শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ মহিলা দল

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ মহিলা দল

শুধু ফাইনাল নয়। টি-২০ বিশ্বকাপ খেলাও নিশ্চিত হয়ে গেল। তাই গতকাল সেমিতে জয়ের পর বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস — ছবি : বিসিবি

সেমিফাইনালের প্রতিপক্ষ নির্ধারিত হতেই যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন জাহানারারা। দিন কয়েক আগে ঘরের মাটিতে জিম্বাবুয়েকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল। প্রতিপক্ষ সেই জিম্বাবুয়ে বলেই আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছিল জাহানারা বাহিনী। ব্যাংককের টার্ডথাই ক্রিকেট গ্রাউন্ডে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আত্মবিশ্বাসী ক্রিকেট খেলে ২০১৬ সালের টি-২০ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। কাল বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্রথম সেমিফাইনালে ৩১ রানে হারিয়েছে আফ্রিকান প্রতিনিধি জিম্বাবুয়েকে। আগামীকাল ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড। ফাইনালে উঠতে আইরিশ মহিলা দল ৯ উইকেটে হারায় প্রতিবেশী স্কটল্যান্ডকে। 

২০১৬ সালের ১১ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ভারতে অনুষ্ঠিত হবে টি-২০ বিশ্বকাপ। চূড়ান্ত পর্বে খেলবে ১০ দল। বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড ছাড়া বাকি দলগুলো-বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচই জাহানারা জিতেছেন সহজ ও বড় ব্যবধানে। স্বাগতিক থাইল্যান্ডকে ৭৩ রানে, স্কটল্যান্ডকে ৮ উইকেটে এবং সর্বশেষ ম্যাচে পাপুয়া নিউগিনিকে ৪১ রানে হারায় মহিলা দল। ম্যাচ তিনটির ব্যবধান বড় হলেও ভালো ব্যাটিং করেননি জাহানারারা। হাফ সেঞ্চুরি নেই কোনো ক্রিকেটারের। তবে জাহানারা, খাদিজাতুল কুবরা, রুমানা, ফাহিমারা বোলিং করেছেন দুর্দান্ত। ফিল্ডিংও হয়েছে চোখে পড়ার মতো। ব্যাটিংয়ের দুর্বলতা ঢেকে দেন ক্রিকেটাররা বোলিং ও দুর্দান্ত ফিল্ডিং করে। বিশ্বকাপ খেলতে জিততেই হতো জাহানারাদের। সেই টার্গেটে টস হেরে যায় বাংলাদেশ। হয়তো বাংলাদেশের ব্যাটিং দুর্বল ভাবনায় ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানায় জিম্বাবুয়ে। মাত্র ৯ রানের ভিত দেন দুই ওপেনার  আয়েশা রহমান ও শারমিন আক্তার। আয়েশার বিদায়ের পর মাত্র ৩ বলের ব্যবধানে সাজঘরে ফিরেন শায়লা শারমিন ও রুমানা আহমেদ। দুজনেই করেন শূন্য রান। ১০ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর জুটি বাধেন শারমিন আক্তার ও ফারজানা হক। দুজনে ৫১ রান যোগ করেন ১০.২ ওভারে। শারমিন ২২ রান করেন ৩৪ বলে। ফারজানা শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন দলীয় ১৯.১ ওভারে। দলের স্কোর তখন ৮৬ এবং তার ৪৩। ইনিংসটি খেলেন মাত্র ৪৩ বলে। যাতে বাউন্ডারি ছিল ৪টি। অপরাপর ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হলেও অলআউট হয়নি বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল। শারমিন ও ফারজানার দৃঢ়তায় ২০ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৮৯। টার্গেট মাত্র ৯০। তবে জাহানারাদের শক্তিশালী বোলিংয়ের বিপক্ষে টার্গেট একটু বেশিই। সেটা ম্যাচ শেষে প্রমাণিত। যদিও জিম্বাবুয়ের শুরুটা জাহানারাদের চেয়ে ভালো ছিল। ১০ রান তুলতে যেখানে ৩ উইকেট খুইয়েছিল বাংলাদেশ, সেখানে আফ্রিকান প্রতিনিধিদের প্রথম উইকেটের পতন ১৪ রানে। ওই একটি জায়গা ছাড়া আর কখনোই বাংলাদেশকে ডিঙাতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। বরং দুই লেগ স্পিনার ফারজানা ও ফাহিমা খাতুনের সাঁড়াশি আক্রমণে বেসামাল হয়ে পড়ে। দুই লেগ স্পিনার ৮ ওভারের স্পেলে রান দেন মাত্র ২০। উইকেট নেন ৬টি। ম্যাচ সেরা ফারজানা পুরো টুর্নামেন্টের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে কাল দুর্দান্ত বোলিং করেন। ৪ ওভারের স্পেলে মেডেন নেন ২টি এবং ৮ রান দিয়ে উইকেট নেন ৪টি। ফাহিমা ৪ ওভারে ২ উইকেট নেন ১২ রানের খরচে। উইকেট না পেলেও দুর্দান্ত বোলিং করে অফ স্পিনার খাদিজাতুল কুবরা ৪ ওভারে মাত্র ৮ রান দেন। স্পিনারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ১৯.১ ওভারে মাত্র ৫৮ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ের ইনিংস। 

২০১৪ সালে স্বাগতিক হওয়ার কারণে সুযোগ পেয়ে সরাসরি টি-২০ বিশ্বকাপে খেলেছিল বাংলাদেশ। এবার বাছাইপর্বের ব্যারিয়ার টপকে জায়গা করে নেয় টি-২০ বিশ্বকাপে খেলার। বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়ে যারপরনাই খুশি জাহানারা। এখন চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাছাইপর্ব শেষ করতে চান জাহানারা, ‘আমাদের টার্গেট ছিল বিশ্বকাপের চূড়ান্ত  পর্বে খেলা। সেটা পূরণ হয়েছে। এখন আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।’    

বাংলাদেশ : ৮৯/৫, ২০ ওভার ( আয়শা রহমান ৫, শারমিন আক্তার ২২, শায়লা শারমিন ০, রুমানা আহমেদ ০, ফারজানা হক ৪৩, রিতু মনি ৯*, জাহানারা ২*, অতি. ৮। মাঝভিসা ১/১২, এনকোমো ২/১২)।

জিম্বাবুয়ে : ৫৮/১০, ১৯.১ ওভার ( মুজাজি ১০, অতি. ১০। জাহানারা ২.১-১-১১-০, লতা মণ্ডল ১-০-৫-০, খাদিজাতুল কুবরা ৪-০-৮-০, রুমানা আহমেদ ৪-২-৮-৪, ফাহিমা খাতুন ৪-১-১২-২, শায়লা শারমিন ৪-০-১৩-২ )।

সর্বশেষ খবর