রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ব্যাটে তামিম বলে সাকিব

মেজবাহ্-উল-হক

ব্যাটে তামিম বলে সাকিব

সামনেই এশিয়া কাপ, তারপর টি-২০ বিশ্বকাপ। এবার প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ হতে যাচ্ছে টি-২০ ফরম্যাটে। বড় দুইটি টি-২০র আসরকে সামনে রেখে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে (বিপিএল) বলা হচ্ছিল প্রস্তুতি টুর্নামেন্ট। কিন্তু সেই প্রস্তুতি টুর্নামেন্টে কেমন হচ্ছে টাইগারদের প্রস্তুতি? পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত বিপিএলে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং -তিন বিভাগেই জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা।

ব্যাটে-বলে শীর্ষে দুই বন্ধু তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। চার ম্যাচে ১৫৪ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় জাতীয় দলের ড্যাসিং ওপেনার ও চিটাগং ভাইকিংসের অধিনায়ক তামিম রয়েছেন তালিকায় সবার ওপরে। বোলিং শীর্ষে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক চার ম্যাচে নিয়েছেন ১০ উইকেট। ফিল্ডিংয়ে সর্বোচ্চ ক্যাচ তালুবন্দী করেছেন মুশফিকুর রহিম। সিলেট সুপার স্টারসের দলপতি নিয়েছেন ৬টি ক্যাচ। আর অধিনায়ক হিসেবে অবশ্যই এ পর্যন্ত সবার উপরে থাকবেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের অধিনায়ক চার ম্যাচে তিন জয়ে বিপিএলের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে নিয়ে গেছেন তার দলকে। 

টি-২০ টুর্নামেন্টে সবচেয়ে আকর্ষণীয় সেক্টর হচ্ছে ব্যাটিং। দর্শকরা প্রথমত ছক্কা-চার দেখার জন্যই মাঠে যান, দ্বিতীয়ত তারা পছন্দের দলকে সমর্থন করেন। তবে বিপিএলের চলতি আসরে এখন পর্যন্ত দাপটের সঙ্গেই ব্যাটিং করেছেন তামিম ইকবাল। প্রথম দুই ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত তিনি একমাত্র ব্যাটসম্যান যিনি দুইটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। সর্বোচ্চ ৮টি ছক্কার মালিকও তামিম। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক পাঁচ ব্যাটসম্যানের তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছেন রংপুর রাইডার্সের ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিথুন। ৫ ম্যাচে তিনি করেছেন ১২১ রান। এছাড়া দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছেন তিন বিদেশি ক্রিকেটার যথাক্রমে মারলন স্যামুয়েলস, কুমার সাঙ্গাকারা ও দিলশান মুনাবীরা। নিজের নামের প্রতি সুবিচার করে খেলতে পারছেন না মি. ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম। চার ম্যাচে করেছেন ৯৮ রান। তবে শুরুটা ভালোই করেছিলেন মুশি। প্রথম ম্যাচেই করেন অপরাজিত হাফ সেঞ্চুরি। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে উচ্ছ্বসিত মুশফিককে আর দেখা যায়নি। পরের তিন ম্যাচে তার রান- ০, ২৩, ২৩*।

 

এনামুল হক বিজয় চার ম্যাচে করেছেন ৭৯ রান। ইনজুরি থেকে ফেরার পর জাতীয় দলের তারকা ওপেনার সৌম্য সরকার ছন্দ খুঁজে পাচ্ছেন। ৫ ম্যাচে করেছেন মাত্র ৬৭ রান। ব্যাটিংয়ে খুব ভালো করতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসানও। মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত সাব্বির রহমানও নিজের খোলস থেকে বের হয়ে আসতে পারছেন না। নাসির হোসেনও সুবিধা করতে পারছেন না। তবে একেবারে ব্যর্থ জাতীয় দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস। প্রথম তিন ম্যাচে রান না পাওয়ায় চতুর্থ ম্যাচে কুমিল্লার একাদশেই জায়গা হয়নি তার।

ব্যাটিংয়ে সুবিধা করতে না পারলেও বোলিংয়ে ঠিকই দুরন্ত সাকিব। রীতিমতো প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের কাছে ত্রাসে রূপান্তরিত হয়েছেন। সাকিবের বোলিংয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা। রাইডার্স যে তিনটি জয় পেয়েছে বোলিংয়ে ক্যারিশমা দেখিয়ে দুই ম্যাচেই ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ পুরস্কার জিতেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

শুধু সাকিব কেন, জাতীয় দলের অন্য বোলাররাও দারুণ বোলিং করছেন। এখন পর্যন্ত শীর্ষ পাঁচ উইকেট শিকারির চারজনই বাংলাদেশের। ১০ উইকেট নিয়েছেন সাকিব, ৮টি করে উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছেন জাতীয় দলের তারকা বোলার কাটার মাস্টার মুস্তাজিুর রহমান ও মোহাম্মদ শহীদ। পেসার আল-আমিন তো হ্যাটট্রিক করে রীতিমতো হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন। এবারের আসরে প্রথম হ্যাটট্রিক। বিপিএলের তিন আসর মিলেই তো এটি দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক (প্রথমটি ছিল পাক পেসার মোহাম্মদ সামির)। তিন ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি। আরেক পেসার শফিউল ইসলামও শিকার করেছেন ৬ উইকেট। তবে ভালো করতে পারছেন না গতি তারকা তাসকিন আহমেদ।

‘নেতৃত্ব’ -কিভাবে দিতে হয় বিপিএলেও তার বড় উদাহরণ মাশরাফিই। কাগুজে-কলমে শক্তিমত্তা যাছাই করলে এই আসরের ছয় দলের মধ্যে সব নিচেই থাকার কথা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের নাম। এই দল নিয়েও চার ম্যাচে তিন জয় এনে দিয়েছেন দলকে। প্রথম ম্যাচ ঢাকার বিরুদ্ধে বড় ব্যবধানে পরাজয়ের পর ম্যাশ দলকে এমনভাবে উৎফুল্ল করেছেন যে পরের তিন ম্যাচেই টানা জয়। দ্বিতীয় ম্যাচে তো ভিক্টোরিয়ানসকে জিতিয়েছেন ‘ব্যাটসম্যান’ মাশরাফি! ক্রিকেট ক্যারিয়ারে বোলিংয়ের জন্য অনেকবারই ম্যাচসেরা হয়েছিলেন ম্যাশ, কিন্তু এবার টি-২০তে সেরা ক্রিকেটার হয়েছেন ব্যাটিংয়ের জন্য। তার অপরাজিত ৫৬ রানের ঝড়ো ইনিংসটা দর্শকের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে অনেক দিন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর