সোমবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

এক রানের মূল্য সাড়ে তিন লাখ!

জমল না গেইল-আফ্রিদির লড়াই

মেজবাহ্-উল-হক

এক রানের মূল্য সাড়ে তিন লাখ!

এক রানের মূল্য সাড়ে তিন লাখ টাকা! অদ্ভুত মনে হলেও ঘটনা সত্যি! গতকালকের ম্যাচে ক্রিস গেইলের প্রতিটি রানে বরিশাল বুলসকে খরচ করতে হয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা)! বিপিএলে সবচেয়ে বড় তারকা ক্যারিবীয় মারকুটে ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল। আগের দুই আসর মিলে ছয় ম্যাচ খেলেছিলেন। তার মধ্যে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনটি। অথচ দুই আসরে সেঞ্চুরিই ছিল মাত্র সাতটি। এবারের আসরেও সবচেয়ে বড় তারকা গেইল। প্রতি ম্যাচ খেলার জন্য ক্যারিবীয় মারকুটে ব্যাটসম্যানকে দিতে হবে ৩৫ হাজার মার্কিন ডলার বা ২৮ লাখ টাকা! কিন্তু বরিশাল বুলসের হয়ে প্রথম মাঠে নেমেই ব্যর্থ গেইল। আউট হয়েছেন মাত্র ৮ রান করে। তার প্রতিটি রানের জন্য বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিককে। তবে ছক্কার ‘রাজা’ গেইল তার ৮ রানের ইনিংসেও হাঁকিয়েছেন একটি বিশাল ছক্কা। বিপিএলে এটি তার ৩৯তম ছক্কা, বিপিএলে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। গেইলের ব্যর্থতার দিনে লজ্জায় লুটোপুটি খেয়েছে বরিশালের ব্যাটিং লাইন-আপ। চলতি আসরে সবচেয়ে নিচের সারির দল সিলেট সুপার স্টারসের কাছে মাত্র ৫৮ রানে অলআউট হয়েছে। বিপিএলে ইতিহাসে সবচেয়ে কম রানের স্কোর এটি! এর আগে সবচেয়ে ‘ছোট’ স্কোর ছিল ৬৭ রান। দ্বিতীয় আসরে চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে লজ্জাটি ছিল খুলনার। এবার বরিশাল নিজেরা লজ্জায় ডুবে খুলনাকে মুক্ত করে দিল (এবার খুলনার দল নেই)!

চলতি আসরে ‘বরিশাল বুলস বনাম সিলেট সুপার স্টারস’ ম্যাচটি সবচেয়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচ! পয়েন্টের বিচারে নয়, দুই দলে ছিলেন দুই মহাতারকা। টি-২০তে পাকিস্তানি তারকা শহিদ আফ্রিদির জনপ্রিয়তাও আকাশচুম্বী! দানবীয় ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়েও ভয়ঙ্কর ‘বুম বুম’। তাছাড়া বিপিএলের দুই হ্যাটট্রিকম্যান পেসার আল আমিন হোসেন ও মোহাম্মদ সামি খেলেছেন বুলসের হয়ে। আর তিন আসর মিলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মুশফিকুর রহিম খেলেছেন সুপার স্টারসের হয়ে। বুলসের ব্যাটিং লাইন-আপে ছিলেন চলতি আসরের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারকুটে ব্যাটসম্যান তরুণ তুর্কি এভিন লুইস। তবে ক্রিকেটপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলেন দুই দলের দুই মহা তারকা- ক্রিস গেইল ও শহিদ আফ্রিদি। জম্পেস এক লড়াই দেখার জন্য কাল মিরপুরে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দর্শকরাও চলে আসেন আগেই। কিন্তু লড়াই আর হলো কোথায়! শহিদ আফ্রিদি বোলিংয়ে আসার আগেই ড্রেসিং রুমের পথে গেইল! আর ব্যাটিং করার তো সুযোগই পেলেন না পাকিস্তানি তারকা। ৫৯ রানের ‘সহজতর’ টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেট হাতে রেখেই জিতে যায় সুপার স্টারস। তবে বোলিংয়ে ঠিকই আফ্রিদি তার তেজ দেখিয়েছেন। চার ওভার বোলিং করে মাত্র ৫ রান দিয়ে নিয়েছেন দুই উইকেট। ছিল একটি মেডেনও। বিপিএলের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে ‘কিপটে’ বোলিং ফিগার!

লড়াই দেখতে এসে দর্শকরা কাল গ্যালারিতে ‘বিরক্তিকর’ সময় পার করলেন! দুই তারকার মুখোমুখি দেখা তো হলোই না, উল্টো ম্যাচ শেষ হলো নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টা দুয়েক আগেই। ৪০ ওভারের খেলা শেষ হলো ২৭.২ ওভারেই। প্রথমে ব্যাট করে বরিশাল বুলস ১৬ ওভারে ৫৮ রানে অলআউট হয়ে যায়। আর জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে সিলেটকে খেলতে হয়েছে মাত্র ১১.২ ওভার। এই ২৭.২ ওভারের ব্যাটিংও ছিল রীতিমতো বিরক্তিকর! গেইলরা রান করেছে ওভার প্রতি ৩.৬২ গড়ে। আর সিলেটের গড় ছিল ৫.৪৭। দুই ইনিংস মিলে ছক্কা মাত্র দুটি। সেলিব্রেটি টি-২০ টুর্নামেন্টে এর চেয়েও হতাশাজনক ম্যাচ আর আছে কিনা!  দুর্ভাগ্যই বটে দর্শকদের। গাঁটের টাকা খরচ করে টিকিট কিনে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ দেখতে এসে তারা মহা বিরক্তিকর ম্যাচের সাক্ষী হয়ে রইলেন! গেইলের দলের বিরুদ্ধে আফ্রিদির দল বড় জয় পেলেও দুই তারকার আসল লড়াই শেষ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলো ‘কাগুজে-কলমেই’!

সর্বশেষ খবর