সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ব্যাটিংয়ে হতাশা গেল না

মেজবাহ্-উল-হক

ব্যাটিংয়ে হতাশা গেল না

প্রথম ম্যাচে ব্যর্থতার পরিচয় দিলেও গতকাল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এনামুলের ব্যাট থেকে উঠে আসে ৪৭ রানের ইনিংস - রোহেত রাজীব

তখনো ম্যাচ শুরু হয়নি। স্টেডিয়াম ফাঁকা। ড্রেসিং রুমের পাশের গ্যালারিতে উড়ছে লাল-সবুজ পতাকাটি। ওয়ার্মআপের জন্য ড্রেসিং রুম থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পতাকাটি বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের চোখে পড়ছিল। আগের সব ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে হেসে খেলে হারিয়ে এমনিতেই আÍবিশ্বাসের তুঙ্গে ছিলেন টাইগাররা। কিন্তু কাল মাঠে প্রবেশের মুহূর্তে প্রিয় পতাকাটি দেখে টাইগারদের আÍবিশ্বাসের পালে যেন বাড়তি হাওয়া লাগে। ওয়ার্মআপে মাশরাফিদের শরীরী ভাষায় সেকি আÍবিশ্বাস! কিন্তু এই আÍবিশ্বাসের দ্যূতিটুকু সীমাবদ্ধ থাকলো ওয়ার্মআপেই। ব্যাটিংয়ে দেখা গেল কাণ্ডজ্ঞানহীন এক দলকে।

২০ ওভারে ১১ ব্যাটসম্যানের রানের যোগফল ১২২। বাকি ১৩ রান এসেছে অতিরিক্ত থেকে। মোট রান ১৩৫। জিম্বাবুয়ের মতো দলের বিরুদ্ধে এমন ব্যাটিং রীতিমতো পীড়াদায়ক। সামনে এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপ। বড় দুইটি টি-২০ টুর্নামেন্টের আগে এমন ব্যাটিং টাইগারদের জন্য সতর্ক সংকেতও বটে!

গতকাল সর্বোচ্চ রান এসেছে এনামুল হক বিজয়ের কাছ থেকে। অনেক দিন পর জাতীয় দলের জার্সিতে খেলার সুযোগ পেয়ে আগের ম্যাচে দুর্ভাগ্যজনকভাবে শুরুতেই রান আউট হয়ে যান। গতকালও রান আউট। তবে তার আগেই খেলেছেন ৪৭ রানের ইনিংস। খেলেছেন ৫১ বল। বিজয়ের পুরো ইনিংসে ছক্কা তো নেই-ই, বাউন্ডারি মাত্র তিনটি। গতকাল ওয়ান ডাউনে খেলতে নেমে বিজয় একপ্রান্ত আগলে রেখে ছিলেন ঠিকই, কিন্তু ব্যাটিং দেখে মহাবিরক্ত দর্শকরা। তাই তো গ্যালারি থেকে বার বার ভেসে আসছিল ভুয়া...ভুয়া শব্দ!

ক্রিকেটের যেকোনো ফরম্যাটেই সেট ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব থাকে ম্যাচের ম্যাজাজ বুঝে ব্যাটিং করা। কিন্তু কাল টি-২০র ম্যাজাজ বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন বিজয়। তিনি যতটা না দলের জন্য খেলেছেন, তার চেয়ে বেশি চেষ্টা ছিল নিজের প্রতি। তাই উইকেটে সেট হওয়ার পরও বড় শটের প্রতি মনোযোগ দেননি। আর টি-২০তে বড় শট খেলতে না পারলে এমনিতেই ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ বেড়ে যায়।

টি-২০তে সাধারণত দেখা যায়, সেট ব্যাটসম্যান রান বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেন, আর নতুন ব্যাটসম্যান সেট হওয়ার জন্য কিছুটা সময় নেন। কিন্তু কাল মিরপুরের শেরেবাংলায় দেখা গেল উল্টো চিত্র। বিজয় রান বাড়ানোর দিকে মনোযোগ না দেওয়ায় সমস্যা সৃষ্টি হয়ে যায়। নতুন ব্যাটসম্যান উইকেটে গিয়েই বড় শট খেলতে বাধ্য হন, আর আউট হয়ে যান।

শুরুটা ভালোই করেছিলেন দুই ওপেনার। তামিম ইকবাল মাদজিভার করা দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে লং অন দিয়ে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে যেন ইঙ্গিত দেন দিনটি ব্যাটসম্যানদের! একই বোলারের পরের ওভারের প্রথম বলে আবারও স্কয়ার লেগ দিয়ে বিশাল ছক্কা। কিন্তু ওই ওভারের চতুর্থ বলে আবারও ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সীমানার কাছে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক চিগুম্বুরার হাতে ধরা পড়েন। ১৫ বলে ২১ রান করে সাজঘরে ফেরেন ড্যাসিং ওপেনার। দলীয় রান তখন ৩৪। তবে তামিমের আউটের সঙ্গে সঙ্গেই যে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ব্যাকফুটে চলে যাবেন, তা কে জানতো?

৩৫ রানের মাথায় চিসোরোর শিকার হয়ে ফিরে যান আরেক ওপেনার ইমরুল। মাত্র এক রানের ব্যবধানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে বিপদেই পড়ে যায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত আর জিম্বাবুয়ের বোলারদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে খেলতে পারেননি স্বাগতিক দলের ব্যাটসম্যানরা।

উদ্বোধনী জুটি আউটের পর রানের গতিতে যে ঝিমুনি ভাব চলে এসেছিল শেষ পর্যন্ত তা আর বাড়েনি। একপ্রান্তে চলছিল আউট হওয়ার প্রতিযোগিতা, আরেক প্রান্তে তখন বিজয় শো! মুশফিক, সাব্বির, মাহমুদুল­াহ, মাশরাফি উইকেটে থীতু হতে পারেননি কাল। আর বিজয় শেষ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করেও স্ট্রাইক রেটটা ১০০ পার করতে পারেননি। টাইগারদের কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ের কারণেই স্কোরটা আটকে যায় ১৩৫-এ। ১৩৬ রানের টার্গেট তো টি-২০তে মোটেও লড়াকু স্কোর নয়! বাংলাদেশ এই জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে বোলারদের ক্যারিশমায় জয়ের ধারা অক্ষুণœ রাখলেও ব্যাটিংয়ে আশানুরূপ স্কোর করতে পারেনি কোনো ম্যাচেই। তাই শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং নিয়ে হতাশা থেকেই গেল। শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং বিপর্যয়ে ৩ উইকেটে হেরে যেতে হয় বাংলাদেশকে।

 

বাংলাদেশ ইনিংস : ২০ ওভারে ১৩৫/৯ (এনামুল ৪৭, তামিম ২১, পানিয়াঙ্গারা ৩/৩০, ক্রেমার ২/২১)

জিম্বাবুয়ে ইনিংস : ১৯.৫ ওভারে ১৩৬/৭ (ওয়ালার ৪০, জঙ্গু ৩৪, মাদজিভা ২৮, আল-আমিন ৩/২০)

ফল : জিম্বাবুয়ে ৩ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ : মাদজিভা, ম্যান অব দ্য সিরিজ : ওয়ালার

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর