শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

তামিম সাকিবের লড়াই চট্টগ্রামেও

মেজবাহ্-উল-হক, চট্টগ্রাম থেকে

তামিম সাকিবের লড়াই চট্টগ্রামেও

ক্রিকেটারদের বিশাল ছবি দিয়ে বানানো বিলবোর্ড-ব্যানার-ফেস্টুন দেখে ঢাকায় সহজেই বোঝা যায় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের সরব উপস্থিতি। কিন্তু চট্টগ্রামে তেমনটা চোখে পড়ে না। অন্য দলের প্রচারণা তো নেই-ই, ঘরের দল চিটাগাং ভাইকিংসের প্রচারণাও দেখা যায়নি। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের আশপাশ ছাড়া বোঝার উপায় ছিল না যে, এই শহরে চলছে বিপিএলের মতো সেলিব্রেটি টি-২০ টুর্নামেন্ট! তবে স্টেডিয়ামে দর্শকের ঢল ছিল ঠিকই। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে যেখানে অনেক আসন ফাঁকা থাকত সেখানে চট্টগ্রামে কানায় কানায় পূর্ণ গ্যালারি। সাকিব, তামিম, আমির, আল-আমিন ও মুস্তাফিজদের পারফরম্যান্সকে পেছনে ফেলে আলোচনায় মাশরাফি তার তুখোড় দল পরিচালনার জন্য।

চট্টগ্রামে আবারও ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ হয়েছে বিপিএল! সেটাও কিনা চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম ম্যাচেই। বরিশাল বুলসের বিরুদ্ধে ম্যাচে চিটাগাং ভাইকিংসের জিম্বাবুইয়ান বোলার এল্টন চিগুম্বুরার ২২ রান দেওয়া ওভারটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। টি-২০-তে এক ওভারে ২২ রান হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু চিগুম্বুরা ৯টি বল করেছেন। আর বেশির ভাগ বলই ছিল বিমারের মতো। যেন তিনি ব্যাটসম্যানকে রান উপহার দেওয়ার চিন্তা করেই বোলিং করছিলেন। ব্যাটিংয়ের সময় পাকিস্তানি তারকা কামরান আকমলের রান আউটটি ছিল রীতিমতো দৃষ্টিকটু।

তবে চট্টগ্রামে প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়গুলো ছাপিয়ে বিপিএলকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে এভিন লুইসের সেঞ্চুরি, দুই বন্ধু সাকিব-তামিমের পারফরম্যান্সের লড়াই, স্থানীয় ক্রিকেটারদের ফর্মে ফেরা এবং মাঠে ‘যোদ্ধা’ ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজার সরব উপস্থিতি!

এখনো ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দলে খেলার সুযোগ হয়নি এভিন লুইসের। কিন্তু ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাকোর ব্যাটসম্যান এখনই বড় তারকা! ক্রিস গেইলকে পছন্দ করেন, তাই ব্যাটিংও করেন গেইলের মতোই। টি-২০-তে তার ব্যাপক নামডাক। বিপিএলেও তার নমুনা দেখালেন। বুলসের হয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে খেলতে নেমেই অপরাজিত এক সেঞ্চুরি করে বসেন। যা বিপিএলের চলতি আসরে প্রথম সেঞ্চুরি।

 

ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও সমানতালে চলছে দুই বন্ধু সাকিব ও তামিমের লড়াই। ৮ ম্যাচে ৪১.৪২ গড়ে ২৯০ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হওয়ার দৌড়ে সবার উপরে জাতীয় দলের ড্যাসিং ওপেনার তামিম ইকবালের নাম। আর বোলিংয়ে সেরা সাকিব আল হাসান। ছয় ম্যাচে তিনি নিয়েছেন ১৩ উইকেট।

বন্দরনগরীতে এসে জ্বল-জ্বল করছে স্থানীয় অন্য ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সও। বোলিংয়ে এখন পর্যন্ত সেরা পাঁচের চারজনই বাংলাদেশের বোলার। সাকিবের সমান ১৩ উইকেট শিকার করেছেন তরুণ পেসার আবু হায়দার রনিও। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের এই পেসারের এখনো জাতীয় দলে অভিষেক হয়নি, কিন্তু মাঠে তিনি বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে বোলিং করে অবাক করে দিচ্ছেন। এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপে এই তরুণ তুর্কি হতে পারেন টাইগারদের তুরুপের তাস।

পেসার আল-আমিন আবারও ফিরে পেয়েছেন তার ফর্ম। বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর অনেক ঝড়-ঝাপটা গেছে তার মাথার ওপর দিয়ে। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিশ্বকাপ থেকে ফেরত এসেছিলেন। সেই আল-আমিন বিপিএলে এসে টপাটপ উইকেট তুলে নিচ্ছেন। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিপিএলে প্রথম হ্যাটট্রিকটাও এখন তার দখলে। তবে চট্টগ্রামে এসে আল-আমিন যেন আরও উজ্জ্বল। নিয়মিত উইকেট নিচ্ছেন। এখন তার মোট উইকেট ১১টি। শফিউল-ই বা কম কিসে! তিনিও শিকার করেছেন ১০ উইকেট। এ ছাড়া জাতীয় দলের অন্য বোলারদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান ৯টি, স্পিনার আরাফাত সানি ৮টি, মোহাম্মদ শহীদ ৮টি এবং ৮ উইকেট নিয়েছেন আবুল হাসান রাজু।

বোলারদের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটসম্যানরাও রান পাচ্ছেন। দলকে জেতাতে না পারলেও নিয়মিত রান পাচ্ছেন ‘দ্য ডিপেন্ডেবল’ মুশফিকুর রহিম। ৩৬.২৫ গড়ে করেছেন ১৪৫ রান। এ ছাড়া মাহমুদুল্লাহ ১৪১ এবং ইমরুল কায়েস করেন ১২৭ রান। ইনজুরি থেকে ফেরার পর ছন্দ খুঁজে পাচ্ছিলেন না সৌম্য সরকার। কিন্তু বন্দরনগরীতে এসে রানে ফিরেছেন জাতীয় দলের এই তারকা ওপেনার । রংপুর রাইডার্সের হয়ে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে একটি অপরাজিত হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস খেলে ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতেছেন। ব্যর্থতার জালে আটকে যাওয়া লিটন কুমার দাসের ব্যাটও হেসেছে সাগরিকায়।

সর্বশেষ খবর