শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সবার ওপরে ভিক্টোরিয়ানস

মৈজবাহ্-উল-হক

সবার ওপরে ভিক্টোরিয়ানস

শ্রীলঙ্কার মাটিতে স্বাগতিকদের হারিয়ে ২০১২ সালে টি-২০ বিশ্বকাপ জয়ের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারদের উম্মত্ত উদযাপন সম্পর্কে এক সাক্ষাৎকারে ক্রিস গেইল বলেছিলেন, ‘ক্যারিবীয়ানরা উৎসবমুখর জাতি। সুখের ছোট ঘটনাতেও আমরা বড় উৎসব করি। আনন্দই আমাদের প্রাণশক্তির আধার।’ 

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে গতকাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের ক্যারিবীয়ান অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল খেলার মধ্যে নানা রকম শারীরিক অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে আনন্দ প্রকাশ করে যেন গেইলের কথারই পুনরাবৃত্তি ঘটালেন। ভিক্টোরিয়ানস তারকা শুধু একা নাচেননি, নাচিয়েছেন তার সতীর্থদের। নেচেছে স্টেডিয়ামে আসা দর্শকরাও। 

সিলেটের ব্যাটিংয়ের সময় পাওয়ার প্লে-র শেষ ওভারে মুশফিক কাভারে ঠেলে দিয়ে রান নেবেন কি নেবেন না ভাবছিলেন, এদিকে অন্যপ্রান্ত থেকে রবি বোপারা দৌড় শুরু করে দেন। দুই ব্যাটসম্যান এক প্রান্তে, আর অন্য প্রান্তে বল ধরে উইকেট ভেঙে দেওয়ার আগেই নৃত্য শুরু করে দেন রাসেল। ক্যারিবীয় তারকাকে অনুসরণ করে অন্যরাও নাচতে থাকে উইকেটকে কেন্দ্রে রেখে। গ্যালারিতেও তখন আনন্দের ফোয়ারা।

এরপর রাসেল যে পাশেই ফিল্ডিং করেছেন কাছের গ্যালারিতে ‘রাসেল’ ‘রাসেল’ স্লোগান উঠেছে! ক্যারিবীয়ান তারকাও কোমর দুলিয়ে দর্শক অভিনন্দনের জবাব দিয়েছেন। গতকাল বল হাতে চমক দেখিয়েছেন রাসেল। ২.৫ ওভার বোলিং করে মাত্র ৯ রান দিয়ে নিয়েছেন দুই উইকেট।

তবে গতকাল সিলেট ম্যাচ  থেকে ছিটকে পড়েছিল রাসেলের করা ওই রান আউটের পরই। রবি বোপারা সাজঘরে ফেরার পর যেন বালির বাঁধের মতো ভেঙে পড়ে মুশফিকদের ব্যাটিং লাইন-আপ। ৩৩ থেকে ৩৭, এই ৪ রানের মধ্যে চার উইকেট হারায় সিলেট। কুমিল্লার দেওয়া ১৫১ রানের টার্গেটে পৌঁছা তো দূরের কথা, ৫০ রানে সাত উইকেট হারানোর পর মনে হচ্ছিল বিপিএলের সর্বনিম্ন রানের লজ্জায় ডুবতে যাচ্ছে দলটি।

 শেষ পর্যন্ত মুমিনুল হকের দৃঢ়তায় লজ্জার হাত থেকে রক্ষা পেলেও ৭৯ রানেই গুটিয়ে যায় সুপার স্টারসের ব্যাটিং লাইন-আপ। ৭১ রানের বড় পরাজয়। সেটাই বা কম লজ্জার নাকি! আর এই লজ্জা দিয়েই বিপিএলের তৃতীয় আসর থেকে বিদায় ঘণ্টা বেজে গেল সিলেটের।

