষ্ঠ টেস্ট খেলতে নেমেছে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সেবার বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার আর হিথ স্ট্রিকদের জিম্বাবুয়ে। হিথ স্ট্রিকরা তখন ক্রিকেট বিশ্বের পরাশক্তির নিয়মিতই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছিল। তবে তারা বাংলাদেশের বিপক্ষে ঢাকা টেস্ট খেলতে নেমে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতারই মুখোমুখি হলো। শিশু বাংলাদেশের সঙ্গে ড্রতেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো জিম্বাবুয়েকে। যদিও ম্যাচের শেষ দুই দিন খেলা হয়নি বৃষ্টিতে। তারপরও টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ড্র ভক্তদের কাছে বিশেষ অর্জন হিসেবেই মর‌্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশের সেই প্রথম ড্রয়ের ম্যাচেই অভিষেক এক তরুণের। তিনি মাশরাফি বিন মর্তুজা। ২০০১ সালের ৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে নাইমুর রহমান দুর্জয়দের সঙ্গে খেলতে নামেন ১৮ বছরের এ তরুণ। সেই থেকে শুরু। এরপর বহু বছর ধরেই বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণে এক অপরিহার্য নাম হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন মাশরাফি।

ছয় ছয় বার পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে। হাঁটুতে এখনো রয়েছে দগদগে ক্ষত। এ কারণে বার বার জাতীয় দলের বাইরে ছিটকে গেছেন। এরপরও দিব্যি জাতীয় দলের প্রয়োজনে নিজেকে মাঠের লড়াইয়ে উজাড় করে দেন মাশরাফি। ব্যাট হাতে জ্বলে উঠেন। চার-ছক্কায় ভক্তদের মন ভরানোর পাশাপাশি দলকে এনে দেন বিজয়ের পুঁজি। আবার বল হাতেও প্রতিপক্ষের হৃদয়ে কাঁপন ধরান। গতকালই যেমন ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ৮ বলে এক ছক্কা ও এক চারে ১৪ রান করেন। বল হাতেও বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন তিনিই। গতকাল মাশরাফির বোলিং দেখে ধারাভাষ্যকাররা বলছিলেন, বার বার ইনজুরির কারণে তার ফিটনেস অনেকটাই কমে গেছে। তবে এখনো সে মানসিক শক্তিতে অনেকের চেয়ে এগিয়ে আছে। আর মাশরাফি তো বলেই দিলেন, আমার মতো এমন ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়ার পরও ক্রিকেট বিশ্বে কেউ কোনোদিন মাঠে নামেনি। এতবার অপারেশন হওয়ার পরও মাশরাফি মাঠে যাচ্ছেন কেবলই দেশের প্রতি, ভক্তদের প্রতি পরম ভালোবাসা থাকার কারণেই। মাশরাফি ওয়ানডেতে ২০০ উইকেট শিকার করেছেন। টেস্টে ৭৮টি। তবে কেবল উইকেটের পরিসংখ্যান দিয়ে একজন মাশরাফিকে পরিমাপ করতে যাওয়া হবে ভুল। বরং তার সঙ্গে যোগ করতে হবে মানুষ মাশরাফিকেও। যা তাকে অন্যদের চেয়ে অনেকটা আলাদা করে তুলে ধরে। এই মানুষ মাশরাফিই যখন ক্রিকেটার হিসেবে ভক্তদের সামনে আবির্ভূত হন তাকে মনে হয় আরও মহত্তর। ক্রিকেটাঙ্গনে মাশরাফির ১৪ বছর কেটে গেল। সামনের দিনগুলো তার আরও সুন্দর হবে বলেই ভক্তদের প্রত্যাশা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর