মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দাপুটে জয়ে শেষ চারে কুমিল্লা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

দাপুটে জয়ে শেষ চারে কুমিল্লা

৪ ওভারে ১৪ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নিয়ে সিলেটের ব্যাটিং লাইনে ধ্বস নামা রংপুরের আরাফাত সানি

ম্যাচ শেষে মাশরাফি বিন মর্তুজা যখন সংবাদ সন্মেলন কক্ষে আসছিলেন, তখন গ্যালারি থেকে শত শত ক্রিকেটপ্রেমী ‘মাশরাফি’, ‘মাশরাফি’ চিত্কার করে স্বাগত জানাচ্ছিলেন। প্রতি-উত্তরে হাত নাড়ছিলেন মাশরাফিও। তখনই একজন মিডিয়াকর্মী জানতে চাইলেন, এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটার মাশরাফি না সাকিব? তাত্ক্ষণিকভাবে উত্তর পাওয়া যায়নি। কিন্তু এটা সত্যি বড় কোনো তারকা না থাকলেও দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে বিপিএলের তৃতীয় আসরে সবার আগে সেমিফাইনাল তথা শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। কুমিল্লাকে অসাধারণ একটি দলে পরিণত করার কারিগর মাশরাফি। প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করতে কাল মাশরাফির কুমিল্লা ৭ উইকেটে হারিয়েছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বরিশাল বুলসকে। ৮ ম্যাচে ৬ জয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে কুমিল্লা এখন পয়েন্ট টেবিলের সবার উপরে। টানা দুই ম্যাচ হেরে একটু বিপাকে বরিশাল। তবে সেরা চারে জায়গা নিতে এখনো রেসে রয়েছে আসরের সর্ব নিম্ন রানের রেকর্ড করা মাহমুদুল্লাহ বাহিনী। আগের দিন সিলেট সুপার স্টারসের বিপক্ষে মাত্র ৫৮ রানে অলআউটের লজ্জায় ডুবেছিল বরিশাল।

শুরুতে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের হিসাবের খাতায় ছিল না কুমিল্লা। দলে নেই তারকা ক্রিকেটার। তাই বাজির দরও কম ছিল দলটিকে নিয়ে। কিন্তু আসর মাঠে গড়াতেই অসাধারণ এক দল হিসেবে প্রতিপক্ষকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে কুমিল্লা। অসাধারণ ক্রিকেট খেলার সতীর্থদের ধন্যবাদ দিচ্ছেন অধিনায়ক মাশরাফি। কিন্তু ক্রিকেটাররা বলছেন ভিক্টোরিয়ানসের ‘টিম কুমিল্লা’ হয়ে উঠার মূল কারিগর মাশরাফি স্বয়ং। পাকিস্তানকে ৫৬টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেওয়া শোয়েব মালিক সরাসরিই বলেই দিয়েছেন,‘কুমিল্লার ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের সব কৃতিত্ব মাশরাফির।’ শুধু কৃতিত্ব দিয়েই ক্ষান্ত হননি শোয়েব, বলেছেন, ‘মাশরাফির নেতৃত্বে খেলতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।’

গ্রুপ পর্বেও বরিশালকে হারিয়েছিল কুমিল্লা। শ্রীলঙ্কান পেসার নুয়ান কুলাসেকেরার (৩-০-৮-৩) বিধ্বংসী বোলিংয়ে ৮ উইকেট জিতেছিল ভিক্টোরিয়ানস। ওই ম্যাচে তারকা ক্রিকেটার না থাকলেও কাল গেইলের প্রতিপক্ষ হিসেবে কাল খেলেন পাকিস্তানের দুই ক্রিকেটার আহমেদ শেহজাদ ও শোয়েব মালিক। আগের ম্যাচের ধারাবাহিকতায় কালও ব্যর্থ গেইল। ম্যাচ প্রতি ৩৫ হাজার ডলারে খেলতে আসা ক্যারিবীয় ‘ক্রিকেট দানব’ কালও করেন মাত্র ৮ রান। আসরের সর্বনিম্ন ৫৮ রানে আউটের ম্যাচেও ৮ রান করেছিলেন গেইল। ওই ম্যাচে মেরেছিলেন একটি ছক্কা। কাল হাঁকান একটি বাউন্ডারি। গেইলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যর্থ শোয়েবও। ব্যক্তিগত ৬ রানে সাজঘরে ফিরেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক। তবে আলোয় আলোকিত ছিলেন শেহজাদ। কুমিল্লাকে জেতাতে শেহজাদ খেলেন ৭৬ রানের অপরাজিত ইনিংস। ম্যাচ সেরা ৬৩ বলের ইনিংসটিতে ১০টি বাউন্ডারির সঙ্গে ছিল ১টি ওভার বাউন্ডারিও। ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ২০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন বাঁ হাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার আশার জাইদি। দু পাকিস্তানির অবিচ্ছিন্ন ৫৮ রানের জুটি ১০৬ রানের সহজ টার্গেট পেরুতে সহায়তা করে।

২৪ ঘণ্টা আগে সিলেট সুপার স্টারসের বিধ্বংসী বোলিংয়ে মাত্র ৫৮ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল বরিশাল। যা বিপিএলের ইতিহাসে সবনিম্ন স্কোর।  লজ্জার সেই ইনিংসের লজ্জা সামলানোর আগে কাল মিরপুরে ফের ধাক্কা খেলেন মাহমুদুল্লাহরা। এবারের আসরের সবচেয়ে বড় ‘চমক’ আবু হায়দার রনি, আশার জাইদির সাঁড়াশি আক্রমণে ২০ ওভারের বরিশালের সংগ্রহ মাত্র ১০৫ রান। রনি ৪ ওভারের স্পেলে রান দেন ২৬, উইকেট নেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ’র। জাইদি ৪ ওভারে ১২ রানে ২ উইকেট নিলেও ‘ডট’ বল করেন ১৩টি।

এক পেশে লড়াইয়ে জিতে সবার উপরে জায়গা নিয়েছে মাশরাফির কুমিল্লা। এখন টার্গেট এক ‘নম্বর’ স্থান নেওয়ার। মাশরাফির নেতৃত্বে যে রকম ক্রিকেট খেলছে কুমিল্লা, তাতে এক ‘নম্বর’ হয়ে গ্রুপ পর্ব শেষ করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সেজন্য ‘টিম  কুমিল্লা’ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত দেশের এই মুহূর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটার মাশরাফি।

 

 

বরিশাল ইনিংস : ১০৫/৬, ২০ ওভার,  কুমিল্লা ইনিংস : ১০৬/৩, ১৭.৩ ওভার

ফল : কুমিল্লা ৭ উইকেটে জয়ী

সিলেট ইনিংস : ৫৯/১০, ১১.৫ ওভার, রংপুর ইনিংস : ৬০/২, ৯.৫ ওভার

ফল : রংপুর ৮ উইকেটে জয়ী

সর্বশেষ খবর