মাশরাফি বিন মতুর্জা যেন সত্যিই এক ‘ক্রিকেট ম্যাজিশিয়ান’। বোলার মাশরাফি বোলিং না করেও দলকে জিতিয়ে দিচ্ছেন, আর তিনি না থাকলে হেরে যাচ্ছে কুমিল্লা। এখনো মাঠে নামার মতো পুরোপুরি ফিট নন ভিক্টোরিয়ানসের অধিনায়ক। ফিজিও বলে দিয়েছেন তিনি বোলিং করতে পারবেন না। কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজির অনুরোধ তারা মাঠে শুধু অধিনায়ক মাশরাফিকে চান। আর শুধু অধিনায়ক মাশরাফি মাঠে নেমেই তার দলকে পৌঁছে দিচ্ছেন জয়ের বন্দরে।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসে ইনজুরির ছড়াছড়ি। মাশরাফি ছাড়াও গতকাল ইনজুরি নিয়েই খেলেছেন লঙ্কান বোলার নুয়ান কুলাসেকারা ও অলোক কাপালি। জাতীয় দলের তরুণ পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি এবং পাকিস্তানি অলরাউন্ডার শোয়েব মালিক তো খেলতেই পারেননি। এমন এক দল নিয়েও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস সিলেটকে ছিটকে দিয়েছে। সাফল্যের  পেছনে রহস্য একটাই ‘মটিভেটর মাশরাফি’।

এদিকে দলে তারকা ক্রিকেটারদের নিয়েও ব্যর্থ সিলেট সুপার স্টারস। ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে গেলে দৃষ্টিগোচর হয়, দেনা-পাওনা নিয়ে ফ্রেঞ্চাইজি মালিকের সঙ্গে ক্রিকেটারদের সম্পর্কের দূরত্বের বিষয়টি। এবার বিসিবির তর্জন-গর্জনের পরও ক্রিকেটারদের পাওয়া নিয়ে ঝামেলা করছে সুপার স্টারসের মালিক। গতকাল ম্যাচ শেষে অধিনায়ক আফ্রিদি সে ইঙ্গিতই দিয়েছেন। আগে মুশফিকের সঙ্গেও এ নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকের। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৫০ শতাংশ পাওনা না দেওয়ায় বিসিবি-কে বিষয়টি অবহিত করেছিলেন মুশফিক, যে কারণে তার ওপর ক্ষেপে গিয়ে নেতৃত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল বলে গুঞ্জন আছে।

স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় ‘দেনা-পাওনা’ নিয়ে কেউ সরাসরি কথা না বললেও সিলেটের ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষা থেকেই অনেক কিছু আন্দাজ করা যায়। খেলোয়াড়রা দলের জন্য নয়, যতটুকু পারফর্ম করছেন তা যেন কেবল নিজের জন্য। ক্রিকেটারদের মানসিকভাবে অশান্তিতে রেখে কি আর তাদের কাছ থেকে সেরা পারফরম্যান্স আশা করা যায়!

এদিক দিয়ে ব্যতিক্রম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। নির্ধারিত সময়ের আগেই পাওনা পরিশোধ। খেলোয়াড়দের ৭৫ শতাংশ টাকা দেওয়ার  শেষ দিন ছিল গতকাল। এ সম্পর্কে মাশরাফি বলেন, ‘আমাদের বিদেশি ক্রিকেটারদের শতভাগ টাকা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় ক্রিকেটারদের ৭৫ শতাংশ পরিশোধ। ম্যাচের আগের রাতেই সবাইকে চেক দেওয়া হয়েছে।’

বিপিএলের আগের দুই আসরের মতো যদিও পাওনা নিয়ে এবার ঝুঁকি থাকছে না ক্রিকেটারদের। ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকরা না দিলেও খেলোয়াড়দের টাকা পরিশোধ করে দেবে বিসিবি, ফ্র্যাঞ্চাইজিদের জামানতের টাকা থেকে। তারপরেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা পেলে মাঠে বাড়তি আÍবিশ্বাস পান ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটারদের এই ‘বাড়তি আÍবিশ্বাস’কে পুঁজি করেই তো সাদামাটা দল নিয়েও সবার ওপরে উঠে গেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস।

 

কুমিল্লা ইনিংস : ১৫০/৪, ২০ ওভার (শেহজাদ ৪২, অলক কাপালি ৩২, জাইদি ৩১, শহিদ ১/১৮, আফ্রিদি ১/২০)

 সিলেট ইনিংস : ৭৯/১০, ১৩.৫ ওভার (জেকব ২১, মুমিনুল ১৫, শুভাগত হোম ৩/৮, জাইদি ২/৪ )

ফল : কুমিল্লা ৭১ রানে জয়ী

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর