শিরোনাম
শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কুমিল্লার সাফল্যের কারিগর সালাউদ্দিন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

কুমিল্লার সাফল্যের কারিগর সালাউদ্দিন

স্ত্রীর ডেলিভারির তারিখ ছিল ১৫ ডিসেম্বর। সেদিন আবার বিপিএলের ফাইনাল। তাই স্ত্রীকে একটি দিন কষ্ট করতে অনুরোধ করেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। স্বামীর অনুরোধ ফেলতে পারেননি। কষ্ট করে দিন পার করে দেখেন প্রিয় স্বামীর মুকুটে সাফল্যের আরও একটি পাখা যুক্ত হতে। সালাউদ্দিন বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরিচিত মুখ। ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ কয়েকটি শিরোপা জিতেছেন কোচ হিসেবে। এবার কোচ হিসেবে জিতলেন দেশের সবচেয়ে মর্যাদার বিপিএলের শিরোপা। তার কোচিংয়েই বিপিএলে প্রথম খেলতে নেমে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। অনেকেই কুমিল্লার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মূল কুশীলব বলছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। কিন্তু মাশরাফির দৃষ্টিতে দলের সাফল্যের নেপথ্যের কারিগর কোচ সালাউদ্দিন।

প্রথম সন্তান পুত্র। অধীর অপেক্ষায় ছিলেন কন্যা সন্তানের আশায়। সন্তান জন্ম নেওয়ার আগ পর্যন্ত জানতেন কন্যা সন্তানের গর্বিত পিতা হতে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু সন্তান জন্ম নেওয়ার পর জানলেন কন্যা নয়, পুত্র সন্তানের বাবা হয়েছেন। তাতে একটুও কষ্ট পাননি। অবাক হয়েছেন। কারণ, কন্যা সন্তান ভেবে কাপড়-চোপড় কিনে নিয়ে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। স্ত্রীর পাশে থাকতে ফাইনাল শেষ করেই চলে যান। চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন এখন দুই পুত্র সন্তানের পিতা।

ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ছিলেন ডান হাতি পেসার। ইন সুইং ও আউট সুইং দুটোই করতে পারতেন। ব্যাটিংটা একেবারে মন্দ ছিল না। বিকেএসপিতে থাকাকালীন ভালো ফুটবলও খেলতেন। খেলা শেষে শুরু করেন ক্রিকেট ক্যারিয়ার। ২০০০-০১ মৌসুমে ভিক্টোরিয়া দিয়ে শুরু করেন কোচিং ক্যারিয়ার এবং প্রথম বছরেই স্বাদ পান শিরোপার। ঘরোয়া প্রিমিয়ার ক্রিকেটে চার মৌসুম কোচিং করান। দুবার চ্যাম্পিয়ন করান  ভিক্টোরিয়াকে চ্যাম্পিয়ন এবং সোনারগাঁও ক্রিকেটার্সকে রানার্স আপ। করপোরেট ক্রিকেটে শিরোপা উপহার দেন আরাফ অ্যাপালেসকে। জাতীয় দলে ছিলেন প্রায় তিন বছর। সহকারী কোচ ও ফিল্ডিং কোচও ছিলেন টাইগারদের। এবার কোচিং করান কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে।

কুমিল্লার দায়িত্ব নিয়েই ‘প্লেয়ার্স বাই চয়েজ’ প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থেকে দল সাজান। কিন্তু মনঃপূত হয়নি। তারপর অধিনায়ক মাশরাফি ও ম্যানেজার খালেদ মাসুদ পাইলটকে নিয়ে গুছিয়ে নেন দলকে। আসরে শুরু করেন আন্ডার ডগ হিসেবে। সময় পেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে দুর্ধর্ষ হয়ে উঠতে থাকে কুমিল্লা এবং চ্যাম্পিয়ন হয়েই আসর শেষ করে। কুমিল্লাকে চ্যাম্পিয়ন করার বিষয়ে সালাউদ্দিন বলেন, ‘দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে  নেই। ক্রিকেটার, ম্যানেজমেন্ট সবাই আমাকে সহায়তা করেছেন। বিশেষ করে মাশরাফি অসাধারণ। পুরো দলকে চাঙ্গা রাখতে যা যা করার সব করেছেন মাশরাফি। ম্যানেজার পাইলটও ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছেন।’ কাজ করার ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আমি ক্রিকেটারদের খুব ভালো করে জানি ও চিনি। তাদের উপর আস্থা ছিল আমার সব সময়। ইমরুলের কথা যেমন। প্রথম দুই ম্যাচে শূন্য। তারপরও আমার আস্থা ছিল। বাকিটাতো সবাই দেখেছেন। অলক কাপালিকে কেউ নিতে চায়নি। আমরা নিলাম। কাপালি ফাইনালে যা করলেন, তা এক কথায় অসাধারণ। সত্যি বলতে কী, আমার দল হয়তো শক্তিশালী ছিল না। কিন্তু দলটি প্রতিভাবানদের নিয়ে গড়া। তারা সবাই সাফল্য পেতে উদগ্রীব ছিলেন। এটাই কাজে লাগিয়েছি।’

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাফল্যের রূপকার মাশরাফি। তবে সালাউদ্দিন কিন্তু দেখিয়ে দিয়েছেন তার হাতেও রয়েছে পরশ পাথর। যার ছোঁয়ায় বদলে যেতে পারেন যে কেউ।

সর্বশেষ খবর