মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

এ যেন অঘোষিত কারফিউ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এ যেন অঘোষিত কারফিউ

ম্যাচ ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। দোকান বন্ধ, টিকিট ও অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ছাড়া কাউকে স্টেডিয়াম এলাকায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না পুলিশ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে কম আন্তর্জাতিক আসর হয়নি। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, অ্যাথলেটিকস, কুস্তি, ভলিবল, হ্যান্ডবল অনেক খেলা হয়েছে। তিনবার সাফ গেমস এমনকি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান স্বার্থকভাবে শেষ হয়েছে। প্রতিটি আসরেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু আজ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব ফুটবলকে ঘিরে যে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে তা সত্যিই চমকে দেওয়ার মতো। বিকাল সাড়ে পাঁচটায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলবে স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে। ক্রিকেটের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন না হলেও ফুটবলেও অস্ট্রেলিয়া এখন অনেক দূর এগিয়ে গেছে। চারবার বিশ্বকাপ চ‚ড়ান্ত পর্বে খেলা ছাড়াও বর্তমানে তারা এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়েও মজবুত অবস্থানে আছে। সেপ্টেম্বরে পার্থে হোম ম্যাচে সকারুরা ৫-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশকে। সুতরাং ম্যাচের ফলাফল কী হতে পারে তা আগাম ধারণা করা যায়। ফুটবলেও ক্রিকেটের মতো অঘটন ঘটে। তারপরও বাংলাদেশ জয় পাবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তা অসম্ভবই বলা চলে। ড্রও সম্ভব নয়।

অস্ট্রেলিয়ার আগমনকে ঘিরে ক্রীড়াঙ্গনে যে হৈচৈ পড়ে গেছে তা অতীতে কোনো ফুটবল দলের বেলায় হয়নি। ২০১১ সালে ঢাকার মেসির নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা প্রীতিম্যাচ খেলেছে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে। মেসিকে দেখতে পুরো গ্যালারি ভরে গেলেও হৈচৈ পড়ে যায়নি। অস্ট্রেলিয়াকে ঘিরে আলোচনার মূল কারণ নিরাপত্তা। ফিফার আগেই শিডিউল ছিল ১৭ নভেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ হবে। কিন্তু অনিশ্চয়তা দেখা দেয় সেপ্টেম্বরে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল ঢাকা সফর স্থগিত করায়। দুদিন পরই অস্ট্রেলিয়া ফুটবল ফেডারেশনও বেঁকে বসে। তারা ফিফাকে লিখিতভাবে জানিয়ে দেয় নিরাপত্তার কারণে নভেম্বরে তাদের ঢাকায় ম্যাচ খেলা সম্ভব নয়। ফিফা অবশ্য বিষয়টি নিয়ে বাফুফের সঙ্গে কোনো আলোচনায় করেনি। অস্ট্রেলিয়া বরং গত মাসে নিজ থেকে জানিয়ে দেয় তারা ঢাকায় অ্যাওয়ে ম্যাচে অংশ নেবে এবং ১৪ নভেম্বর বিকালে ঢাকায় পৌঁছাবে।

 

এমন নিশ্চয়তা পাওয়ার পর ম্যাচকে ঘিরে কোনো সংশয় ছিল না। কিন্তু ফিফা আবার বাফুফেকে জানিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া ও ফিফা প্রতিনিধি ঢাকার নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করতে আসবে। তারা সন্তুষ্ট প্রকাশ করলে ম্যাচ হবে। নচেৎ বিকল্প ভেন্যুর চিন্তা করা হবে। ঢাকায় তারা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, প্র্যাকটিস ভেন্যু, হোটেল সবকিছু দেখে সবুজ সংকেত দেন। তারপরও অস্ট্রেলিয়া সিঙ্গাপুরে প্র্যাকটিস করে গতকাল রাতেই ঢাকা এসেছে। আজ ম্যাচ খেলেই রাতে দেশে ফিরে যাবে সকারুরা। নিরাপত্তা নিয়েই যেহেতু আপত্তি উঠেছিল, সে জন্যে কোনো কিছু ত্র“টি রাখতে চাচ্ছে না বাফুফে। আজ বিকালে ম্যাচ অথচ রবিবার সন্ধ্যা থেকে স্টেডিয়াম আঙিনায় সব দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি গেটে তালা ঝুলছে। নিরাপত্তারক্ষী ও অ্যাক্রিডেটশন কার্ড ঝুলানো সাংবাদিক ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। পুরো স্টেডিয়ামই পুলিশ দিয়ে ঘিরে রাখা হচ্ছে। একাধিক জায়গায় বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। কিছুক্ষণ পরপর র‌্যাবের গাড়ি টহল দিচ্ছে। নিরাপত্তাকে ঘিরে স্টেডিয়াম এলাকায় যে পরিবেশ তাতে মনে হচ্ছে এখানে অঘোষিত কারফিউ চলছে। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকেই গুলিস্তান ও দৈনিক বাংলা মোড়ে পথচারীদের দেহ তল্লাশি শুরু হয়। ওয়েষ্টিন হোটেল ও বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। খেলা চলাকালীন অবস্থায় প্রয়োজনে হেলিকপ্টারও চক্কর দিতে পারে।

সর্বশেষ খবর