শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

জিতেই চলেছে বরিশাল

মেজবাহ্-উল-হক, চট্টগ্রাম থেকে

জিতেই চলেছে বরিশাল

আল-আমিন ৩/৩০

ভর দুপুরে জ্বলে ওঠে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ফ্লাড লাইট। ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় সাগরিকা। দৃষ্টিসীমা নেমে আসে কয়েকশ গজে। সূর্যের তো দেখাই নেই। ঘড়ির দিকে না তাকালে বোঝার উপায় ছিল না সকাল, দুপুর নাকি সন্ধ্যা!

শেষ বিকালে টপ টপ করে বৃষ্টিও পড়তে শুরু করে। ঘণ্টা খানেকের মতো বন্ধ থাকে ‘রংপুর রাইডার্স বনাম বরিশাল বুলস’ ম্যাচটি। হঠাত্ বৃষ্টির কারণে ‘সহজ’ ম্যাচটা বরিশালের জন্য ‘সহজতর’ হয়ে যায়। ১০৫

রানের টার্গেটে খেলতে নামা বরিশালের

লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৩ ওভারে ৭৫।

৪টা ২০ মিনিটে যখন বৃষ্টি শুরু হয় তখন বুলসের রান ছিল এক উইকেটে ১৯। খেলা হয়েছিল ৩.৩ ওভার। পুনরায় ৫টা ২৫মিনিটে যখন খেলা শুরু হয় তখন জয়ের জন্য বুলসের লক্ষ্য ছিল ৫৭ বলে ৫৬ রান। কাটা হয় সাত ওভার ও ৩০ রান। বৃষ্টির পর আর ম্যাচে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারেনি রংপুর। ৬ উইকেটে জিতে যায় বরিশাল।

ষষ্ঠ ম্যাচে পঞ্চম জয় এটি বুলসের। ‘বৃষ্টি-ভেজা’ এই জয়ে শীর্ষ চারও নিশ্চিত হয়ে যায়।

কাল ব্যাটিং ব্যর্থতার জন্যই হারতে হয় রাইডার্সকে। উত্তরাঞ্চলের দলটি ব্যাটিং ছিল রীতিমতো হাস্যকর! ইনিংসে সর্বোচ্চ জুটি ছিল ২৩ রানের। আর সর্বোচ্চ ২৪ রান এসেছে ওপেনার জহুরুল ইসলাম অমির ব্যাট থেকে। ৫ ব্যাটসম্যান আউট হয়েছে দুই অঙ্কের কোটায় পৌঁছার আগেই। আউট হওয়া প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের রানের পর্যায়ক্রম ছিল এমন- ০ সৌম্য, ১ সাকিব, ২ ১মিথুন। পাওয়ার প্লে-তে সাজঘরে ফিরতে হয়েছে রাইডার্সের তিন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে। তিন ব্যাটসম্যানই যেন নিজের উইকেট উপহার হিসেবে দিয়েছেন প্রতিপক্ষের বোলারদের।

স্ট্যাম্পের বাইরে শট বল পেয়েও সৌম্য সেটি তুলে দিলেন কাভারে দাঁড়ানো ফিল্ডার এমরিটসের হাতে। অথচ বলটি যাওয়ার কথা ছিল গ্যালারিতে। সৌম্যকে দিয়ে কাল ওভার শুরু করা পেসার আল-আমিন একই ওভারের শেষ বলে ফিরিয়ে দিলেন সাকিব আল হাসানকে। অবশ্য এখানে আল আমিনের কৃতিত্বের চেয়ে সাকিবের ব্যর্থতাই স্পষ্ট। অহেতুক ‘লফটেড শট’ খেলতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ তুলে দেন।

পাওয়ার প্লে-তে মাত্র একজন ফিল্ডারই রাখা হয়েছিল ৩০গজ বৃত্তের বাইরে। কিন্তু লং অফে দাঁড়ানো এমরিটের হাতেই ক্যাচ দিয়ে ড্রেসিং রুমের দিকে হাঁটতে থাকেন মোহাম্মদ মিথুন। ৫.৩ ওভারে মাত্র ২৩ রানে তিন উইকেট হারানোর পর আর মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি রংপুর রাইডার্সের ব্যাটিং লাইনআপ।

আগের দিন যে দলটি জয় পেল ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে কাল সেই রাইডার্স মাত্র ১০৪ রানে প্যাকেট! এমন ব্যাটিং দেখে হতাশ রংপুরের কোচ শেন জার্গেনসন। তিনি বলেন, ‘ব্যাটসম্যানরা আসলে শট নির্বাচন করতেই ভুল করেছেন। সে কারণে আমরা দ্রুত উইকেট হারিয়ে ফেলি। টি-২০ ম্যাচে অনেক সময় এমন হয়। তবে বিষয়টি অবশ্যই হতাশার।

বুলসের বোলার আল আমিনের জন্য কালকের দিনটি ছিল আনন্দের। তার করা দ্বিতীয় ওভারেই ম্যাচের লাগাম টেনে ধরেছিল বরিশাল। এক ওভারে প্রতিপক্ষের সেরা দুই ব্যাটসম্যান সৌম্য-সাকিবকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই ম্যাচসেরা হন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আল-আমিন বলেন, ‘দেশসেরা দুই ব্যাটসম্যানকে একই ওভারে আউট করা অনেক বড় কিছু। আজ উইকেট খুব ভালো ছিল বলেই আউট করতে পেরেছি। আমি লেগ সাইড দিয়ে বোলিং করার চেষ্টা করেছি।’ এবারের আসরে একমাত্র হ্যাটট্রিকম্যান আল আমিন কাল মোট তিন উইকেট নিয়েছেন। তার মোট উইকেট ১১টি। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় এখন উপরের দিকেই তার নাম। দলের জয়ে অবদান রাখার পাশাপাশি টি-২০তে দ্রুত উইকেট শিকারের কৌশল রপ্ত করছেন আল আমীন। জাতীয় দলের তারকা পেসার বলেন, ‘টি-২০তে প্রথম ৬ ওভারে যে ভালো বল করবে সে উইকেট পাবে। কারণ ওই সময় পাওয়ার প্লেতে ব্যাটসম্যানরা ভুল করে।’

রংপুর ইনিংস : ১০৪/৯, ২০ ওভার (জহিরুল ইসলাম ২৪, মিসবাহ ২২, আল-আমিন ৩/৩০।

বরিশাল ইনিংস : ৭৫/৪ ১২.৩ ওভার (রনি তালুকদার ২৩, আরাফাত সানি ২/১১।

ফল : ডি/এল মেথডে বরিশাল ৬ উইকেটে জয়ী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর