শিরোনাম
রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দুই তারকার লড়াইয়ে মাশরাফির জয়

আসিফ ইকবাল

দুই তারকার লড়াইয়ে মাশরাফির জয়

বোলিংয়ে দারুণ পারফরম্যান্স প্রদর্শন করছেন আবু হায়দার রনি। গতকাল রংপুরের উইকেট পতনের পর বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতেছেন এ তরুণ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে সবাইকে অবাক করে ওয়ান ডাউনে ব্যাটিং করেছিলেন ইমরান খান। ফাইনালে ৭২ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেছিলেন পাকিস্তানের লিজেন্ড ক্রিকেটার। ইমরানের ওই ইনিংস বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছিল পাকিস্তানকে। ২৩ বছর পর ইমরানের দেখানো পথে হাঁটেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। বিপিএলের ফাইনালে ওঠার প্রথম লড়াইয়ে কাল ওয়ান ডাউনে ব্যাটিং করেন মাশরাফি। যদিও ব্যাট হাতে জ্বলে উঠেননি। কিন্তু দক্ষ নেতৃত্ব ও দুর্দান্ত বোলিং করে ফাইনালে নিয়ে যান কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে। মাশরাফির নেতৃত্বে কৃমিল্লা কাল দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে ৭২ রানে হারিয়েছে সাকিব আল হাসানের রংপুর রাইডার্সকে। মাশরাফির অসাধারণ দল পরিচালনার ম্যাচে আরও অসাধারণ ও অনন্য ছিলেন আসরের সবচেয়ে বড় চমক আবু হায়দার রনি, আসহার জাইদি ও ইমরুল কায়েশ। রনি-জাইদি-ইমরুল ত্রয়ীর সাঁড়াশি আক্রমণে কাল নিজের তৃতীয় বিবাহবার্ষিকীতে বেশ বড়সড় ধাক্কাই খেলেন সাকিব। অবশ্য হেরেও ফাইনালের স্বপ্ন টিকে রয়েছে রংপুরের।

রাতের আকাশ পুরোটাই কুয়াশায় ঢাকা। এমন আবহাওয়ায় বোলারদের সুবিধার কথা ভেবে টস জিতে ফিল্ডিং নেন সাকিব। কিন্তু অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন থিসারা পেরেরা, মোহাম্মদ নবী, স্যামী, সাকলাইন সজীবরা। রংপুরের সব আক্রমণকে ভোতা বানিয়ে ইমরুল ও লিটন দাস ১১ ওভারে ৭৯ রান তুলে শক্ত ভিত দেন কুমিল্লাকে। ওপেনারদের গড়া ভিতের উপর দাঁড়িয়ে ২০ ওভারে কুমিল্লার সংগ্রহ ৭ উইকেটে ১৬৩। প্রথমবারের মতো পারফরম্যান্স করে লিটন ২৮ রান করেন ৩৭ বলে। ঝড়ো ব্যাটিং করে ইমরুল ম্যাচের সর্বোচ্চ ৬৭ রান করেন ৪৮ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায়। অবশ্য কুমিল্লাকে লড়াকু ইনিংস উপহার দেন পাকিস্তানি অলরাউন্ডার আসহার জাইদি। ৫ নম্বরে ব্যাট করে ১৫ বলে ২৬৬.৬৬ স্ট্রাইক রেটে ৪০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি। যার ১৯ রান আসে ইনিংসের শেষ ওভারে। মাশরাফি ওয়ান ডাউনে ১ রান করেন মাত্র ৫ বলে। আশার, ইমরুলদের ব্যাটিং তাণ্ডবে তাল-লয় হারিয়ে সাকিব ৪ ওভারের স্পেলে রান দেন ৪২। দল হারলেও সফল ছিলেন পেরেরা, ২৬ রানে ৫ উইকেট নিয়ে। এর আগে বরিশাল বুলসের কেভিন কুপার ও আল-আমিন ৫টি করে উইকেট নিয়েছিলেন।

টার্গেট ১৬৪। ওভার প্রতি স্ট্রাইক রেট ৮.১৫। ফর্মে থাকা রংপুরের জন্য পাহাড় ডিঙানোর মতো নয়! কিন্তু সাকিবদের জন্য কাজটা দুরূহ করে দেন আবু হায়দার রনি ও আশার জাইদি। মাশরাফি তার নেতৃত্বের দক্ষতার পরিচয় দেন দুই ‘ট্রাম্প কার্ড’ রনি ও জাইদিকে পরিবর্তিত বোলার হিসেবে ব্যবহার করে। রংপুরের দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও লেন্ডল সিমন্স দুরন্ত সূচনা করলেও পঞ্চম ওভারে রনি আসতেই পাল্টে যায় চিত্রপট। রনির দ্বিতীয় বলে সৌম্য ক্যাচ দিলেও তা ফেলে দেন আন্দে  রাসেল। ক্যাচ মিসের পরের বলে সৌম্যকে সাজঘরে ফেরত পাঠান রনি ডিপ স্কয়ার লেগে শুভাগতের অবিশ্বাস্য ক্যাচে। পরের বলে সিমন্সকে ইয়র্কারে বোল্ড করে হ্যাটট্রিকের আশা জাগিয়েও করতে পারেননি রনি। আসহার ষষ্ঠ ওভারে আসলেও প্রথম আঘাত হানেন ইনিংসের অষ্টম এবং নিজের দ্বিতীয় ওভারে। মোহাম্মদ মিথুন ও সাকিবকে বোল্ড করে সাজঘরে পাঠিয়ে হ্যাটট্রিকের আশা জাগান। কিন্তু রনির মতো আসহারের ইচ্ছাও পূরণ হয়নি। হ্যাটট্রিক না হলেও ৩ ওভার আগে রংপুর রাইডার্সের ইনিংস ৯১ রানে বেঁধে ফেলেন দুজনে বিধ্বংসী বোলিং করে। ৩ ওভারের স্পেলে রনি ৪ উইকেট নেন মাত্র ১৯ রানে এবং ম্যাচসেরা আসহার ৪ ওভারে ১১ রানের খরচে নেন ৪ উইকেট। অধিনায়ক মাশরাফি ছোট্ট রান আপে টানা বোলিং করে ৪ ওভারে রান দেন মাত্র ১৩।

বড় জয়ে কুমিল্লা ফাইনালে। ম্যাচ শেষে ডাগ আউটে সাকিব হাসিমুখে হ্যান্ডশেক করে অভিনন্দন জানান মাশরাফিকে। মাশরাফিও প্রতি-উত্তরে শুভেচ্ছা জানান তৃতীয় বিবাহবার্ষিকীর। এই সহমর্মিতা নিয়েই বিপিএল এখন শেষ পর‌্যায়ে।

কুমিল্লা ইনিংস : ১৬৩/৭, ২০ ওভার, রংপুর ইনিংস : ৯১/১০, ১৭ ওভার

ফল : কুমিল্লা ৭২ রানে জয়ী

বরিশাল ইনিংস : ১৩৫/৫, ২০ ওভার, ঢাকা ইনিংস : ১১৭/৮, ২০ ওভার

ফল : বরিশাল ১৮ রানে জয়ী

সর্বশেষ খবর