মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

প্রশ্নবিদ্ধ ম্যাচে বরিশালের জয়

মেজবাহ্-উল-হক, চট্টগ্রাম থেকে

প্রশ্নবিদ্ধ ম্যাচে বরিশালের জয়

তামিম ইকবালকে আউট করার পর আল-আমিনকে ঘিরে বরিশাল বুলসের ক্রিকেটারদের উচ্ছ্বাস -বাংলাদেশ প্রতিদিন

 

সন্ধ্যার আগেই অন্ধকার নেমে আসে সাগরিকায়! ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের চারপাশ। বন্দরনগরীতে বিপিএল ফেরায় দর্শকের ঢল নেমেছিল স্টেডিয়ামে। কিন্তু উচ্ছ্বাসিত হওয়ার পরিবর্তে নিরানন্দে ছিলেন! কারণ, বরিশাল বুলসের কাছে প্রিয় চিটাগাং ভাইকিংসের ৩৩ রানে হার। দর্শকে ঠাসা স্টেডিয়ামে কাল ভাইকিংসের হারকে পেছনে ফেলে আলোচনায় উঠে আসে ম্যাচের কিছু ‘সন্দেহজনক’ মুহূর্ত! ফলে ম্যাচটির ফল নিয়ে জম্ন নিয়েছে অনেক প্রশ্নের।

ভাইকিংসের ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। সহজ ক্যাচ মিস, সহজ রান আউট মিস -সবচেয়ে দৃষ্টিকটু ছিল ভাইকিংসের পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান কামরান আকমলের রান আউট। ভাইকিংসের শেষ সাত ওভারের বোলিংও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। ১৭১ রানের টার্গেটের শুরুতেই সাজঘরে ফিরেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। অপরাপর ব্যাটসম্যানরা সতর্কতার পরিবর্তে ব্যস্ত হয়ে পড়েন উইকেট বিলানোয়। দলীয় ১৯ রানে আকমল যেভাবে রান আউট হন, তাতে বিস্মিত হয়েছেন সবাই। আকমলের ওই শিশুসুলভ রান আউটের ব্যাখ্যায় তামিম বলেন, ‘স্কুল ছাত্রের মতো আউট হয়েছেন আকমল!’ শুধুই কি ব্যাটিং? ভাইকিংসের বোলিংও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বিশেষ করে জিম্বাবুয়ান এল্টন চিগুম্বুরা। ৬ ওভারের পাওয়ার প্লেতে বরিশালের স্কোর ছিল মাত্র ২২ রান। ১৩ ওভারে ছিল ৫ উইকেটে ৭২ রান। সেখানে ২০ ওভার শেষে স্কোর ৭ উইকেটে ১৭০। শেষ ৭ ওভারে সংগ্রহ ৯৮ রান! ওভার প্রতি সংগ্রহ ১৪ রান! যেন বিনা সংকেতে ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাস!

চিগুম্বুরার ওভার দুটি বিশ্লেষণ করলে প্রশ্ন উঠবেই। ২ ওভারে ৩৮ রান দেন চিগুম্বুরা। ম্যাচের নবম ওভারে ১৬ এবং ১৯ নম্বর ওভারে দেন ২২ রান। মোট রানের ৯টিই আবার অতিরিক্ত খাত থেকে। মজার বিষয়, চিগুম্বুরা ২ ওভারে মোট বল করেন ১৭টি। যাতে ৪টি ওয়াইড এবং নো একটি। চিগুম্বুরার বোলিং নিয়ে তামিম বলেন, ‘আমি যা চেয়েছি, হয়েছে তার উল্টো।’

চার ম্যাচের তিনটিতে হার; চাপে থেকেই ঘরের মাঠে খেলতে নামে প্রথম ম্যাচ। সতর্ক চিটাগাং টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নেমে পাওয়ার প্লেতে বুলসের ৩ উইকেট তুলে নেয়। ১২ রানে উপরের তিন ব্যাটসম্যানকে হারানোর পর মেহেদী মারুফকে নিয়ে ইনিংস মেরামত করেন দলপতি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তবে সেটাও উল্লেখ করার মতো ছিল না। রানের জন্য লড়াই করতে হচ্ছিল। এরপর ১৪ থেকে ২০ ওভার পর্যন্ত বানের জলের মতো রান আসতে থাকে। বিশেষ করে চিগুম্বুরা বোলিং আসতেই পাল্টে যায় চিত্রপট। চিগুম্বুরার প্রথম ওভারে আসে ১৬ (৬,৪,১,১,১,১,২)। ১৯ নম্বর ওভারটি রীতিমতো সন্দেহজনক! ১৯তম ওভারের প্রথম বলটি শর্ট পিচ! বিশাল ছক্কা হাঁকান বুলসের ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান কেভন কুপার। দ্বিতীয় বলটি ‘বিমার’। নো-বলে বাউন্ডারি, সেই সঙ্গে ফ্রি-হিট। পরের দুটি বল টানা ওয়াইড। ৫ম বলটি স্লোয়ার-ফুল টস। ষষ্ঠ বলটিও এক রকম। কিন্তু আম্পায়ার নো-বলের সংকেত দেননি। সপ্তম বলে কুপার ছক্কা হাঁকান। অষ্টম বলে এক এবং নবম বলে আউট হন মাহমুদুল্লাহ। এর আগেই ২২ রান যোগ হয় স্কোর বোর্ডে।

সবশেষ বিপিএলের আসরে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে ‘চিটাগাং কিংস ও ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স’ ম্যাচেও ফিক্সিং হয়েছিল। তখন মিডিয়ার কথা প্রথমে পাত্তা দেওয়া হয়নি। পরে প্রমাণিত হয়, ম্যাচটি পাতানো ছিল। পরবর্তীতে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। কালকের ‘চিটাগাং ভাইকিংস-বরিশাল বুলস’ ম্যাচটিকে নিয়েও বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে ম্যাচ পাতানো গন্ধ!

 

অবশেষে সিলেটের জয়

অবশেষে জয়ের দেখা পেল সিলেট সুপার স্টারস। বন্দরনগরীতে এসে ভাগ্য খুলে গেল মুশফিকদের। রবি বোপারার অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে ৪ উইকেটে হারায় তারা। বোপারা বল হাতে মাত্র ১৮ রানে ৪ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি খেলেন ৫০ রানের ইনিংস। ম্যাচসেরার পুরস্কারও উঠেছে এই ইংলিশ অলরাউন্ডারের হাতে। টানা চার ম্যাচ হারের পর কাল খেলতে নামে সিলেট। অবশেষে পঞ্চম ম্যাচে জয় পেয়ে হারের বন্ধ্যত্ব ঘুচান মুশফিকরা।

 

বরিশাল বুলস : ১৭০/৭, ২০ ওভার (মেহেদী মারুফ ২৮, মাহমুদুল্লাহ ৫১, আমির ২/২০)

চিটাগাং ভাইকিংস :  ১৩৭/১০, ১৯.৫ ওভার (নাঈম ৩৮, কুপার ৩/২৮)

ফল : বরিশাল ৩৩ রানে জয়ী

 

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস :  ১৬৪/৫, ২০ ওভার (ইমরুল ৪৮, আশার ৫৩*। বোপারা ৪/১৮)

সিলেট সুপার স্টারস :  ১৬৮/৬, ১৯.৪ ওভার (বোপারা ৫০, মুশফিক ৪৭। হায়দার ৪/২৮)

ফল : সিলেট ৪ উইকেটে জয়ী

সর্বশেষ খবর