শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

জয় নিয়ে সাফে যাচ্ছে বাংলাদেশ

রাশেদুর রহমান

জয় নিয়ে সাফে যাচ্ছে বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রস্তুতি ম্যাচে নেপালের জালে বল জড়িয়েই রনির দৌড়। তারই গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

এ মাস বিজয়ের মাস। গৌরবদীপ্ত অতীতকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করার মাস। বাঙালির স্বাধীন জীবনে ডিসেম্বরের গুরুত্ব কতটা কেবল একজন গর্বিত বাঙালিই অনুধাবন করতে পারে। ডিসেম্বরের লাল-সবুজের আনন্দ মিছিলে যোগ হলো আরও একটা বিজয়ের উৎসব। নেপালের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতিম্যাচে মামুনুলদের (১-০) জয় ঝিমিয়ে পড়া ফুটবলে এনে দিল নতুন প্রাণ, নতুন প্রেরণা। সাফ ফুটবলকে সামনে রেখে এমন একটা জয়ের খুব প্রয়োজন ছিল! বহুদিন পর ফুটবলপ্রাণ ভক্তরা বাংলাদেশের বিজয় উদযাপন করল। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের হাজার কয়েক দর্শকের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল পুরো দেশ।

বল পায়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা। মাঝে মধ্যে দুর্দান্ত আক্রমণ। প্রতিপক্ষের ডিফেন্স লাইন ভেঙে বল নিয়ে ভিতরে প্রবেশ। কখনো হেমন্ত কখনো রনি। গতকাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে নেপালের বিপক্ষে প্রীতিম্যাচে সাফ ফুটবলের মহড়ায় মামুনুলরা নিজেদের স্বরূপ প্রকাশ করতে ছিলেন মরিয়া। দলগত পারফরম্যান্সের পাশাপাশি ছিল ব্যক্তিগত নৈপুণ্য প্রদর্শনের প্রাণান্তকর চেষ্টা। কারণ সাইড লাইনে দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষক হিসেবে কোচ মারুফুল হক শিষ্যদের মার্কিং করছিলেন। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য চূড়ান্ত দল ঘোষণা করতে হবে তাকে শিগগিরই।

টানা পরাজয়। এ বৃত্ত থেকে বের হওয়া যেন কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছিল মামুনুলদের জন্য। একের পর এক কোচের পরিবর্তনেও কোনো ফল হয়নি। ডাচ কোচ ক্রুইফকে ছেড়ে ইতালিয়ান লোপেজকে দিয়েও কোনো ফল হয়নি। কিরগিজস্তান, জর্ডান, অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজয়গুলো ক্রমশই বড় হতে লাগল। আর বাংলাদেশের ফুটবলভক্তদের সামনে নেমে এল আরও একটা অন্ধকার যুগ! অবশেষে দেশীয় কোচ মারুফুল হকের কাঁধে তুলে দেওয়া হয় গুরুভার। পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বাংলাদেশকে বের কর। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভালো কর। এ দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার পর মারুফুল তার প্রথম মিশনেই সফল হলেন। ম্যাচটা মূলত নিরীক্ষণের ছিল। শিষ্যদের যাচাই-বাছাই আর তাদের ফুটবলীয় দক্ষতাকে মাইক্রোস্কোপের নিচে নিয়ে আসারও। প্রথম একাদশের ছয়জনকে বদল করলেন কোচ। মোট ১৭ জনকে পরীক্ষা করলেন মাঠে। পাশাপাশি নিজের ট্যাকটিকসও দেখে নিলেন। প্রথমার্ধটা ছিল পুরোপুরিই আক্রমণাত্মক। তবে রক্ষণভাগও নিরাপদ রাখার চেষ্টা। যেমন পুরোদস্তুর মিডফিল্ডার মামুনুলকেও দেখা গেল ডিফেন্স লাইনে প্রতিপক্ষের সামনে বাঁধ দিতে। হেমন্তকে স্থান বদলে সেন্ট্রাল মিডফিল্ড থেকে নেওয়া হলো লেফট উইংয়ে। এটাও সাফ পরিকল্পনারই একটা বাস্তবায়ন। তবে অভিজ্ঞ এমিলির স্থানে শাখাওয়াত হোসেন রনি নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করলেন গতকাল। ম্যাচের ১৮ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে ইয়ামিন মুন্নার বাতাসে ভাসানো শট দুর্দান্ত এক হেডারে গোলে পরিণত করেন রনি। এ গোলই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে জয় এনে দিয়েছে। এর মাঝে হেমন্তরা যে কয়টা সুযোগ পেয়েছেন একটাও কাজে লাগেনি।

নেপাল এমন এক দল নিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল যাদের ছয়জনেরই আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হলো। তিনজন খেলেছেন মাত্র একটা করে ম্যাচ। এমন অনভিজ্ঞ এক দলের আক্রমণের মুখেও বাংলাদেশের মিডফিল্ডকে অসহায় দেখা গেল। মরিয়া নেপালের এলোমেলো আক্রমণগুলো শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলেও তারা বুঝিয়ে দিয়েছে মিডফিল্ড আর ডিফেন্সের ফাঁকফোঁকর গলে যে কেউই বাংলাদেশের ডেরায় হামলা চালাতে পারে অনায়াসে। রোহিত চাঁদের ৬১ ও ৮৪ মিনিটের দুর্দান্ত দুটি শট বাংলাদেশকে পরাজয়ের পথও দেখাতে পারতো! তাছাড়া প্রথমার্ধের উজ্জীবিত দলটাই দ্বিতীয়ার্ধে কেমন যেন গুটিয়ে নিল নিজেদের! দীর্ঘদিন পর এমন এক জয়ের পরও সাফের আগে এসব ভুলচুককে খাটো করে দেখা যায় না। অবশ্য কোচ মারুফুল হকও তো বলে গেলেন, শিষ্যদের পারফরম্যান্সে মোটেও সন্তুষ্ট নন তিনি। সাফের আগে কি এসব ভুলচুক দূর করতে পারবেন মামুনুলরা!

সর্বশেষ খবর