শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

জুবায়েরের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

জুবায়েরের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন

প্রথম টি-২০ ম্যাচে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে একে অপরকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন মাশরাফি ও মাহমুদুল্লাহ -রোহেত রাজীব

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে জুবায়ের হোসেনকে খেলাতে চেয়েছিলেন কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে। কী কারণে খেলাবেন, তার অনেক ব্যাখ্যাও ছিল কোচের। কিন্তু নির্বাচক প্যানেল সেই যুক্তিতে সায় দেয়নি। ফলে বিশ্বকাপ খেলা হয়নি জুবায়েরের। প্রিয় ক্রিকেটারকে খেলাতে না পারায় গোস্বা প্রকাশ করেছিলেন হাতুরাসিংহে। তবে প্রিয় ক্রিকেটারকে খেলানোর চেষ্টার কমতি যে নেই কোচের, জিম্বাবুয়ে সিরিজই তার জ্বলন্ত উদাহরণ। তবে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে কাল টি-২০ ক্রিকেটে তার অভিষেকে। একাদশে কোনো বাঁ হাতি স্পিনার না রাখাতেও জন্ম হয়েছে বিস্ময়ের।

৬ টেস্ট ও ৩ ওয়ানডে খেলা জুবায়েরকে নিয়ে ওয়ানডে সিরিজের স্কোয়াড ঘোষণা করে নির্বাচক প্যানেল। তাকে দলভুক্ত করার কোনো ব্যাখ্যা ছিল না নির্বাচকদের। মুখে না বললেও বোর্ডের বেশ কয়েকজন পরিচালক জানান, কোচের ইচ্ছাতেই স্কোয়াডে নেওয়া হয়েছে জুবায়েরকে। ভিতরকার খবর অন্যটি! জুবায়েরকে স্কোয়াডে রাখার বিষয়ে কোচের ব্যাখ্যা ছিল-জুবায়েরের বোলিংয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে, সেগুলোর উন্নতি করতেই তাকে নেওয়া উচিত। কোচের ইচ্ছায় নিয়েও বিস্ময়করভাবে ওয়ানডে সিরিজে খেলানো হয়নি। মজার বিষয় দ্বাদশ ম্যান হিসেবে প্রতিটি ম্যাচেই ছিলেন জুবায়ের। এই না খেলানোয় প্রশ্ন উঠেছে অনেক। তারই ফল হয়তো টি-২০ ম্যাচে অভিষেক!

অভিষেকের কথা গতকাল সকালেও বোধহয় জানতেন না জুবায়ের। টিম ম্যানেজমেন্টও কোনো আভাস দেয়নি কাউকে। তাই কাল ম্যাচের আগে যখন জুবায়েরের মাথায় ক্যাপ পরিয়ে দেওয়া হয়, তখন বেশ নাটকের সৃষ্টি হয়। দলের সবচেয়ে বয়োকনিষ্ঠ ক্রিকেটারকে অভিনন্দন জানান অন্যরা মাথায় হাত বুলিয়ে, পিঠে চাপড় দিয়ে! বিস্ময়কর অভিষেক। কিন্তু নানা কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে জুবায়েরের কাছে। জিম্বাবুয়ে ইনিংসের ১০ নম্বর ওভারে বোলিংয়ে আসেন জুবায়ের। প্রথম বল গুগলি করে বোকা বানান ওয়ালারকে। অল্পের জন্য বেঁচে যান ওয়ালার। পরের বল থেকে হঠাৎ চেপে বসেন জুবায়েরের বলে। দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি এবং পরের দুই বলে দুই ছক্কা। সব মিলিয়ে জুবায়েরের অভিষেক ওভারে ১৭ রান তুলে নেন ওয়ালার। জুবায়ের যখন বোলিংয়ে আসেন, তখন স্কোরবোর্ডে ৯ ওভারে ৩৯ রান। ওয়ালারের স্ট্রাইকের পর মুহূর্তেই ৬ ওভারে ৬৬ রান যোগ হয় স্কোরকার্ডে। অভিষেক ওভারের ব্যর্থতা কাটিয়ে জুবায়ের পাল্টা আঘাত হানেন ১৬ নম্বর ওভারে। ওই এক ওভারে মাত্র ৩ রানের খরচে তুলে নেন প্রতিপক্ষের দুই উইকেট। এই উইকেট তার বিস্ময়কর অভিষেকের সমালোচনার কিছুটা জবাব হলেও সত্যিই কি তাই?

কাল জুবায়েরের অভিষেক যেমন বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে, তেমনি বিস্মিত করেছে বাঁ হাতি স্পিনার ছাড়া একাদশ সাজানো দেখে। বাংলাদেশের বোলিংয়ের মূল অস্ত্র স্পিন। তাও আবার বাঁ হাতি স্পিন। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে তিন বাঁ হাতি স্পিনার দিয়ে যেখানে স্কোয়াড সাজানো হয়েছিল, কাল বাঁ হাতি স্পিনার ছাড়া একাদশ খেলানোয় চমকে উঠেছেন মাঠে উপস্থিত ক্রিকেটপ্রেমীরা। অথচ রয়েছেন ইনফর্ম বাঁ হাতি স্পিনার আরাফাত সানি। যিনি ওয়ানডে সিরিজে ধারাবাহিকভাবে বোলিং করেছেন। শুধু বাঁ হাতি স্পিনার না রাখার বিষয়টিই নয়। টানা দুটি হাফসেঞ্চুরি হাঁকানো ইমরুল কায়েসকে সাজঘরে বসিয়ে রাখায় জন্ম নিয়েছে প্রশ্নের। ইমরুলের জায়গায় কাল তামিমের সঙ্গী হিসেবে খেলানো হয়েছে এনামুল হক বিজয়কে। বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে আহত হয়ে সেই যে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছিলেন বিজয়, এরপর আর সুযোগ পাচ্ছিলেন না। এবারও সুযোগ পাননি শুরুতে। প্রিয় কন্যাসন্তানকে দেখতে সাকিব আল হাসান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ায় শেষ বেলায় সুযোগ পান। সেই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে পারেননি রানআউট হয়ে।

জুবায়েরের একাদশে থাকা, কিংবা ইমরুলের বাদ পড়া এবং কোনো বাঁ হাতি স্পিনার না খেলানোয় একটি বিষয়ের আভাস মিলেছে, একাদশ সাজানো হচ্ছে টি-২০ বিশ্বকাপের লক্ষ্যে। বিশ্বকাপে কি খেলবেন জুবায়ের? গতকাল ম্যাচ খেলার পর প্রশ্নটি নতুন করে জন্ম নিল।

সর্বশেষ খবর