রবিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

জয় দিয়ে মধুর সমাপ্তির প্রত্যয়

মেজবাহ্-উল-হক

জয় দিয়ে মধুর সমাপ্তির প্রত্যয়

সোনারগাঁও হোটেলে গতকাল তিন তারকা মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহিম ও সাব্বির রহমান - রোহেত রাজীব

উত্তর জানা থাকার পরেও ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়কের কাছে একটা অবধারিত প্রশ্ন থাকে, লক্ষ্য কি? নিশ্চয়ই কেউ পরাজয়ের টার্গেট নিয়ে খেলতে নামেন না! কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সফরের শেষ ম্যাচের আগে তো কোনো সংবাদ সম্মেলনই হলো না। আর হলেও কি, টার্গেট সম্পর্কে প্রশ্নটা করা হতো? 

ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচ এবং টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে টাইগারদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিদ্ব›িদ্বতাই করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। যেকোনো খেলায় জয়-পরাজয় থাকবেই, তাই বলে এমন অসহায় আÍসমর্পণ? ম্যাচ নিয়ে যেন দর্শকরাও আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছেন। এমন এক ম্যাচের আগে নিশ্চয় মাশরাফির কাছে লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হতো না। তারপরেও কিন্তু আজকের ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি টাইগারদের সফল বছর এই ২০১৫ সালের শেষ ম্যাচ।

বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে উড়ন্ত জয় দিয়ে শুরু হয়েছিল বছর। তারপর একের পর এক সাফল্য এসে গড়াগড়ি খেয়েছে টাইগারদের পদতলে। বছরের প্রথম টুর্নামেন্ট বিশ্বকাপে দুর্দান্ত দাপট দেখিয়ে ইংল্যান্ডের মতো ক্রিকেট পরাশক্তিকে বিদায় করে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল বাংলাদেশ। তারপর ঘরের মাঠে টানা তিন ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো তিন ক্রিকেট পরাশক্তির বিরুদ্ধে টানা সিরিজ জয়। এই জিম্বাবুয়েকে ওয়ানডে সিরিজেও বাংলাওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচে টি-২০ সিরিজের প্রথমটিতে দারুণ জয় পেয়েছে টাইগাররা। আজ শেষ ম্যাচ। তাই এ ম্যাচে প্রতিপক্ষকে একটুও ছাড় দিতে রাজি নন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। বছরের শেষ ম্যাচটি জয় পেতে মরিয়া টাইগাররা।

টি-২০ ম্যাচ বলেই জিম্বাবুয়েকে এখনো হালকাভাবে দেখার কিছু নেই। কেননা বৈচিত্র্যময় ক্রিকেটে সবচেয়ে অনিশ্চয়তার ফরম্যাট টি-২০। এখানে কখন কি ঘটে বলা কঠিন। অনেক ভালো অবস্থা থেকে হঠাৎ দুই-তিনটা উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়তে পারে বড় দলও। তাছাড়া প্রথম ম্যাচটির কথা চিন্তা করলেই সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। বোলারদের দাপুটে বোলিংয়ে মাত্র ১৩১ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। টি-২০তে ১৩২ রানের টার্গেট আহামরি কিছু নয়। কিন্তু ৮০ রানে টপাটপ বাংলাদেশের ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে তো ভয়ই পেয়েছিলেন দর্শকরা। যদিও শেষ ম্যাচে আর উত্তেজনা সৃষ্টি হয়নি। তবে বিপদের গন্ধ পেয়েছিল বাংলাদেশ। তাই আজকের ম্যাচে আরও বেশি সাবধান হয়েই মাঠে নামবেন টাইগাররা।

 

সামনে তিন তিনটি টি-২০ টুর্নামেন্ট। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল), এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপ। কিন্তু বাংলাদেশ ওয়ানডেতে যতটা আÍবিশ্বাসী ততটা নয় টি-২০তে। তাই এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টের আগে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচটি আÍবিশ্বাসী হওয়ার

জন্য বড় সুযোগ। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা তো সিরিজ শুরুর আগেই দুই ম্যাচের এই সিরিজকে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন।

বিপিএলে ক্রিকেটারদের

 ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ঝুলিটা বৃদ্ধি পাবে বটে। কিন্তু জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা তো আর এক দলে খেলবেন না! তবে এশিয়া কাপ এবার প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হবে টি-২০ ফরম্যাটে। তাই বিশ্বকাপের আগে আরেকটি সুযোগ থাকবে। কিন্তু টাইগাররা চাচ্ছেন দুই ম্যাচেই জিম্বাবুয়ে হারিয়ে এশিয়া কাপে একটা ভালো ফল করা যায় কিনা! তারপর মিশন-বিশ্বকাপ।

আজ জিম্বাবুয়েকে হারাতে পারলে সিরিজ জয়ের পাশাপাশি ওয়ানডের পর টি-২০তেও বাংলাওয়াশ হয়ে যাবে সফরকারীরা। তবে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে আজকের ম্যাচটি দলের তরুণ ক্রিকেটারদের ভালো করার আরেকটি সুযোগ বলে মনে করেন মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে এটা আমাদের শেষ সুযোগ। বিশেষ করে তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য ভালো করার আরেকটি সুযোগ, যারা চাপের মধ্যে আছেন এই ম্যাচে ভালো করে যাতে আÍবিশ্বাসী হতে পারেন।’

এ পর্যন্ত সব ম্যাচে হারলেও শেষ ম্যাচে জয় নিয়ে দেশে ফিরতে চাইবে জিম্বাবুয়ে। তাছাড়া আগের ম্যাচে হারলেও সেখান থেকে আÍবিশ্বাসও পেতে পারে সফরকারীরা। কেননা বাংলাদেশ জয় পেলেও মাত্র ৩১ বলে ৬৮ রানের সাইক্লোন ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছেন জিম্বাবুয়ের ওয়ালার। তাছাড়া বোলিংয়ে ৮০ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়েও তারা একটা সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। তাই আজকের ম্যাচে জয়ের ব্যাপারে খানিকটা আশাবাদী ওয়ালা। জিম্বাবুইয়ান এই ব্যাটসম্যান বলেন, ‘আমাদের আরও বেশি রান করতে হবে। আর বোলিংয়ে শুরুটা করতে হবে ভালো। সেটা করতে পারলে আশা করি জয় পাওয়া খুব কঠিন হবে না।’ তবে আজ মাঠেই দেখা যাবে, শেষ ম্যাচ জিতে জিম্বাবুয়ে কিছুটা প্রাপ্তি নিয়েই দেশে ফেরে নাকি বছরের শেষ ম্যাচেও উড়ন্ত জয় দিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠে বাংলাদেশ!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর