বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নিরাপত্তার ছায়ায় উৎসব

ক্রীড়া প্রতিবেদক

নিরাপত্তার ছায়ায় উৎসব

গ্যালারিতে এভাবেই উৎসবে মেতেছিল অস্ট্রেলীয় দলের সমর্থকরা - বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঘড়ির কাঁটায় তখন ২টা। ব্যস্ত মতিঝিলে জ্যাম লোকে লোকারণ্যে। ১০ মিনিটের হাঁটা দূরত্বের বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জনজীবনের ব্যস্ততা নেই। দোকানপাট বন্ধ। নেই হৈ হট্টোগোল। সব যেন হারিয়ে গেছে! চারদিক ঘিরে রেখেছে নিরাপত্তাকর্মীরা। কাউকে ঢুকতেও দিচ্ছেন না তারা। হঠাৎ এমন নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা কেন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম কিছুই নয়, অস্ট্রেলিয়া ফুটবল দলকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতেই এমন ব্যবস্থা। এমন কঠোর, আঁটসাঁটো নিরাপত্তা ব্যবস্থা এই প্রথম নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে। ফাঁকফোকরহীন, নি-শ্ছিদ্র এই নিরাপত্তা ব্যারিয়ারে কাল উৎসবমুখর পরিবেশে হাজার বিশেক ফুটবলপ্রেমী উপস্থিত হয়েছিলেন প্রাণের খেলা উপভোগ করতে। উপভোগ করেছেন স্বাগতিক বাংলাদেশ ও বর্তমান এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার ফুটবল লড়াই। দেখেছেন মিল জেদিনাক, টিম কাহিলদের সঙ্গে মামুনুলদের ফুটবল শিল্প। দেখেছেন পাশ্চাত্য আর প্রাচ্যের ফুটবল কৌশলের লড়াই। ম্যাচটি ফুটবল হলেও দেশের ক্রিকেটের জন্য অনেক সুখকর সংবাদ বহন করেছে। নিরাপত্তার অজুহাতে হঠাৎ ঢাকা সফর স্থগিত করেছিল অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল। একই অজুহাতে অস্ট্রেলিয়ান ফুটবল দলও পিছুটান দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ফিফার কঠোর রীতিনীতির জন্য অনীহা সত্তে¡ও ঢাকায় এসে খেলতে হয়েছে এশিয়া চ্যাম্পিয়নদের। কাল টিম কাহিলরা মাঠে প্রবেশ করেন ভিআইপি নিরাপত্তা নিয়ে।

ম্যাচটিতে লড়াই হয়েছে কি না, এ নিয়ে কোনো আগ্রহ ছিল না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিফাত বিন তারেকের। বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা একটি দলের ফুটবলশৈলী দেখতেই ৩০০ টাকার ভিআইপি টিকিট ৫০০ টাকায় কিনেছেন, ‘ফল কি হবে, সেটা নিয়ে আমি ভাবিনি। টিভি পর্দায় দেখেছি সকারুদের (অস্ট্রেলিয়ান ফুটবল দলের নাম) খেলা। ব্রাজিল বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলেছে। এমন একটি দলের খেলা দেখার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। কষ্ট হলেও একটু বেশি দামেই টিকিট কিনলাম।’ চার স্তরের কঠোর নিরাপত্তা বলয় পার হয়ে খেলা দেখতে এসেও অসন্তুষ্ট নন ব্যবসায়ী জাহিদ আহমেদ, ‘অবশ্যই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া উচিত। আমরা হয়তো অভ্যস্ত নই এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থায় খেলা দেখতে। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে দেশের মান সš§ানের কথা বিবেচনা করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা না দেওয়ার কোনো কারণ ছিল না।’ ম্যাচটি অন্য ৮-১০ ম্যাচের মতোই ছিল দুই দলের কাছে। কিন্তু নিরাপত্তা, অস্ট্রেলিয়ার গড়িমসি মিলিয়ে ম্যাচটির গুরুত্ব বেড়েছে শতগুণ। ফুটবলপ্রেমীরা অধিক দামে টিকিট সংগ্রহ করতেও কার্পণ্য করেননি। ম্যাচটির টিকিটের স্বাভাবিক মূল্য ৫০, ১০০ ও ৩০০ টাকা। ৫০ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। ১০০ টাকার টিকিট স্থানভেদে ১৫০-২০০ টাকা এবং ৩০০ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে ৫০০ টাকায়। বঙ্গবন্ধু মাঠে খেলা দেখতে পারেন ২৪ হাজার ৭০০ জন দর্শক। ম্যাচটি উপলক্ষে টিকিট ছাড়া হয়েছে ২০ হাজারটি। প্রায় সব টিকিট বিক্রি হয়েছে বলে জানান বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ, ‘ম্যাচটি ঘিরে ব্যাপক উন্মাদনা ফুটবলপ্রেমীদের। আমি যতটুকু জানি সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।’

নিরাপত্তার জন্য কাল দুপুর আড়াইটায় গেট উন্মুক্ত করা হয়। দুই-তিন ধাপে তল্লাশির পর মাঠে ঢুকেছেন দর্শকরা। তল্লাশি নিয়ে অনেকে নাখোশ হলেও দিন শেষে সেটা মেনে নিয়েছেন দেশের কথা ভেবে, দেশের ফুটবলের কথা ভেবে। কাল ম্যাচটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখতে মাঠের ভিতরে ছিল ৭০০ পুলিশ। গ্যালারিতে ছিল সাদা পোশাকের নিরাপত্তাকর্মী। ভিআইপি গ্যালারিতে ছিল সোয়াত, র‌্যাবসহ অপরাপর নিরাপত্তাবাহিনী। পূর্ণ নিরাপত্তায় কাল খেলা দেখেন অস্ট্রেলিয়ান দর্শক। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোরাশ গেয়ে উৎসাহ জুগিয়েছেন প্রিয় ফুটবলারদের।

সর্বশেষ খবর