শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

এমন ভরাডুবিতে ক্ষুব্ধ মানিক-সাব্বির

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এমন ভরাডুবিতে ক্ষুব্ধ মানিক-সাব্বির

জেতার প্রত্যাশা নিয়ে মামুনুলরা তাজিকিস্তান উড়ে যান। ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে কোচ ফ্যাবিও লোপেজ ও অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম বলেছিলেন, ঘরের মাঠে তাজিকরা অবশ্যই শক্তিশালী। কিন্তু লক্ষ্য আমাদের থাকবে জয়। সেখানকার আবহাওয়া একটা ফ্যাক্টর ছিল। তারপর আবার টার্ফে খেলা। এমন সমস্যা দেখেও লোপেজ বলেন, ছেলেরা ভালো খেলতে পারলে এগুলো কোনো সমস্যা নয়। জয় নিয়েই ফেরা যাবে। ১৭ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়া ও মার্চে আম্মানে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে জর্ডানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই মিশন শেষ হবে। বাস্তবতার কারণে দুই শক্তিশালী দলের বিপক্ষে জেতা সম্ভব নয়। পার্থে ও ঢাকায় তাদের কাছে শোচনীয় হার মানে। সুতরাং অকল্পনীয় কিছু না ঘটলে অস্ট্রেলিয়া বা জর্ডানের বিপক্ষে জয়তো দূরের কথা ড্র করাও সম্ভব নয়। ভরসা ছিল একটাই- তাজিকিস্তান। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। ঢাকায় ১-১ গোলে ড্র করলেও দুশানে অ্যাওয়ে ম্যাচে মামুনুলরা দাঁড়াতেই পারেননি। ৫-০ গোলে হেরে গেছেন তারা।

বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স কখনোই সুখকর ছিল না। মাত্র চার ম্যাচ জেতার কৃতিত্ব রয়েছে। তাই কোচ বা অধিনায়ক জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী থাকলেও দুশানবেতে তাজিকরাই ছিলেন ফেবারিট। তবে মামুনুলরা এমনভাবে বিধ্বস্ত হবে তা কেউ ভাবতেও পারেনি। কথা হচ্ছে কেন এমন পরিণতি ঘটল। জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ও দেশের অন্যতম সেরা কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, একে তো তাজিকিস্তানে প্রচণ্ড শীত। তা আবার টার্ফে খেলা। তাই ম্যাচের আগের দিন টকশোতে বলেছিলাম, এমন প্রতিকূল অবস্থায় বাংলাদেশকে শুরু থেকে সতর্ক হয়ে খেলতে হবে। শুরুতেই যদি গোল খেয়ে যায় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি হারিয়ে ফেলবে। বৃহস্পতিবার তাই হয়েছে। ১ গোল খাওয়ার পর পুরো দলই এলোমেলো হয়ে যায়। প্রতিপক্ষ বার বার আক্রমণ করার পরও কাউকে মার্কিংয়ে রাখা যায়নি। এরপর আবার শীতের মধ্যে হালকা বৃষ্টি। এতে করে খেলোয়াড়রা বডি কন্ট্রোলও রাখতে পারেননি। মানিক বলেন, ঢাকায় ১-১ গোলে ড্র হওয়াতে অনেকে ভেবেছিলেন, অ্যাওয়ে ম্যাচে তাজিকিস্তানকে হারানো সম্ভব। কোচ ও অধিনায়ক সেই আশার বাণী শুনিয়ে যান। বাস্তবতা হলো ঢাকার ফলাফলই তাজিকদের সতর্ক করে দেয়। পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামে তারা। তাতে সফলও হয়েছে। আশ্চর্য লেগেছে কোনো পজিশনেই কেউ ভালো খেলতে পারেনি। বিশকেকে কিরগিজস্তানের কাছে হারলেও মামুনুলরা মোটামুটি ভালোই খেলেছিল।

এক আবহাওয়ার কারণেই কি এমন ফল। যদি কেউ বলেন এটাই একমাত্র কারণ তা হবে হাস্যকর। আসলে দুশানে বাংলাদেশ ছিল পুরোপুরি ফ্লপ। সত্যিই আমি মামুনুলদের এমন পারফরম্যান্সে হতাশ। এ ক্ষেত্রে কোচের সমালোচনা করাটা ঠিক হবে না। কেননা ছেলেরা খেলতে না পারলে কোচ কী করবেন। তারপরও কৌশলের কিছু ত্রুটি ছিল বলে আমি মনে করি। আর এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে হেসে-খেলে জয় পেয়েছে তাজিকিস্তান।

জাতীয় দলের সাবেক মাঠকাঁপানো ফুটবলার সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালি সাব্বির বলেন, দেখেন ক্রিকেটে শুধু জয়-জয়কার। আর ফুটবলে শুধুই হতাশা। এ নিয়ে তাই কথা বলতে ইচ্ছা করে না। তাজিকিস্তানের কাছে ৫-০ গোলে হারাতে অনেকে আক্ষেপ করছেন। কিন্তু আমি তো বলব এটা স্বাভাবিক ঘটনা। কেননা তাজিকিস্তানের বিপক্ষে ছেলেরা যে জিতবে সেভাবে কি তাদের তৈরি করা হয়েছে। বিদেশি কোচ আনলেই ফুটবলের চেহারা কি পাল্টে যাবে? এত সহজ নয়। সালাউদ্দিন ভাই ২০২২ সালে বিশ্বকাপ খেলার টার্গেট করেছেন। হাসি লাগে তার মতো ফুটবল জ্ঞানী লোক এমন আশা করেন কীভাবে? উনার কাছে আমার প্রশ্ন, ফুটবল যেভাবে চলছে তাতে ২০২২ সালে বিশ্বকাপ খেলা সম্ভব? তাজিকিস্তানের কাছে এমন হারে আমি মোটেই হতাশ হইনি। কারণ এটাই বাস্তবতা। সত্যি কথা বলতে কি ফুটবলের বর্তমান অবস্থা দেখে আমার চোখে পানি এসে যায়। জানি না এভাবে ফুটবল আর কত দিন চলবে?

সর্বশেষ খবর