বুধবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আপন ঘরে ‘ধূসর’ ভাইকিংস

মেজবাহ্-উল-হক, চট্টগ্রাম থেকে

আপন ঘরে ‘ধূসর’ ভাইকিংস

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ভাইকিংসের উইকেট পতনের পর আনন্দে মেতেছেন সাকিব-মিসবাহরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এখন যেন ধূলোর নগরী! শহরের জুবিলি রোড থেকে জিইসি মোড় হয়ে ফয়’স লেকের পাশে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আসার পথে ধূলোর স্ত‚প পড়ে ধূসর হয়ে যাওয়া ভবন-স্থাপনাগুলোকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন যৌবন হারিয়ে ফেলেছে নগরী! কোথাও চোখে পড়েনি সেলিব্রেটি টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের কোনো বিলবোর্ড কিংবা ফেস্টুন! শহরের মতো বিপিএলে মাঠের ক্রিকেটও যেন ধূসর হয়ে গেছে চট্টগ্রামে।

গ্যালারিতে কানায় কানায় ভর্তি দর্শকে। কিন্তু উচ্ছ্বাস নেই। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মতো ক্রিকেটপ্রেমীদের গর্জনে প্রকম্পিত হয় না সাগরিকার আকাশ-বাতাস। বুক ভরা আশা নিয়ে মাঠে আসে দর্শকরা কিন্তু প্রিয় দলের অসহায় আÍসমর্পণ দেখে নিরুত্তাপভাবে যে যার মতো ঘরে ফিরে যায়। আগের দিন বরিশাল বুলসের বিরুদ্ধে বড় ব্যবধানে পরাজয়ের পর গতকাল সাকিব আল হাসানের রংপুর রাইডার্সের কাছে যেন উড়ে গেল। ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হার। আপন ঘরেও ‘ধূসর’ ভাইকিংস।

এদিকে এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দলে ফেরায় যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে রংপুর রাইডার্স। সহজ জয়ে আবারও পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে গেল দলটি। ছয় ম্যাচে চার জয়ে আট পয়েন্ট এখন রংপুরের। সমান ম্যাচে পাঁচ হারে তালিকার শেষের অবস্থানটি আরও মজবুত হলো ভাইকিংসের।

জয় ছাড়াও এই ম্যাচ থেকে রাইডার্সের প্রাপ্তির খাতায় যোগ অনেক কিছু। হতাশায় ভুগতে থাকা দলের সেরা ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার ফিরলেন রানে। আগের পাঁচ ম্যাচে যেখানে ড্যাসিং ওপেনারের রানের যোগফল ছিল মাত্র ৬৭ (২০, ১৭, ১৮, ৭, ৫), সেখানে গতকাল ৫৮ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে রংপুরকে জিতিয়ে দিয়েছেন। ম্যাচসেরার পুরস্কারও উঠেছে তার হাতেই।

জহুরুল ইসলাম অমির জন্যও চট্টগ্রাম লাকি গ্রাউন্ড! রাইডার্সের এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান আগের তিন ম্যাচে দুই অঙ্কের কোটাতেই পৌঁছাতে পারেননি, কিন্তু কাল ওপেন করার সুযোগ পেয়ে খেললেন ৪৭ রানের দারুণ এক ইনিংস।

সাকিব আল হাসান দলে ফেরায় যেন বদলে গেছে পুরো দলই। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। চার ওভার বল করে মাত্র ১৬ রান দিয়ে নিয়েছেন দুই উইকেট। ব্যাটিংয়ের সুযোগ না পেলেও রাইডার্সের আফগান ক্রিকেটার মোহাম্মদ নবী বল হাতে দেখিয়েছেন চমক। তিনিও চার ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে নিয়েছেন প্রতিপক্ষের সবচেয়ে মূল্যবান উইকেটটি (তামিম ইকবাল)। এটি ছিল এবারের বিপিএলে নবীর প্রথম ম্যাচ। 

পাকিস্তানের ব্যাটসম্যান উমর আকমলেরও প্রথম ম্যাচ ছিল। মধ্যরাত পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে টি-২০ ম্যাচে অংশ নিয়ে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ঢাকায় পৌঁছেন তিনি। চিটাগাং ভাইকিংসের ফ্র্যাঞ্চাইজি গতকাল দুপুরে তাকে হেলিকপ্টারে করে সাগরিকায় নিয়ে আসেন। দলের বেহাল অবস্থার কথা চিন্তা করে নির্ঘুম উমর আকমলকে মাঠে নামানো হয়। কিন্তু ক্লান্তিকে দূরে ঠেলে দিয়ে ভাইকিংসকে হাসাতে পারেননি পাকিস্তানি তারকা। আউট হয়েছেন মাত্র এক রান করে।

একাদশে ছিলেন তার সহদর কামরান আকমলও। তিনিও ব্যর্থ। ১২ রানের বেশি করতে পারেননি। দুই ভাইয়ের ব্যর্থতার দিনে চিটাগং ১১১ রানের বেশি করতে পারেনি। সর্বোচ্চ ৩৬ রান এসেছে তামিমের ব্যাট থেকে। কিন্তু এ ম্যাচে রানের চেয়ে বেশি বল (৪৩) হজম করেছেন জাতীয় দলের তারকা এ ওপেনার। আর ব্যাটসম্যানদের অসহায়ত্বের দিনে সুবিধা করতে পারেননি ভাইকিংসের বোলাররাও। রংপুর রাইডার্সের ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে তারা প্রভাব বিস্তার করতে ব্যর্থ হয়েছেন। যে কারণে হারতে হয়েছে ৯ উইকেটে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, টানা হারের পরও সেমিফাইনালের চিন্তা বাদ দেননি ভাইকিংসের লঙ্কান কোচ মারভান আতাপাত্তু। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘পরের সব ম্যাচে ভালো করলে এখনো সেমিফাইনালে ওঠা সম্ভব। টি-২০ ফানি গেম! এখানে অনেক কিছুই সম্ভব। এখন দেখা যাক!’

সব ছাপিয়ে কালকের ম্যাচটি ছিল দুই বন্ধুর লড়াই! প্রথম ম্যাচের মতো এবারও সাকিবের কাছে হার মানলেন তামিম। আগের ম্যাচে তবু হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল, কিন্তু এ ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের কাছে পাত্তাই পেল না চিটাগাং ভাইকিংস।

 

চট্টগ্রাম ইনিংস : ১১১/৮, ২০ ওভার, রংপুর ইনিংস : ১১৩/১, ১৭ ওভার

ফল : রংপুর ৯ উইকেটে জয়ী

 

ঢাকা ইনিংস : ১৫৮/৫, ২০ ওভার, বরিশাল ইনিংস : ১৫৯/১, ১৮.৪ ওভার

ফল : বরিশাল ৯ উইকেটে জয়ী

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর